ইমরান আল মাহমুদ,উখিয়া: রোহিঙ্গা ঢলের সাড়ে তিন বছর পরে অস্থির হয়ে উঠে কক্সবাজারের ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফলে দিন আর রাত দুই দৃশ্যেই রূপ নেয় ক্যাম্পের পরিস্থিতি। রাতের ক্যাম্প অস্থির করে তুলতে সক্রিয় হয়ে উঠে দুষ্কৃতকারীরা।
এসব অপরাধীদের চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতারসহ ক্যাম্পকে শান্ত রাখতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতারা। এসব দৃশ্য সরেজমিনে দেখার জন্য বালুখালী হয়ে ঢুকতেই পথে পথে দেখা মিলে লাঠি আর বাঁশি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একদল রোহিঙ্গাদের।
তাদের একজন ক্যাম্প-১০ এর মাঝি অজিউল্লাহ। কেনো রাতে পাহারা দিচ্ছে সে প্রশ্ন করার পরপরই অকপটে বলে দিলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে অস্থির করতে কিছু দুষ্কৃতকারী নানাভাবে অপরাধ সৃষ্টি করে আসছিলো। যার ফলে চাঁদাবাজি, গুম,খুন,অপহরণ,মাদক ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়ে আসছিলো। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পে শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন(এপিবিএন) এর উদ্যোগে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছায় রাতে নিজেরা নিজেদের ক্যাম্প পাহারা দিয়ে আসছি।
ক্যাম্প-১০ এর মাঝি অজিউল্লাহর মতো বিভিন্ন ব্লকের একাধিক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় পাহারা দিয়ে আসছে সারারাত। তাদের কয়েকজন বলেন,” ক্যাম্পে আমাদের মা বোনদের রক্ষা করতে সারারাত জেগে থাকি। অপরাধীদের দমনে পুলিশের সাথে আমরাও ছুঁটে যায়। সন্ত্রাসীরা যাতে অপরাধ করতে না পেরে সেজন্য আমরা সারারাত জেগে থাকি।”
এবার অন্যান্য ক্যাম্পের পরিস্থিতি দেখতে প্রতিবেদকের যাত্রা। ক্যাম্প-১১ এর বিভিন্ন ব্লকে সোলার বাতির আলোতে চোখে পড়লো পাঁচ ছয়জন রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ার।
তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন,”ক্যাম্পে কিছু খারাপ মানুষ আমাদের মা বোনদের নির্যাতন করে। বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করতো। পুলিশের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় পাহারা দেওয়ার ফলে বর্তমানে অনেক শান্তিতে বসবাস করতে পারছি। সামনেও এরকম পাহারা দেওয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করবো। সন্ত্রাসীদের দমনে আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করে যাবো।”
তবে ক্যাম্পে আইনশৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তথ্য অনুযায়ী,১১টি ক্যাম্পে প্রতিটি ব্লক থেকে দিনে পাঁচজন করে ৭৭৩টি সাব ব্লকে প্রায় চার হাজার রোহিঙ্গা ভলান্টিয়ার স্বেচ্ছায় পাহারা দেয় বলে জানা যায়। তবে এসব রোহিঙ্গাদের তালিকা করে লাঠি ও বাঁশি বিতরণ করা হয়।
যাদের পাহারা ব্যবস্থা তদারকি করতে প্রতিটি ক্যাম্প থেকে একজন সাব ইন্সপেক্টরকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তাদের তদারকি করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার সদস্যরা সারারাত তদারকি করে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে এসব উদ্যোগে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস বৃদ্ধির হিসাব জানতে চায় ৮ এপিবিএন’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন এর নিকট থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন,”গত ১৩ মাসে ১৪লাখ ৮৪হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার,২৫০টি মামলায় ৬০০জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,”ভলান্টিয়ার কার্যক্রম চালুর পর থেকে ক্যাম্পের অপরাধ প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। নিবিড় তদারকির ফলে রোহিঙ্গা সদস্যরা আনন্দের সাথে প্রতিরাতে তাদের ক্যাম্প এলাকা নিরাপদ রেখে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া ক্যাম্পের কাটাতার রিপেয়ার এর জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে,ক্যাম্প থেকে অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সদস্যরা শাস্তির আওতায় আসছে। মাদকের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি অভিযান চলছে। যার ফলে সার্বিকভাবে ক্যাম্প এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে।”
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply