শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

২৫০০ কিলোমিটার: চবি শিক্ষকের একটি ভিন্নধর্মী গবেষণা

তানজিম পাটোয়ারী
  • Update Time : শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৪৯৩ Time View

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ একটি দেশের উন্নতির পেছনে যে বিষয়গুলোর অবদান অপরিহার্য তার মধ্যে গবেষণা অন্যতম। কারণ নিত্য-নতুন বিষয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে এটি জাতির মেধা ও মনন বিকাশে ভূমিকা রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে টেকনোপ্রেনারশিপ নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। গবেষণাটি করতে তিনি ঘুরেছেন ২৫টির মতো জেলায়, পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার পথ। আর এ গবেষণা নিয়ে কথা হয় তার সাথে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তানজিম হাসান পাটোয়ারী।

তানজিম: টেকনোপ্রেনারশিপ বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আপনি গবেষণা করেছেন। গবেষণার মূল বিষয়বস্তু কি ছিল?

অধ্যাপক তানভীর: টেকনোপ্রেনারশিপ মূলত উদ্যোক্তাদেরকে কীভাবে তথ্য-প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করে তোলা যায় সে সম্পর্কিত একটি বিষয়। আমি এ গবেষণায় চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে সেগুলোর গ্রহণযোগ্য সমাধান দিতে।

তানজিম: বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির সাথে মানুষের সখ্যতা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের হার কতটুকু?

অধ্যাপক তানভীর: আমার গবেষণার বিষয় ছিল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে। বড় বড় ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তারা যেভাবে প্রযুক্তির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টির প্রয়োগ তেমনভাবে দেখা যায় না। অনেকে তাদের মোবাইল ফোনটিকে মোবাইল কল এবং বিনোদনের জন্য ব্যবহার করে। অথচ এটি ব্যবহার করে যে উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসায়িক কাজকে আরো সহজে সবার কাছে উপস্থাপন করতে পারে, সেটি এখনো অনেকের কাছে সেভাবে পৌঁছায় নি। আর আমি আমার গবেষণায় এ বিষয়টির উপর জোর দিয়েছি।

তানজিম: আপনার গবেষণায় আপনি তরুণ উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেখানে প্রধান সমস্যাগুলো কি কি ছিল?

অধ্যাপক তানভীর: আমার মতে প্রধান সমস্যা ছিল প্রযুক্তির সাথে উদ্যোক্তাদের সঠিক সমন্বয়ের অভাব। এছাড়া পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক প্রণোদনার অভাব বাধা হিসেবে কাজ করে।

তানজিম: বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেগুলো কি তাদের কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করতে সাহায্য করছে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক তানভীর: কিছুটা সাহায্য তো অবশ্যই করছে। তবে প্রশিক্ষণের সময় অনেক সময় প্রকৃত উদ্যোক্তারা বাছাই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে যায়। তাই এ বিষয়টিতে অবশ্যই দৃষ্টিপাত করা উচিত।

তানজিম: আপনার মতে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কি ধরনের ভূমিকা পালন করা উচিত?

অধ্যাপক তানভীর: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়টি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজ শর্তে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

তানজিম: এ গবেষণা করতে গিয়ে আপনি অনেকগুলো জেলা ঘুরেছেন। এজন্য আপনার মোট কতদিন সময় লেগেছে?

অধ্যাপক তানভীর: আমার এক সপ্তাহের মতো সময় লেগেছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম এবং অক্টোবরের প্রথমদিকে যাত্রা শেষ হয়েছিল। আর পুরো যাত্রায় আমি নিজেই ড্রাইভিং করেছিলাম।

তানজিম: গবেষণার কাজ তো আপনি ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। কবে নাগাদ এটি পাবলিকেশনে যাবে?

অধ্যাপক তানভীর: আগামী মাসে আমি এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেলে জমা দিব। এরপর এটি দ্রুততম সময়ে কোনো জার্নালে প্রকাশিত হবে বলে আশা করি।

তানজিম: এ গবেষণায় উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি অন্য কোনো বিষয় কি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে?

অধ্যাপক তানভীর: যেহেতু অনেকগুলো জেলা ঘুরেছি তাই ঐ সকল জেলার উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সেসব জেলার দর্শনীয় স্থান এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কেও বর্ণনা রয়েছে সেখানে।

তানজিম: টেকনোপ্রেনারশিপ নিয়ে আপনি গবেষণাটি করেছেন। এ গবেষণাটি কতটুকু প্রায়োগিক?

অধ্যাপক তানভীর: এ গবেষণাটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে প্রায়োগিক দিকের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেহেতু গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো আমি নিজেই কথা বলে সংগ্রহ করেছি তাই গবেষণাটি অনেক বেশি বাস্তবধর্মী হবে বলে আমি মনে করছি।

তানজিম: আপনি তো বললেন আগামী মাসে আপনি গবেষণাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেলে পাঠাবেন এবং এরপর সেটি জার্নালে প্রকাশিত হবে। অর্থাৎ এ গবেষণাটির কাজের আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষ। গবেষণাটি প্রকাশিত হওয়ার পর কি আপনি বিভিন্ন জেলায় উদ্যোক্তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজটি অব্যাহত রাখবেন?

অধ্যাপক তানভীর: যেহেতু উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছি তাই আগামীতেও এ কাজ অব্যাহত রাখব। বর্তমানে মানব সম্পদ উন্নয়নে জিএসটিএম একাডেমি (গ্রিন সোসাইটি ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট একাডেমি) নামে আমি একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। এছাড়া উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিয়েও আগামীতে কাজ করার আশা আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS