প্রকাশ জানু ১৭, ২০২২ 960


পরিশোধিত মূলধনের ঘাটতি পূরণ হওয়ায় খুব শিগগিরই চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে পিপলস ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, পরিশোধিত মূলধনের অভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না প্রস্তাাবিত পিপলস ব্যাংক। জোগাড় হচ্ছে না পেইড আপ ক্যাপিটালের (পরিশোধিত মূলধন) ৫০০ কোটি টাকা। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত লাইসেন্সও পাচ্ছে না ব্যাংকটি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্তির অপেক্ষায় থাকা পিপলস ব্যাংকের দুটি পরিচালক পদের মালিকানায় আসছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। ব্যাংকটির মালিকানায় আসছেন সাকিব আল হাসান এবং তার মা শিরিন আক্তার। ফলে খুব শিগগিরই ব্যাংকটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই পর্ষদ সভায় পিপলস ব্যাংককে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।
দেশের সব ব্যাংকের প্রতি পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে হলে সমপরিমাণ অর্থই মূলধন হিসেবে জমা রাখতে হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হলে প্রয়োজন হয় সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের। সে হিসেবে পিপলস ব্যাংকের প্রতিটি পরিচালক পদের জন্য সর্বনিম্ন ১০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিতে হবে সাকিব আল হাসানকে। তবে ব্যাংকটির মালিকানায় আসতে তিনি ২৫ কোটি টাকারও বেশি মূলধন জোগান দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এই প্রসঙ্গে পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও প্রধান উদ্যোক্তা এম এ কাশেম অর্থসূচককে বলেন, আমরা ভালো উদ্যোক্তা খুঁজছি। এ অবস্থায় পিপলস ব্যাংকের মালিকানায় সাকিব আল হাসান ও তার মা যুক্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে আমরা তাদের ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছি। সাকিবের মতো একজন তারকাকে উদ্যোক্তা হিসেবে পাওয়া আমাদের জন্য গৌরবের। পিপলস ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি ব্যাংক পরিচালনার সুযোগ দিয়েছেন। তাই দেরি হলেও আমরা দেশবাসীর কাছে একটি ভালো ব্যাংক উপহার দিতে চাই। কোন ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই।
শিগগিরই পিপলস ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেই আমরা বাজারে আসতে চাই এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেনস ও পিপলস নামে নতুন তিনটি ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নতুন ব্যাংকের জন্য জুড়ে দেয়া হয় ৫০০ কোটি টাকা মূলধনের শর্ত, যা আগে ছিল ৪০০ কোটি।
এর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক চলতি বছরের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। আর চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার পর কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটিজেনস ব্যাংক। কিন্তু লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পিপলস ব্যাংক এখনো লাইসেন্স নিতে পারেনি।
পিপলস ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কয়েকজনের অর্থের উৎসে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে দেয়া এলওআই স্থগিত করা হয়েছিল। বিতর্কিত উদ্যোক্তাদের বাদ দিলে পিপলস ব্যাংকের এলওআইয়ের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূলধনের অর্থ জমা দিতে পারেনি ব্যাংকটি। শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এলওআইয়ের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে।
প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী এমএ কাশেম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের এ বাসিন্দা ব্যাংকের লাইসেন্স চেয়ে আবেদনের পর থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি ছাড়াও সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আক্তার এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। চূড়ান্ত লাইসেন্স পেলে এটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
২০০৯ সাল থেকে বর্তমান মহাজোট সরকারের তিন মেয়াদে এখন পর্যন্ত ১৪টি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২টিতে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply