ঢাকা, ২১ নভেম্বর ২০২৫- ব্রাজিলের বেলেম শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন, কপ৩০ চলাকালীন, ঢাকায় শত শত তরুণ, শ্রমিক ও জলবায়ু-ঝুঁকিগ্রস্থ মানুষ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তায় নেমে জলবায়ু সুবিচার, বাংলাদেশের জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর এনার্জি মাস্টারপ্ল্যান (IEPMP) সংশোধন, এবং মানুষ ও পৃথিবীকে সুরক্ষা দেয় এমন দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত ও অনুদান-নির্ভর ন্যায্য রূপান্তর বাস্তবায়নের দাবি জানান। তারা জলবায়ু সুবিচার সংহতি দেয়াল, সুন্দরবনের বাঘের ও বিপন্ন পান্ডার পোশাকধারী মাসকট প্রদর্শনীর মতো অভিনব কায়দায় তাদের দাবি তুলে ধরেন।
ইয়ুখনেট গ্লোবাল, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (BLF), ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর জাস্ট ট্রানজিশন বাংলাদেশ (NAJTB) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (BILS)-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই ধর্মঘটটি বৈশ্বিক সংহতির অংশ, যার মূল স্লোগান ছিল #JustTransition Now। অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেন-নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর অবশ্যই ন্যায়ভিত্তিক হতে হবে, যা শ্রমিক অধিকার রক্ষা করবে, সামাজিক সুরক্ষা বাড়াবে, অভিযোজন বাড়াবে, ক্ষতিপূরণ অর্থায়ন কার্যকর করবে এবং অনুদান-নির্ভর জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করবে।
ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারীরা ব্যানার হাতে বাংলাদেশের বর্তমান জ্বালানি পরিকল্পনায় ভুয়া ও জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর সমাধান প্রত্যাখ্যান করে বলেন-রূপান্তর অবশ্যই হতে হবে মানুষকেন্দ্রিক, মুনাফাকেন্দ্রিক নয়। তারা বলেন, একটি বাস্তব ন্যায্য রূপান্তর জীবিকা সুরক্ষা, লিঙ্গ সমতা, শ্রমিক অধিকার রক্ষা এবং তরুণ, শ্রমিক ও ফ্রন্টলাইন সম্প্রদায়ের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অংশগ্রহণকারীরা সরকারকে সৌর ও বায়ু শক্তিতে দ্রুত বিনিয়োগের আহ্বান জানান-যেখানে স্বচ্ছতা, সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও ন্যায্যতা অগ্রাধিকার পাবে।
ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশের কপ৩০ যুব প্রতিনিধি সোহানুর রহমান বলেন: “ন্যায্য রূপান্তর মানে দূষণ থেকে সমাধানের পথে যাওয়ার সময় কাউকে পেছনে ফেলে না রাখা। এই ধর্মঘট তরুণ ও শ্রমিকদের এক কণ্ঠে বলছে-আমরা চাই কর্মসংস্থান, ন্যায়বিচার ও মর্যাদার ভিত্তিতে গড়া ভবিষ্যৎ। জলবায়ুকর্মীরা ভুয়া ও জীবাশ্মনির্ভর সমাধান প্রত্যাখ্যান করছে এবং সৌর ও বায়ু শক্তিতে স্বচ্ছ বিনিয়োগের দাবি জানাচ্ছে।”
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক একে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন: “বাংলাদেশের শ্রমিকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফ্রন্টলাইনে। বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট ২০২৫-এ আমরা দাবি জানাই এমন ন্যায্য রূপান্তর, যা শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবে, সামাজিক সুরক্ষা বাড়াবে এবং জলবায়ু অর্থায়ন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মানুষের কাছে পৌঁছাবে। কপ৩০ চলাকালীন শ্রমিকদের জন্য জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে”
ঢাকার ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন ইয়ুথনেট গ্লোবালের সহ-নির্বাহী সমন্বয়কারী ও জলবায়ু অধিকারকর্মী আরুবা ফারুক। তিনি বলেন: ‘জলবায়ু ন্যায়বিচার মানে ন্যায্যতা-যারা সংকট সৃষ্টি করেনি, তাদের ওপর যেন বোঝা না পড়ে।
আমাদের প্রজন্ম দাবি জানায়-জলবায়ু কার্যক্রমে মুনাফার আগে মানুষকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ন্যায্য রূপান্তর শুধু জ্বালানি নয়-এটি সমতা, মর্যাদা এবং বাসযোগ্য ভবিষ্যতের অধিকার। কপ৩০ অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়, তরুণ ও শ্রমিকদের জন্য বাস্তব ফলাফল নিশ্চিত করবে।”
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর কামরুজ্জামান মজুমদার সংহতি জানিয়ে বলেন: “তরুণরা আজ সেই দাবিই করছে, যা বিজ্ঞান বহু আগে স্পষ্ট করেছে-দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর এবং জীবাশ্ম জ্বালানির অবসান। বিশ্বে কাছে আমাদের সবার দাবি একই; অনুদান-নির্ভর জলবায়ু অর্থায়ন, যা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সুরক্ষা দেবে।”
ধর্মঘটকারীদের একটি প্রধান দাবি ছিল বাংলাদেশের জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (IEPMP) সংশোধন-যা ব্যয়বহুল ও দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। তারা আরও দাবি করেন বৃহত্তর অনুদান-সমর্থিত আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন, ক্ষতিপূরণ অর্থায়ন কার্যকর করা এবং দেশের জন্য শর্তহীন ঋণমুক্তি।
সিনিয়র ট্রেড ইউনিয়ন নেতা নাইমুল আহসান জুয়েল বলেন: “বাংলাদেশের শ্রমিকরা-বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে-তীব্র জলবায়ু ঝুঁকির মুখে। আমরা দাবি জানাই জলবায়ু অর্থায়ন, ক্ষতিপূরণ পদক্ষেপ এবং এমন ন্যায্য রূপান্তর, যা কর্মসংস্থান ও শ্রমিক অধিকার রক্ষা করবে। শ্রমিকদের এমন সংকটের বোঝা বইতে দেওয়া যায় না, যা তারা সৃষ্টি করেনি।”
অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বব্যাপী সংহতির আহ্বান জানান, যাতে সরকার ও কর্পোরেশনকে জবাবদিহির আওতায় এনে কপ৩০ সম্মেলন যেন ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ, তরুণ ও শ্রমিকদের জন্য বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করে।
ধর্মঘট শেষে তরুণ জলবায়ুকর্মী ও শ্রমিক অধিকার সংগঠকেরা বৈশ্বিক জলবায়ু আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বনেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান-একটি নবায়নযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অনুদান-সমর্থিত বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে, যা অভিযোজন বাড়াবে, টেকসই নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ করবে, ক্ষতিপূরণ অর্থায়ন কার্যকর করবে এবং মানবাধিকার, শ্রমিক মর্যাদা ও আন্তঃপ্রজন্মগত সাম্যের ভিত্তিতে একটি ন্যায্য রূপান্তর অগ্রসর করবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply