ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের ঘোড়াকান্দা এলাকায় পলাশের মোড় হইতে ৫৭০ মিটার রাস্তার পুনর্নির্মাণে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। এসব খানাকন্দে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। ৬ মাস মেয়াদে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও প্রায় বছর পেরিয়ে যাচ্ছে তবু কাজ শেষ হচ্ছেনা।
এটাকে ঠিকাদারির গাফিলতিই মনে করছেন এলাকাবাসী। কোভিড ১৯ প্রকল্পের ৮৬ লক্ষ ২ হাজার ৯৬৩ টাকা ব্যয়ে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি পুনঃনির্মান কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালের জুন মাসের শেষ দিকে কাজ শুরু করে ঠিকাদার। ২৩ সালের ডিসেম্ভরে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কাজ শেষ করতে না পারায় পরবর্তীতে ২ ধাপে মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা জানান তাদের দুর্ভোগের কথা। ভৈরব পৌর শহরের ৩ নং ওয়ার্ড ঘোড়াকান্দা এলাকায় বসবাস করছে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ। পলাশের মোড় হইতে জব্বার জূট মিল পর্যন্ত এ রাস্তাটি প্রায় এক বছর যাবত পুনঃনির্মান কাজ চলতে থাকায় যান বাহনসহ লোকজনের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত এক বছর যাবত পলাশের মোড় হইতে জব্বর জুট মিল পর্যন্ত মোট ৫৭০ মিটার রাস্তার পুনঃনির্মান কাজ চলছে। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাধারীর গাফিলতির কারণে ২ ধাপে মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারছেনা। রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বেড়েছে জলাবদ্ধতা। দূষিত পানিতে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। দীর্ঘদিন যাবত রাস্তায় নোংড়া পানি ও ময়লা আবর্জনা জমে থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি ছোট বড় দোকানপাট। নোংড়া পানিতে পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় মসজিদে মুসুল্লিদের নামাজে আসাও অনেকাংশে কমে গেছে অত্র এলাকায়। দুর্ভোগের কারণে এ এলাকার বিভিন্ন ভাড়া বাসা বাড়ি ছেড়ে দিয়ে ভাড়াটিয়ারাও অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এছাড়াও ওই এলাকায় জব্বার জূট মিল নামে রয়েছে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ রাস্তা দিয়ে মিলের মালামাল নেওয়াও সম্ভব হচ্ছেনা। রাস্তার দুর্ভোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলাচল করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। ঘোড়াকান্দা এলাকায় রয়েছে একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতেও ব্যাঘাত ঘটছে ওই এলাকার ক্ষুদে শিক্ষার্থীসহ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের। ভাড়াটিয়ারা চলে যাওয়ায় পরিত্যক্ত বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল গুনতে হচ্ছে মালিকদের। খানাকন্দের সৃষ্টি হওয়ায় কোন ধরনের যান বাহন চলতে পারছেনা এ রাস্তায় দিয়ে। এলাকাটি বাজার সংলগ্ন হওয়ায় ব্যবসায়ীরা মালামাল পরিবহণ করতে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
এলাকাবাসী মাঈনউদ্দিন, কবির মিয়া, রইছ মিয়াসহ অনেকেই জানান, আজ প্রায় এক বছর যাবত এ রাস্তার কাজ চলছে। তারা কিছুদিন কাজ করার পর আর কোন খবর থাকেনা। রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। এসব খানাখন্দে পানি জমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। এসব পানিতে বেড়েছ মশা মাছির উপদ্রব। মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে নানান ধরনের পানি বাহিত রোগ। গর্তগুলোতে প্রচুর ময়লা আবর্জনা আর দূষিত পানি জমেছে। ফলে আমরা দীর্ঘদিন যাবত আমাদের দোকানপাট খুলতে পারছিনা। দোকানপাট বন্ধ থাকায় আমাদের উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনোয়ার এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারীর পক্ষে অরুণ আল আজাদ বলেন কিছু কাজ করার পর পানি সরবরাহের পাইপ লাইন স্থাপনের কাজটি সংযুক্ত করে পৌরসভা। এছাড়াও আর্থিক সংকটসহ পাথরের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় কাজটি সম্পন্ন করতে বিলম্ব হয়। পৌরসভা থেকে বিল পেলেই বাকি কাজগুলো দ্রুত সময়ের মাঝেই শেষ করতে পারব।
পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন বেণু, সাংবাদিকদের” বলেন ঘোড়া কান্দার রাস্তাটি আগে আরো খারাপ ছিল। মানুষ চলাচল করতে পারতেন। রাস্তাটি পুনঃনির্মান কাজের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে যা চলমান রয়েছে। সমস্যা হলো ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব ড্রেন বাড়ি ঘরের সাথে সংযুক্ত। দেখা গেছে দিনের বেলা ড্রেনের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করে আসার পর রাতের বেলা পানিতে ভরে যায় গর্তগুলো। পরে পানি সরিয়ে আবার কাজ করতে গিয়ে সময় লাগছে। পূর্বের যে পানির লাইনটি ছিল সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুন করে পানির লাইনটি আবারো করতে গিয়ে কাজের বিলম্ব হচ্ছে। বাকি অংশের কাজটির ১ কোটি টাকার টেন্ডার হচ্ছে। একাজটিও শেষ হয়ে গেলে অত্র এলাকার মানুষের আর কোন কষ্ট হবেনা।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply