শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:১৩ অপরাহ্ন

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয় পেল রিয়াল মাদ্রিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ২ জুন, ২০২৪

বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে রেকর্ড ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ১৯৯৬-৯৭ সালে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করা ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদকেই এই ম্যাচে ফেবারিট হিসেবে ধরা হচ্ছিল। তবে সহজেই জয় পায়নি লস ব্লাঙ্কোরা। প্রথমার্ধে দুর্দান্ত প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলে রিয়ালকে প্রায় ধরাশায়ী করে ফেলেছিল ডর্টমুন্ড। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় ফাইনাল হারের বেদনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের।

২০১২-১৩ মৌসুমে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলেছিল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। এবারের আগে সেটিই ছিল তাদের সর্বশেষ ফাইনাল। সেবার বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল তারা। আরও একবার ফাইনাল থেকে খালিহাতে ফিরল ডর্টমুন্ড। কিন্তু এবারের প্রতিপক্ষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সফলতম দল রিয়াল মাদ্রিদ। হারের ব্যবধানটা বড়; দানি কার্ভাহাল ও ভিনিসিউস জুনিয়রের গোলে জয় পেয়েছে রিয়াল।

প্রথমার্ধে রিয়ালকে কোণঠাসা করে ফেলেও গোল আদায় করতে পারেনি ডর্টমুন্ড। ফিনিশিং দুর্বলতায় হতাশ হতে হয়েছে তাদের। সুযোগ নষ্টের শাস্তি তাদের ভালোমতোই দিয়েছে রিয়াল। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে খারাপ শুরুর পরও রিয়াল ম্যাচটা জিতে নিয়েছে বিশেষ কিছু কারণে। সেদিকে এবার দৃষ্টপাত করা যাক।

ডর্টমুন্ডের ফিনিশিং দুর্বলতা: রিয়াল মাদ্রিদ এদিন বলের দখল রেখে খেলায় চেষ্টা করেছে। দুই মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা ও টনি ক্রুসের মধ্যে ক্রুস কিছুটা নিচে নেমে রক্ষণে সহায়তা করার পাশাপাশি কখনো শর্ট পাস আবার কখনো লং পাসে খেলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল। কিন্তু করিম আদেয়েমির গতির কাছে রাইটব্যাক দানি কার্ভাহাল বারবার পরাস্ত হওয়ায় খুব বেশি কার্যকরি হয়ে উঠতে পারেননি ক্রুস।

আদেয়েমির অতি কাজে লাগিয়ে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলে বেশ কয়েকটি ভালো সুযোগ তৈরি করলেও গোল করতে পারেনি ডর্টমুন্ড। ১৪ মিনিটে শট পোস্টে রাখতে পারেননি ইউলিয়ান ব্রান্ডিট। ২১ মিনিটে আদেয়েমি রিয়ালের গোলরক্ষক কর্তোয়াকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে কাটাতে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ হারান। আর ততক্ষণে কার্ভাহাল ছুটে এসে বল ক্লিয়ার করেন। এর দুই মিনিট পর ফুলক্রুগের শট রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগকে পরাস্ত করলেও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এসব আক্রমণ থেকে গোল আদায় করতে না পারায় পস্তাতে হচ্ছে ডর্টমুন্ডকে।

কর্তোয়ার বীরত্ব: মৌসুমের শুরুতে এসিএল ইনজুরিতে পড়েছিলেন রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে তিনি প্রথম ম্যাচটি খেলতে নামলেন সরাসরি ফাইনালে। আর নেমেই একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে দিলের জয়ে রাখলেন বিশাল অবদান। ২৭ মিনিটে ব্রান্ডিটের পাস থেকে আদেয়েমির বিপজ্জনক শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। ৪১ মিনিটে মার্সেল সাবিতজারের দূরপাল্লার শটও ঠেকিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দেন কেন তিনি রিয়ালের নম্বর ওয়ান গোলরক্ষক।

প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ডের অতিরিক্ত শক্তিক্ষয়: রিয়াল মাদ্রিদ সাধারণত বড় ম্যাচের শুরুতে শক্তি খরচে কিছুটা কার্পণ্যই দেখায়। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতেই বরং বেশি ব্যস্ত দেখা যায় তাদের। এদিনও একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ডের গতিশীল খেলা সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে রিয়ালকে। বিশেষ করে আদেয়েমিকে সামলাতেই পারছিলেন না কার্ভাহাল।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার পর থেকেই অন্য এক রিয়ালকে দেখা যায়। খেলার গিয়ারটা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে লস ব্লাঙ্কোরা। এই অর্ধে রিয়ালের প্রাণবন্ত ফুটবলের বিপরীতে ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড়দের কিছুটা পরিশ্রান্তই মনে হয়েছে। যার ফল দেখা যায় খেলার শেষ ৩০ মিনিটে।  এ সময়েই গোল আদায় করে নেয় রিয়াল।

ডর্টমুন্ডের কোচের পরিকল্পনার ভুল: প্রথমার্ধে গোল আদায়ে ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ডর্টমুন্ডের কোচ এডিন তারজিচ বড় ভুল করেন আদেয়েমিকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন আদেয়েমি তার গতি দিয়ে রিয়ালের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন। ফলে আক্রমণে ওঠার ক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না রিয়াল। কিন্তু ম্যাচের ৭১ মিনিটে তাকে তুলে নিয়ে মার্কো রয়েসকে নামান তারজিচ। আর তার পরেই খেলার অতিপথ পাল্টে যায়।

শুরু থেকে আদেয়েমির গতির কাছে পরাস্ত কার্ভাহাল এবার ওপরে উঠে খেলার সুযোগ পান। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ৭৪ মিনিটে হেডে গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন।

গোল খাওয়ার পর শোধ করার মতো সময় থাকার পরও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড়রা। তাদের রক্ষণভাগের সঙ্গে মাঝমাঠের সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় গোলের সময় তাই সহজেই ফাঁকা জায়গা পেয়ে গেছেন ভিনিসিউস। আর বেলিংহ্যামের পাস থেকে বল পেয়ে ভুল করেননি বড় ম্যাচের খেলোয়াড় ভিনিসিউস।

ভিনিসিউস জুনিয়রের ব্রিলিয়ান্স: দুই বছর আগে লিভারপুলের বিপক্ষে ফাইনালে দারুণ এক মুভ থেকে গোল করে ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন ভিনিসিউস জুনিয়র। এবার ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে তার গোলেই রিয়ালের জয় নিশ্চিত হয়েছে। ম্যাচজুড়ে রিয়ালের আক্রমণভাগের প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনিই। বাঁ প্রান্ত ধরে ডর্টমুন্ডের রক্ষণভাগে ত্রাস ছড়িয়েছেন। দারুণ সব মুভ দেখিয়েছেন। নাটমেগে বোকা বানিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে একের পর এক ক্রস করেছেন। ফাইনালে সবচেয়ে বেশি (৮বার) ড্রিবলিংও করেছেন ভিনিসিউসই। তর্কসাপেক্ষে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা এই উইঙ্গার শেষ পর্যন্ত গোল না পেলে অন্যায়ই হয়ে যেত। ‘

ক্রুস-কামাভিঙ্গা-ভালভার্দের রসায়ন: রিয়ালের মাঝমাঠ খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে জানে। ক্রুস জানেন গতি বাড়িয়ে-কমিয়ে ম্যাচের টেম্পো নিয়ন্ত্রণ করতে। সেই সঙ্গে তার ডিফেন্সচেরা পাস তো আছেই। রিয়ালের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন ক্রুস। দুটি ফ্রি-কিক নিয়ে দুবারই অল্পের জন্য গোলবঞ্চিত হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার নেওয়া কর্নার থেকেই প্রথম গোল পেয়েছে রিয়াল। কামাভিঙ্গা ও ভালভার্দেও নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করেছেন। যার ফলেই লিড ধরে রেখে মাঠ ছাড়তে পেরেছে রিয়াল।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS