ইমন মাহমুদ লিটন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: দীর্ঘ ৮ বছর ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মালয়েশিয়ায়। হঠাৎ মাথায় ভূত চাপে যাবেন ইউরোপে। পরিবারের বাধার মুখে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ১২ দিন আগে নিজের জমি লিখে দিয়ে পাড়ি জমান লিবিয়া সেখান থেকেই ডাঙ্কি দিয়ে নৌকা বা বুটে করে যাবেন স্বপ্নের দেশ ইটালী। তবে সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের আরমান (৩২) এর। সে উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের আলুকান্দা গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে। এলাকাজুড়ে আরমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লেও পরিবারের দাবি মৃত্যুর খবর পেলেও এখনো মৃত্যুর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, লিবিয়া থেকে ইটালী যেতে নৌকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরমানসহ অনেকে মারা গিয়েছে। দালাল জসিমের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছে আরমানের পরিবার। তবে মৃত্যুর বিষয়টি এখনো তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। এমনকি একাধিক ফোন দিলেও দালাল জসিম নিহতের পরিবারের কোন ফোন রিসিভ করছে না।
এদিকে মৃত্যুর খবর পুরো এলাকায় ও আরমানের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। দুইদিন যাবত স্থানীয়রা ও স্বজনরা নিহত আরমানের বাড়িতে ভিড় করছেন।
এদিকে আরমানের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর আরমানের পরিবারের সদস্যরা লিবিয়ায় পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আরমানের মৃত্যুর সংবাদ তাঁরাও শুনেছেন বলে জানান। তবে কীভাবে মারা গেছেন, কেউ বলতে পারনি।
স্থানীয়রা আরো বলেন, একই ইউনিয়নের ফাঁড়ি রঘুনাথপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন দীর্ঘদিন যাবত বিদেশে লোক পাঠান। তিনি নিজেও লিবিয়ায় থাকেন। জসিমের সাথে আরমানের আত্মীয়ের সম্পর্ক রয়েছে। এরই সুবাদে জসিম ফোনে ইটালী নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন আরমানকে। লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইটালী পৌঁছে দিতে আরমানের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৭ শতাংশ জমি লিখে নেওয়ার পাশাপাশি নগদ ৫ লক্ষ টাকা নেন। কথা ছিল আরমানকে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় শীপে করে ইটালী পৌঁছে দেবেন।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, তিন সন্তানের জনক আরমান। সাত ভাই বোনদের মধ্যে আরমান তৃতীয়। স্থানীয় দালাল জসিম উদ্দিনের প্রলোভনে জমি ও নগদ মিলিয়ে ২৫ লক্ষ টাকার চুক্তিতে অবৈধ পথে ইটালী যাওয়ার উদ্দেশে ৭ নভেম্বর দেশ ছাড়েন আরমান। ১৬ নভেম্বর সকালে আরমান ইটালী পৌঁছেছে জানায় দালার জসিম। পরে আবার জানাই আরমানের ইটালী যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এরপর আরমানের কোনো রকম খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।
আরমানের ছোট ভাই নয়ন মিয়া বলেন, আমাদের এখনো বিশ্বাস হয়নি আমাদের ভাই মারা গেছে। আমার ভাইকে নৌকা দিয়ে লিবিয়া থেকে ইটালী পাঠানো হয়েছিল কিনা এটাও আমরা জানি না। এমনও হতে পারে দালাল চক্র পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে আমার ভাইকে হত্যা করে থাকতে পারে। জসিম আমাদের বিভিন্ন কথা বলে বিভ্রান্ত করে আসছিল।
আরমানের বড় ভাই নূরে আলম বলেন, ২ দিন আগে সকালে জসিম ফোন করে জানায় সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকা ডুবে আরমান মারা গেছেন। নৌকায় থাকা অন্যরাও মারা গেছেন। তবে তাঁরা কারা, সেটা তিনি জানাতে পারেননি।
তিনি আরো বলেন, আমার ভাই দেশ ছাড়ার পর থেকে জসিমের আচরণ সন্দেহ তৈরি করে। দুই দিন আগে বলেন, আরমান ইটালী পৌঁছে গেছে। দুই দিন পর বলেন আমার ভাই সাগর ডুবে মারা গেছে। এসবের মধ্যে অবশ্যই রহস্য রয়েছে। ভাইয়ের খোঁজ না পেলে আইনি সহায়তা নিবেন বলে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
জসিম লিবিয়া থাকায় তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে কথা হয় জসিমের মা হামিদা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ১০ দিন আগে জসিমের স্ত্রী-সন্তান লিবিয়ায় চলে গেছেন। আরমানের মৃত্যুর খবর তিন তার ছেলে জসিমের কাছে শুনেছে। তবে কীভাবে মারা গেছেন তিনি জানেন না। বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে জসিমের স্ত্রী আকলিমা বেগমের সঙ্গে আরমানের সকল ধরনের লেনদেন হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু তালেব বলেন, লিবিয়ায় মৃত্যু হয়েছে এমন কোন খবর পুলিশ এখনো পায়নি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিতভাবে তাদের জানাননি।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply