রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ

ভৈরবে সিজারে কম বয়সি নারী জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ

ইমন মাহমুদ লিটন 
  • আপডেট : শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রথম বাচ্চা প্রসবজনিত সিজারে কম বয়সি এক নারীর জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকালে পৌর শহরের কমলপুর নিউ টাউন এলাকায় স্বদেশ হাসপাতাল (প্রা.) এন্ড ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নারী জেলার মিটামইন উপজেলার কাটখাল গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে ও একই জেলার অষ্টগ্রাম থানার কদমচাল গ্রামের নুরুল ইসলামের স্ত্রী শাবনুর বেগম (২২)।

অভিযোগটি উঠেছে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মিশুতি রাণী ঘোষসহ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ডা. মিশুতি রাণী ঘোষ স্ত্রী রোগ, গাইনি প্রসূতি ও বন্ধ্যাত্ব রোগে অভিজ্ঞ ও সার্জন। এ দিকে স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । তারা বলছেন রোগী বাঁচাতেই জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে৷

এ বিষয়ে রোগীর স্বজনরা জানান, আমাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে আমরা স্বদেশ হাসপাতালে আসি। ২৩ জানুয়ারি দুপুর ১টায় হাসপাতালে এসে ডাক্তার মিশুতি রাণীকে দেখালে একাধিক পরীক্ষা নিরিক্ষার পর ঘণ্টা খানেক যেতে না যেতেই ওটিতে নিয়ে যায়। পরক্ষণেই অপারেশনে একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। শিশুটিকে স্বজনদের কাছে দিয়ে ডাক্তাররা এদিক ওদিক ছুটাছুটি শুরু করে। পরে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে রক্ত লাগবে বলে স্বজনদের জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই কথা শুনে স্বজনদের সন্ধ্যেহ হলে ডাক্তার নার্সদের জিজ্ঞেস করলে তারা কোন সদুত্তর দেয় না। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হবে। এ কথা শুনে স্বজনরা বাধা দিলেও ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের যোগসাজশে জরায়ু কেটে ফেলা হয়।

এ ছাড়াও স্থানীয়রা ও রোগীর স্বজনরা জানান, ডাক্তার মিশুতি রাণী ঘোষ অনেক ঝুঁকি নিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করে থাকেন। মিশুতি রাণীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই একাধিক ভুল চিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে। এমনও অভিযোগ আছে তার অপারেশনে রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রোগীর বড় বোন সরফা আক্তার বলেন, আমার বোনের অবস্থা অনেক খারাপ। ডাক্তার নার্সরা রোগী রেখে পালিয়ে গেছে। আমার কম বয়সি বোনকে প্রথম বাচ্চা প্রসবজনিত সিজারে ভুল অপারেশন করে জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। দুই বছর আগে আমার বোনের একটি ছেলে সন্তান হয়েও মারা গেছে। তাই আমরা ঝুঁকি না নিয়ে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেই। হাসপাতালে বোনকে আনার ঘণ্টা খানেকের ভিতর ওটিতে ঢুকিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমাদের কিছু না জানিয়েই অপারেশন করে ফেলে। অপারেশনের ১৫ মিনিটের মধ্যে মেয়ে হলে আমার কাছে দিয়েই চলে যায়। হঠাৎ হাসপাতালের ডাক্তাররা আমাদের কাছে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিতে চাই। আমরা অনেক চেষ্টা করে জানতে পারি আমার বোনের জরায়ু কেটে ফেলার জন্য স্বাক্ষর নিচ্ছে। আমরা স্বাক্ষর দিতে চাই না এমনকি আমার ভাই ও ছোট বোন জামাইকেও স্বাক্ষর দিতে না করি। কিন্তু আমার বোনের অবস্থা অবনতির ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন। আমার বোনের অবস্থা ভালো না।

ভুক্তভোগীর বড় ভাই সোহেল মাহমুদ বলেন, এ ঘটনারপর আমি থানায় মৌখিক অভিযোগ দিলে সাথে সাথে পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আসে। চিকিৎসক এসে আমার বোনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যেতে বলে। হাসপাতালে লোকজন আমাদের অ্যাম্বুলেন্স করে দেয়। এমনকি চিকিৎসা ভার গ্রহণ করবে বলে আশ্বাস দেন। আমি আগে বোনকে বাঁচানোর চেষ্টা করবো। পরে থানায় অভিযোগ দিবো। তারা আমার বোনের ভবিষ্যতে নষ্ট করে দিয়েছে চিকিৎসকরা। আমি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সবার বিচার চাই।

এদিকে খবর পেয়ে সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে সাংবাদিকদের দেখে দুই একজন নার্স দৌড়ে পালিয়ে যায়। তারা কেউই ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি। এ ছাড়া হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ কাউকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখা হয় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যখন অপারেশন করা হয় তখন ব্লিডিং হচ্ছিল বেশি৷ জরায়ুতে সেলাই দেওয়ার মুহূর্তে ভালো ছিল। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় আবার ব্লিডিং হচ্ছে। একদিক দিয়ে সেলাই দেয় আরেক দিক দিয়ে ফুলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় জরায়ু কেটে ফেলাই ভালো মনে করেছেন সার্জন। দুইজন ডাক্তারের পরামর্শ করে ও রোগীর স্বজনদের অবগত করেই অবগত করেই জরায়ু কাটা হয়েছে। কোন ডাক্তারই চাই না রোগীর অবস্থা খারাপ হোক। কোন চিকিৎসকই চাই না রোগীর মৃত্যু হোক।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডাক্তার মিশুতি রাণী ঘোষ বলেন, রোগীর জরায়ুর ফুল নিচে পরে ছিল। আমি টান দিয়ে কেটে বাচ্চা প্রসবের পর রোগীর অতিরিক্ত ব্লিডিং হয়। পরে তাদের পরিবারের সাথে ও আরেকজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলেই জরায়ু কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রোগীকে বাঁচাতে আমার এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

তার নিজের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অনেক অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার মিশুতি রাণী ঘোষ বলেন, বর্তমান যে বিষয়ে কথা বলছেন এটাতে থাকুন। অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলার দরকার নেই।

খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদি হাসান রোগীকে দেখেন। দীর্ঘক্ষণ পর্যবেক্ষণ শেষে বলেন, রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতি হচ্ছে। যতদ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য ভালো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেই ভাল হবে। চিকিৎসা ভুল হয়েছে সেটা বলা যাবে না। মেডিকেল টিম গঠন করে সার্বিক বিষয় তাদারকি করলে বুঝা যাবে কি হয়েছে।

এ বিষয়ে ভৈরব থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহীন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS