চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক খাত পর্যালোচনা করে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রমজান মাসের কারণে ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, যা সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে।
সম্প্রতি গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) সভা হয়। এতে যোগ দেন এমপিসির সদস্য ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, চিফ ইকোনমিস্ট ড. মোহাম্মদ আখতার হোসেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম। এছাড়া, এমপিসির সদস্য-সচিব ও মুদ্রানীতি বিভাগের পরিচালক মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের যোগ দেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছে।
সভায় দেশি ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ ও পূর্বাভাস নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন রমজান ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতের মুদ্রা ও তারল্য পরিস্থিতি, নীতি সুদহারের অবস্থা, বহিস্থ খাত থেকে আসা চাপ এবং বিনিময় হার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।
কমিটির সদস্যরা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাজারের সুদের হার, বৈদেশিক মুদ্রা ও মুদ্রানীতির প্রভাব পর্যালোচনা করেন। মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমলেও সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ সার্বিক মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে যা ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছে এমপিসি। তবে কিছু অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ সমস্যার কারণে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, আন্তঃব্যাংক কলমানি ও রেপো হার সামান্য হ্রাস পেয়েছে, আর সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় সুদের চাপে সামান্য স্বস্তি এসেছে। তবে, বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির গতি ধীর রয়েছে, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে ঋণ চাহিদা কমে যাওয়ার ফলাফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
বৈদেশিক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাঝারি হলেও আমদানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। রমজান উপলক্ষে জরুরি পণ্যের এলসি মার্জিন শিথিল করায় আমদানি বাড়া স্বাভাবিক বলে কমিটি মনে করে। একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহও গতিময় ছিল।
তবে কিছু ঝুঁকিও চিহ্নিত করা হয়, যেমন—আবহাওগত কারণে আমন ধানের ক্ষতি, জাতীয় নির্বাচন, আসন্ন রমজান ও সম্ভাব্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা বাড়তে পারে।
সব দিক বিবেচনায় এমপিসি সিদ্ধান্ত নেয় যে বর্তমান নীতিগত সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। এসডিএফ হার ৮ শতাংশ এবং এসএলএফ হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থাকবে। কমিটি আরও জানায়, প্রকৃত নীতিগত সুদহার ৩ শতাংশে পৌঁছানো পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে, যাতে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে এবং মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে আনা যায় বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply