জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের বহু মানুষ কাজের খোঁজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে ৯৮ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় আসতে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শুক্রবার (১৯ মে) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদন মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের প্রায় ২ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লবণাক্ত পানি উপকূলের আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করছে। এতে মিঠা পানির সংকট দেখা দিয়েছে। লবণাক্ত পানি পান করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এসব মানুষ।
উপকূলে কাজের সংস্থান না হওয়ায় অনেকে পরিবার ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে এর প্রভাবে মানুয়ের বাড়িঘর, জমি ধ্বংস হয়েছে। এতে মানুষ কর্মের জন্য ঢাকামুখী হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরে বর্তমানে যত মানুষ বসবাস করে তার ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গ্রাম থেকে কর্মের সন্ধানে ঢাকায় এসেছে। বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বসবাস।
এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ৯৮ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হওয়ায় শহরে আসতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তারা শহরে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রের লোনা পানি সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল ও নালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। এতে সুন্দরবনের প্রাণ সুন্দর গাছ নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবে সুন্দরবনের অস্বিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় আর্থিক সক্ষমতার অভাবে অনেক পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হচ্ছে। দারিদ্র্য বাড়ছে।
এতে আরও বলা হয়, দরিদ্র্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস করে গ্রামের মানুষ। এর মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি। এরপরই দরিদ্রদের বসবাস শহরের আশপাশে। তবে শহরে দরিদ্রদের বসবাস তুলনামূলকভাবে কম।
প্রতিবেদন মতে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বাংলাদেশের উপকূলে স্কুলগুলোকে কমিউনিটি ‘সাইক্লোন শেল্টার’ বা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে অনেক মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
তবে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দ্রুত পুনর্বাসন ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মেরামত ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করতে হবে।
এতে বলা হয়, ভবিষ্যত প্রয়োজন অনুযায়ী দুর্যোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ বাড়াতে হবে, যা ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উপকূলের পরিবেশ রক্ষায় সরকারকে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply