অভিনব কৌশলে একাধিক ভুক্তভোগীর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রায় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদ (৩০)।
রোববার (৩১ জুলাই) এক অভিযানে নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই বিষয়ে সোমবার (১ আগস্ট) মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।
এই সময় তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি প্রতারক চক্র বিকাশ, নগদ কিংবা রকেটের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এমন একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি অভিযান পরিচালনা করে। সোমবার নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেপ্তার খোকনের নেতৃত্বে রয়েছে তিন থেকে চার সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এরা মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের বিকাশ, নগদ বা রকেটের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রের সকল সদস্যের সম্মিলিত প্রয়াসে বিকাশ, নগদ বা রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার কাজটি তারা বিভিন্ন ধাপে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে করতো।
সিআইডি বলছে, প্রতারক চক্রটি কয়েকটি ধাপে প্রতারণার কাজটি সম্পন্ন করতো। প্রথম ধাপে প্রতারক বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভিকটিমকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করার জন্য বলে। আর আপডেট না করলে একাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানায়। দ্বিতীয় ধাপে প্রতারক ভিকটিমের ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্টটিতে তিন বারের বেশি ভুল পাসওয়ার্ড দেয়। এতে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়।
তৃতীয় ধাপে প্রতারক ভিকটিমকে আবারও জানায়, তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং একাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়েছে। তবে এই ব্লককৃত টাকা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব বলেও প্রলোভন দেখায়। এর জন্য প্রতারক ভিকটিমের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর এবং সিভিএন জানতে চায়।
ভিকটিম এসব তথ্য সরবরাহ করলে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল নম্বরে একটা ওটিপি (OTP) কোড সম্বলিত একটি ম্যাসেজ যায়। ভিকটিম ম্যাসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারক জানতে চায়। কোডটি প্রতারক ভিকটিমের কাছ থেকে পাওয়ার পর ভিকটিমের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা প্রতারক তার নিজের বিকাশ আ্যকাউন্টে ট্রান্সফার করে। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পর পরই তারা তাদের ব্যবহৃত সকল আইডেন্টিটি গোপন করে রাখে।
বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর আরও বলেন, গ্রেফতার খোকনের ‘ইটস খোকন ব্রো’ এবং ‘ইটস খোকন ব্রো ০২‘ নামের দু’টি ফেসবুক আইডি ছিল। এসব আইডি থেকে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতো সে। তারপর তাদের কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। পরে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে সে তার প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করে। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যক্তিদের সে মূলত তার শিকারে পরিণত করে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply