বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, রোববার দিনশেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়ে ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে।
এর আগে, গত সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করায় রিজার্ভ কমে ৩০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। তখন বিপিএম-৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব রয়েছে, যা শুধুমাত্র আইএমএফকে দেওয়া হয়, তবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় না।
বিশ্বমানের হিসাবে, একটি দেশের অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখন সীমান্তরেখা অতিক্রম করে কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে।
রিজার্ভ মূলত গঠিত হয় প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ থেকে আসা ডলার দিয়ে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ, বিদেশি কর্মীদের পারিশ্রমিক, শিক্ষা ও ভ্রমণ খরচসহ নানা খাতে ডলার ব্যয় হওয়ার কারণে রিজার্ভ হ্রাস পায়।
সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়নি, বরং বাজার থেকে ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ২ সেপ্টেম্বর আটটি ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কেনা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার ও ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ৩২৯ কোটি ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল: জুলাই ১৯১ দশমিক ৩৭ কোটি ডলার, আগস্ট ২২২ দশমিক ১৩ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বর ২৪০ দশমিক ৪১ কোটি ডলার, অক্টোবর ২৩৯ দশমিক ৫০ কোটি ডলার, নভেম্বর ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বর ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারি ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারি ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চ ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিল ২৭৫ কোটি ডলার, মে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুন ২৮২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জুনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় এবং একই বছরের অক্টোবর মাসে ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। তবে পরবর্তীতে ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS