
মৌলভীবাজার ও লালমনিরহাট সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মুখে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলে- লেঃ কর্নেল খন্দকার ফরিদুল আকবর এর সভাপতিত্বে, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর প্রধান সমন্বয় মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জিয়া আইনজীবী ফোরাম এর সহ-সভাপতি এডভোকেট এ এম এন আবেদ রাজা, জাতীয় গণতান্ত্রিক ঐক্য পার্টির সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র আল রাশেদ প্রধান, জঙ্গু নরমাল বিশ্ববিদ্যালয় চিন এর ভিজিটিং প্রফেসর ড আবু মূসা মোঃ আরিফ বিল্লাহ, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অবঃ জিয়াউল হাসান, গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, লেঃ কর্নেল অবঃ হাসিনুর রহমান, ইসলামি বুদ্ধিজীবী ফ্রন্ট এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আব্দুল হান্নান আল হাদী, মুসলিমলীগ এর সাংগঠনিক সম্পাদক খানে আসাদ, মেজর শাহিন আলম, নুরুল হুদা ডিউক, আরজেএফ চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম সহ লালমনিরহাট ও মৌলভীবাজার থেকে আগত স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এসময় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংবাদিক নেতা তায়জুল ইসলাম।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যা যেন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে, যে কোনো অজুহাতে সীমান্তে ওপার থেকে আসা গুলি কেড়ে নিতে পারে সীমান্ত এলাকার মানুষের প্রাণ। গত ০৪ ডিসেম্বর দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় কৃষিজমিতে কাজ করতে যান শুকুরাম উরাং। বেলা দেড়টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি দৌড়ে কিছুদূর এগিয়ে এসে মাটিতে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বিএসএফের গুলিতেই মৃত্যু হয় শুকুরাম উরাং (২৫) নামক বাংলাদেশী যুবকের।
এছাড়াও ১২ ঘন্টার ব্যবধানে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সবুজ ইসলাম (২৫) বাংলাদেশী নাগরিক কে গুলি করে হত্যা করে।
এদিকে গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর সীমান্তে শহিদুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশিকে হত্যার পরের দিন (৩০ নভেম্বর) গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আন্তর্জাতিক পিলার ৭৬ ও ৭৭ নম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে ভারতের নিমতিতা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা ইব্রাহিম রিংকু এবং মমিন মিয়া নামের দুই বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া, এমন নির্মমতা পৃথিবীর কোনো সীমান্ত দেখা যায় না।
সাংবাদিক নেতা তাজুল ইসলাম বলেন এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গেল একবছরে একই সীমান্তে নবম শ্রেণির ছাত্র সাদ্দাম মিয়া, আহাদ আলীসহ প্রাণ হারান তিন বাংলাদেশি। এছাড়া স্থানীয় ছিদ্দিক আলীর পায়ে গুলি লাগে এবং আহত হওয়ায় তৈমুছ মিয়া নামে আরেকজনের হাত কেটে ফেলতে হয়। ২০২৪ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর দত্তগ্রাম সীমান্তে স্কুলছাত্রী স্বর্ণা দাস এবং ২০২৫ সালের ৩১ মে একই সীমান্তে প্রদীপ বৈদ্য নিহত হন। সিলেট বিভাগে একই সময়ে মোট ৯ জন নিহত হয়। সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে আব্দুর রহমান, সুনামগঞ্জের মাছিমপুরে সাইদুল ইসলাম ও বাগানবাড়িতে শফিকুল ইসলাম এবং হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে জহুর আলী বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান। সিলেট-মৌলভীবাজার সীমান্তে বিএসএফের গুলির কারণে আতঙ্কে থাকেন সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।
১১ মাসে ৩১ বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা এবং গত ১১ বছরে বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয়েছে ৩৪৮ জন। আওয়ামী লীগ আমলেও বছরে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২০১৪ সালে ৩২ জন, ২০১৫ সালে ৪৬ জন, ২০১৬ সালে ৩১ জন, ২০১৭ সালে ২ জন, ২০১৮ সালে ১৫ জন, ২০১৯ সালে ৪৩ জন, ২০২০ সালে ৪৯ জন, ২০২১ সালে ১৮ জন, ২০২২ সালে ২৩ জন এবং ২০২৪ সালে ৩০ জন নিহত হয়েছে। ভারত থেকে অবৈধ পুশইন ও বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু ও দুর্বল পররাষ্ট্র নীতির কারণে বিএসএফ বছরের পর বছর সীমান্তে হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়েও বর্ডার ভায়োলেন্স নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থান না থাকায় সীমান্ত হত্যাকাণ্ড একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদালতে সীমান্ত হত্যার বিচার দাবী করছি।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply