বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন

যদি কেউ চাঁদাবাজি করতে আসে তাহলে খাম্বার সাথে বেঁধে রাখবেন

এস এল টি তুহিন
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৮৮ Time View

বরিশাল প্রতিনিধি: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নাবেয়ে আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন,আজকে এই ভূখণ্ড নিয়ে ষড়যন্ত্র চলতেছে, আপনারা দেখেছেন যে পার্বত্য অঞ্চলের অবস্থাটা কী,স্বাধীন করার জন্য একদল চক্রান্তকারীরা চক্রান্ত শুরু করেছে, আমি অন্তর্বর্তীকালী সরকার কে বলবো, ওদের রুখে দেন, ওদের কঠোর হস্তে দমন করেন যদি আপনারা না পারেন তাহলে আহ্বান করুন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জনগণ বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি ও রক্ষা করার জন্য তারা জীবন দিবে সবকিছু ঊষর্গ করবে তারপরও একদেশের ১ ইঞ্চি মাটি ও তারা ছাড়বে না। 

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টার দিকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড-এ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মডেল থানা দক্ষিণের আলহাজ্ব মোঃ জাকির হোসেন কাফরা সভাপতিত্বে সংখ্যানুপাতিক (চজ) পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৯ দফা দাবীতে ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ এ দেশ থেকে হঠতে বাধ্য হয়েছে। এরপরে আমরা ভেবেছিলাম এবার তাদের অধিকার ফিরে পাবে মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে মুক্তি পাবে। কিন্তু আমরা দেখলাম সংখ্যালঘু হিন্দুরা  মুসলমানদের অধিকার ফিরিয়ে দিচ্ছে না বৈষম্য করছে। এ জন্য ৪৭ সে ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামে একটি দেশ আমরা স্বাধীন করেছিলাম এ অর্জন করেছিলাম। ভেবেছিলাম বৈষম্য দূর হবে মানুষ শান্তি ভাবে মানুষ মুক্তি পাবে কিন্তু আমরা দেখলাম দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়ার পরেও পূর্ব পাকিস্তান মানুষদের মর্যাদা দেয় না তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয় না তাদের স্বাধীনতা হরণ করে আমরা চিন্তা করলাম এই বৈষম্য দূর করার জন্য আমরা স্বাধীন একটা রাষ্ট্র গড়তে পারি। 

যাতে মানুষের বৈষম্য দূর করার জন্য পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে পারি তাহলে মানুষের অধিকার পাবে শান্তি পাবে । এজন্য ৭১ সালে তৃতীয়বার আমরা আন্দোলন করেছিলাম। ভেবেছিলাম এইবারে মানুষ শান্তি পাবে কিন্তু ৭১ এরপর থেকে এখন ২৪ সাল পর্যন্ত এই ৫৩ বছরে যারা দেশের শাষক ছিল ও ক্ষমতায় ছিল কিন্তু জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য কিছু করতে পারে নায়। ইজ্জত মর্যাদা রক্ষা করতে পারে নায়। সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নায়। ২৪ সে ৫ আগষ্ট এদেশের মানুষ হাজার রক্তের ভিত্তিতে  হাজারো চক্ষু যাওয়ার ভিত্তিতে আমরা ফ্যাসিবাদ সরকারকে হটিয়ে ভেবেছিলাম এবার আমরা মুক্তি পেয়েছি। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবার বৈষম্য থাকবে না মানুষ নির্বিঘ্নে ব্যবসা করবে চলাফেরা করবে ডাকাতি থাকবে না চুরি থাকবে না কোন, আমাদের মা-বোনরা ধর্ষিত হবে না কিন্তু আমরা কি দেখলাম পাঁচই আগস্ট এর পরে আবারও দখলদারি আবারও চাঁদাবাজি আবারো টেন্ডারবাজি আবারো খুন তোফাজ্জলের মত একজন মানুষকে পিটিয়ে যারা হত্যা করেছে চিন্তাও করা যায় না। 

নাবেয়ে আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে যেভাবে মিথ্যা মামলা ছিল সয়লাভ ছিল গাইবি মামলা ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো মিথ্যা মামলা দিয়ে আজকেও সেই হয়রানি হচ্ছে। তাহলে আমরা কেনো আন্দোলন করেছিলাম। জীবনের মায়া ত্যাগ করে কেন আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম  এই দখলদারিত্বের জন্য আমরা রাস্তায় নামি নাই। 

মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা ও অধিকারের জন্য রাস্তা নেমেছিলাম। কিন্তু অধিকার ফিরে পাচ্ছি না কেন  খুঁজে বের করতে হবে। তেঁতুল গাছ লাগিয়ে মিষ্টি ফলের যেমন আশা করা যায় না তেমনি ভাবে চোরের মাধ্যমে চুরি বন্ধ করা যায় না। ডাকাতের মাধ্যমে ডাকাতি বন্ধ করা যায় না।দুর্নীতিবাজদের মাধ্যমে দুর্নীতি বন্ধ করা যায় না। যারা ক্ষমতায় যায় নেতা পরিবর্তন হয় কিন্তু নীতি পরিবর্তন হয় না। ওসি পরিবর্তন হয় কিন্তু ঘুষ যায় না, এসপি যায় কিন্তু ডাকাতির পরিবর্তন হয় না। ডিসি যায় কিন্তু দুর্নীতি পরিবর্তন হয় না। কিন্তু নীতি ও আদর্শবান লোকের ওই চেয়ারে বসে না ব্যক্তি পরিবর্তন হয় কিন্তুু ঘুষের পরিবর্তন হয় না। 

আপনারা কী বিবেকবান মানুষ হবেন না আপনার আর কত রক্ত দিতে চান কতবার আন্দোলন করতে চান, আপনারা দেখেছেন সোনার বাংলা, সবুজ বাংলা দেখছেন নতুন বাংলা দেখছেন ডিজিটাল বাংলা কোন বাংলায় মানুষকে শান্তি দিতে পারে নাই এবার আসুন আমরা বাস্তবায়ন করি ইসলামী বাংলা। ইসলামী বাংলায় একমাত্র মানুষকে শান্তি দিতে পারে । ইসলামের মাধ্যমে প্রতিটা শ্রেণি মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন হবে। মহিলারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে এবং মহিলাদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করা হবে। মহিলারা শিক্ষিত হবে মহিলারা বড় বড় ব্যবসায়ী হবে। 

এ সময় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ফ্যাসিবাদ সরকার ভোট ঢাকাত তথাকথিত অবৈধ মেয়র মাত্র ৮ মাসে ১শ কোটি টাকা চুরি করেছে, মাত্র নতুন চোর পুরাপুরি চুরি শিখে নাই তাতে ১শ কোটি যদি ৫ বছরের চোর থাকতো তাহলে কয়েকশো হাজার কোটি টাকা চুরি করতো। 

বরিশালে চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্য করে ফয়জুল করিম বলেন,বরিশালে কোন চাঁদাবাজি থাকবেনা যদি কেউ চাঁদাবাজি করতে আসে তাহলে খাম্বার সাথে বেঁধে রাখবেন, ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদেরকে প্রতিহত করবো। কোন চাঁদাবাজ থাকবে না। আপনারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করবেন, দালান উঠাবেন কোন চাঁদাবাজ যদি দালান উঠানোর জন্য চাঁদাবাজি করতে আসে খাম্বার সাথে বেঁধে রাখবেন। ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওদের বিচার করবে এবং আইনের হাতে তুলে দেবো ।

এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা যারা জাতির বিবেক আপনাদের কাছে আমি অনুরোধ করবো আপনার বিবেকবান হন নীতিবান হন আদর্শবান হন। আদর্শ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেন আমরা দল চাইনা এ দেশটাকে চাই। আমরা ব্যক্তি চাই না আমরা মানুষের শান্তি চাই। আমরা কোন ব্যক্তির কল্যাণ চাই না এদেশের মানুষের শান্তি চাই। দলকে পিউরিটি না দিয়ে কোন ব্যক্তিকে প্যারিটি না দিয়ে এই ভূখণ্ডকে প্যারিটি দেই। 

বিজিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকে দেখেছি বিএসএফের একজন সদস্যকে তারা আইন অমান্য করার কারণে বিজিবি সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছে এজন্য তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতেছি। অনেকদিন পর হলেও মানুষ ও মানবতা আপনাদের মধ্যে রয়েছে। কিছুটা হলেও রক্ত আপনাদের মধ্যে রয়েছে এটার প্রমাণ দিয়েছেন। এতদিন তো আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের কাছে মাতা নত করেছিল। বাংলাদের হাজারও মানুষ মারছে ভারত সরকাররের কিছু করতে পারে নায়।

তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে বিগত দিনে সকল আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছে। ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের বিপক্ষে সর্বদা সোচ্ছার ছিলো, আছে এবং থাকবে। আমাদের কর্মীরা ৫ ই আগস্ট এর পরে হিন্দুদের মন্দির পাহাড়া, বন্যা কবলিত বিভিন্ন ইস্যুতে ত্রান তৎপরতায় সাধ্যের সবটুকু চেষ্টা করছে।

ফয়জুল করীম বলেন, জুলাই-আগস্টের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং সকল সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। এতে সংগঠনের ১৮জন কর্মী শাহাদাত বরণ করেছে এবং প্রায় ৫ শতাধিক কর্মী আহত অবস্থায় এখনো চিকিৎসাধীন আছে। সুতরাং দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ইসলামকে বাদ দিয়ে করা যাবেনা। তিনি বিগত দিনে হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে দেশ গড়ায় হিন্দু-মুসলিম সহ সর্বস্তরের গণমানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর ইসলামী আন্দোলনের আমীর পীর সাহেব চরমোনাই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে দেশ সংস্কারে ৯ দফা দাবী প্রস্তাব করেন। দাবী আদায়ে সকল জেলা, মহানগর এবং উপজেলা পর্যায়ে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাঁর বক্তব্যে অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনুসকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঘোষিত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং নয় দফা দাবী বাস্তবায়নের আহবান করেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর সভাপতি প্রফেসর মোঃ লোকমান হাকীম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা সৈয়দ নাছির আহমাদ কাওছার। বরিশাল মহানগর সহ-সভাপতি, মাওলানা জাকারিয়া হামিদী।

বরিশাল মহানগর মাওলানা আবুল খায়ের সেক্রেটারী আলহাজ্ব মোঃ এনামুল হক শামীম রাঢ়ী,বরিশাল মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোঃ রফিকুল ইসলাম,ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ, বরিশাল মহানগর সভাপতি তানভীর আহমেদ শোভন। 

উক্ত গণসমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বরিশাল মহানগর, থানা, ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS