ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে হক্বপন্থী ও তরিকতপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ ফেরাতে গিয়ে মীর মিলন মিয়া নামে ১ ব্যাক্তি নিহত হোন। এ সংঘর্ষে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে।
সোমবার সকাল ১২টায় কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী বাজারে জশনে জুলুস উদযাপনকারী ও হক্বপন্থী ইমাম উলামা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তি কুলিয়ারচর উপজেলা ছয়সূতী পূর্বপাড়া জমির উদ্দিন জাবু মিয়ার ছেলে মীর মিলন মিয়া। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
এদিকে তরিকতপন্থীর লোকজন ছয়সূতী বাজারের জামে মসজিদ ভাঙচুর করে। অপরদিকে হক্বপন্থী ইমাম উলামা পরিষদের মুসুল্লীগণ সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজার ভাঙচুর করে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজারে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল তরিকতপন্থী বিখ্যাত নেতা গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী। এতে বাধা দেন কুলিয়ারচর ইমাম উলামা পরিষদের নেতারা। গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী যাতে মাহফিলে উপস্থিত না হয় এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি আবেদন করেন ইমাম উলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। ইমাম উলামা পরিষদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরীকে মাহফিলে আসতে নিষেধাজ্ঞা দেন প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা দেন ইমাম উলামা পরিষদের আয়োজিত সিরাত মাহফিলও।
পরে ১২ রবিউল আউয়ালের ধর্মীয় আচার আচরণে দুই পন্থীদের একটি রোডম্যাপ তৈরি করে দেন প্রশাসন। তারপরও দ্বন্দ্বে শেষ হয়নি। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল তরিকতপন্থীর লোকজন জশনে জুলুস বের করে। তবে এই জশনে জুলুসের জন্যও নির্দিষ্ট রাস্তা ঠিক করে দেন প্রশাসন। তা অমান্য করে মিছিল নিয়ে বাজারে ঢুকে পড়ে তরিকতপন্থীরা। বাজারে জশনে জুলুস ঢোকা মাত্রই রাস্তার পাশে থাকা মসজিদে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর শুরু করে তরিকতপন্থীর লোকজন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার লোকজন, ছয়সূতী বাজারে অবস্থিত খাদেমুল ইসলাম হোসাইনীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররাসহ ইমাম উলামা পরিষদের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজারে ভাঙচুর চালায়। চলে তরিকতপন্থী লোকজন ও হক্বপন্থী লোকজনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় চাপা উত্তেজনা ও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে ইমাম উলামা পরিষদের নেতা মুফতি নাছির উদ্দিন রহমানিয়া জানান, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিরাতুল মাহফিল বন্ধ রাখি। সকাল ১১টায় বেদাতীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের মসজিদের উপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় আমাদের অনেক ইমামা পরিষদের সদস্যরা আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে কুলিয়ারচর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সারোয়ার জাহান বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে সেনাবাহিনীসহ আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। জশনে জুলুসের মিছিল থেকে মসজিদে আক্রমণ করলে এতে সংঘর্ষ বাধে। সেনাবাহিনীসহ পুলিশ সদস্যরা অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একজন গুরুত্বর আহত হয়ে হাসপাতালে পাঠানো হলেও তার মৃত্যুর বিষয়টি আমি নিশ্চিত নয়। এ ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply