মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেও, বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন সরকারগুলো শেষ পর্যন্ত চুক্তিতে পৌঁছাবে। এই আশাবাদ থেকেই বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এশিয়ার বেশিরভাগ শেয়ারবাজারে উত্থান দেখা গেছে।
হংকং থেকে এএফপি জানায়, এপ্রিল মাসে ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ঠিক না হলে ‘লিবারেশন ডে’ (৯ জুলাই) থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। পরে সময়সীমা বাড়িয়ে ১ আগস্ট করা হয়। এর মধ্যে ২০টিরও বেশি দেশ, যেমন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, নতুন শুল্কের নোটিশ পেয়েছে। কারও ওপর বেশি, আবার কারও ওপর কম।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সপ্তাহে বলেছেন, তামার উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন এবং ওষুধের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনায় রয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই হুমকিগুলো আসলে চাপ তৈরির কৌশল মাত্র। বাস্তবিক শুল্ক আরোপ না করে দেশগুলো চুক্তির মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাবে। এই বিশ্বাস থেকেই বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হয়ে বাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন।
নিউ ইয়র্কে এসএন্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক সূচক সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বিশেষ করে এনভিডা’র দাম বেড়ে কোম্পানিটির বাজারমূল্য ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ইনভসকোর বাজার বিশেষজ্ঞ ডেভিড চাও বলেন, যদি শুল্ক আরোপ হয়ও, তাহলে এশিয়ার দেশগুলো তা সামাল দেওয়ার জন্য আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ডলারের দাম এখন কিছুটা কম, ফলে বড় ধরণের মুদ্রা পতনের আশঙ্কা ছাড়াই এশিয়ার দেশগুলো সহজেই নিজেদের অর্থনীতিতে সহায়তা করতে পারবে।
হংকং, সাংহাই, সিডনি, সিঙ্গাপুর, সিউল, তাইপে, ম্যানিলা, জাকার্তার বাজারে বেশ উত্থান দেখা গেছে । অন্যদিকে টোকিও এবং ওয়েলিংটনে পতন ঘটেছে। একইসঙ্গে বাজারের এই উচ্ছ্বাসের প্রভাবে বিটকয়েনের দাম ১১২,০০০ ইউএস ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিচার নিয়ে সমালোচনা করেন।
জবাবে ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, আমরাও পাল্টা শুল্ক দিতে প্রস্তুত। তবে বাজারে এই খবরে বড় কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ব্রাজিলের সঙ্গে বাণিজ্যে লাভেই রয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ফেডারেল রিজার্ভ) একটি বৈঠকে জানায়, তারা ভবিষ্যতে সুদের হার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এখনো দ্বিধায় রয়েছে।
ফেড প্রধান জেরোম পাওয়েল ধৈর্য বজায় রাখার পক্ষে, তবে ট্রাম্প বলেছেন সুদের হার কমপক্ষে তিন পয়েন্ট বেশি। তার মতে ফেডের দ্রুত এ হার কমানো উচিত।
ফেডের সভায় কেউ কেউ বলেছেন, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম একবার বাড়লেও, সেটি দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে না। আবার অনেকেই মনে করেন, শুল্কের কারণে দীর্ঘমেয়াদে দাম ও মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
শুল্ক আরোপের আশঙ্কা থাকলেও, বিনিয়োগকারীরা এখন বিশ্বাস করছেন দেশগুলো শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাবে। এই আশাবাদেই বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply