বিশ্বব্যাপী নার্সিং ও মিডওয়াইফারি স্বতন্ত্র পেশা হিসাবে স্বীকৃত এবং স্বাস্থ্য সেবার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নার্সিং সার্ভিস, শিক্ষা ও প্রশাসনের সকল কর্মকান্ড ও উন্নয়নে নার্সদেরই অবদান রাখতে হয়। রোগীর যথাযথ সেবা নিশ্চিত করা এবং সেবার উৎকর্ষ সাধন, বিজ্ঞান ভিত্তিক সেবা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নানান প্রতিবন্ধকতা, বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে বাংলাদেশের নার্সরাও সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে। প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, উচ্চ শিক্ষিত, দক্ষ এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যোগ্যদেরকে যথাসময়ে পদোন্নতি না দেয়া বা মূল্যায়ন না করার কারণে বাংলাদেশের নার্সিং ব্যবস্থাপনা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৈৗঁছাতে পারেনি। নার্সিং শিক্ষা ও সেবার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানাবিধ অবমূল্যায়ন, বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বতন্ত্র নার্সিং প্রশাসন “সেবা পরিদপ্তর” থেকে ২০১৬ সালে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে উন্নীত হলেও দীর্ঘ ০৮ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি, অর্গানোগ্রাম, স্ট্যান্ডার্ড সেট-আপ ও ক্যারিয়ার প্যাথ। শিক্ষার্থী নার্স মিডওয়াইফদের ডিগ্রী পাস কোর্স, গ্র্যাজুয়েট নার্সদের বিসিএস সহ অন্যান্য দাবী পূরণের কোন কার্যক্রম চোখে পরছেনা। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের দাবীসমূহ বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদানের ১৪ মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যবধি তা বাস্তবায়ন না করায় সর্বস্তরের নার্স ও মিডওয়াইফগণের মধ্যে হতাশা, অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। জনকল্যাণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি জনবান্ধব নার্সিং সেবা ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের আবশ্যিকতা অনুধাবন করতে না পারার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশার প্রতি যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেননি। অথচ এই নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশার উন্নয়ন করলে দেশের মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার পাশাপাশি বর্হিবিশ্বে চাহিদা থাকায় হতে পারতো রেমিটেন্স অর্জণের একটি বিশাল সেক্টর। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে যেমন অনেক ক্ষেত্রে জনগণ যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি বিদেশে রোগী যাওয়ার কারণে দেশ উল্টো রেমিটেন্স হারাচ্ছে। নার্সিং পেশার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও অর্জণের বিষয়সমূহ অনুধাবন করে এবং তৎকালীন সময়ে নার্সদের প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা এবং নার্সিং পেশার উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা পর্যবেক্ষণ করেই মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, ন্যায্যতা ও ন্যায়-নীতির প্রতীক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বতন্ত্র নার্সিং প্রশাসন “সেবা পরিদপ্তর” যা উন্নীত হয়ে বর্তমানে “নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর”। এই স্বতন্ত্র নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের প্রশাসনের মাধ্যমে নার্স- মিডওয়াইফরা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেও আজ জনবান্ধব পেশা হিসাবে বিগত জুলাই-২০২৪ ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, কোভিড-১৯ মহামারী, ডেঙ্গু মোকাবিলাসহ সকল সামাজিক, প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগে বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হয়েছে। জনকল্যাণমুখী নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সেবা ব্যবস্থাপনা, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রশাসন সৃষ্টির লক্ষ্যে নানান প্রতিবন্ধকতা ও বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিগত ৪৮ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে এগিয়ে চলা এ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে ভিন্ন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার খবর বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। যার ফলে স্বাস্থ্য সেক্টরে কর্মরত মোট জনবলের প্রায় অর্ধেক জনবল সম্বলিত নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত নার্স, মিডওয়াইফ ও নন-নার্স জনবলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিলক্ষিত হয়। অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার ০৮ বছর এবং বর্তমান সরকারের ০১ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হলেও নিয়োগবিধি, অর্গানোগ্রাম, স্ট্যান্ডার্ড সেট-আপ ও ক্যারিয়ার পাথ এবং জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠন সহ শিক্ষার্থী নার্স মিডওয়াইফদের ডিগ্রী পাস কোর্স, গ্র্যাজুয়েট নার্সদের বিসিএস সহ অন্যান্য দাবী-দাওয়া পূরণ না করে এ ধরণের জনস্বার্থ বিরোধী ও নার্স এবং মিডওয়াইফদের স্বকীয়তা, উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিরোধী অপচেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক, আপত্তিকর। উল্লেখ্য যে ইতোপূর্বেও যতবার এই স্বতন্ত্র নার্সিং প্রশাসনকে ধ্বংস করে একটি মহল নিজেদের মত করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে ততবারই সর্বস্তরের নার্সগণ তা প্রতিহত করেছে। বর্তমানেও অনুরুপ কর্মকান্ডকে শুধুমাত্র জনকল্যাণমুখী স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনা তথা জনবান্ধব নার্সিং ব্যবস্থাপনা সৃষ্টির চলমান কর্মকান্ড কে বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টা মনে করছে। আমরা জনস্বার্থ বিরোধী এই হীন অপচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে জুলাই-২৪ পরবর্তি নতুন বাংলাদেশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশাকে জনবান্ধব একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী পেশা হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে নিম্নলিখিত দাবী দাওয়া বাস্তবায়নের জন্য উপস্থাপন করছি-
জনবান্ধব নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নার্স-মিডওয়াইফদের দাবীসমূহ-
১. স্বতন্ত্র নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে ভিন্ন অধিদপ্তরের সাথে একীভূত করার অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে এবং জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠন করতে হবে।
২. অবিলম্বে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি, অর্গানোগ্রাম, স্ট্যান্ডার্ড সেট-আপ এবং ক্যারিয়ার প্যাথ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩. নার্সদের পরবর্তী উচ্চতর পদগুলোতে (৯ম হতে ৪র্থ গ্রেড) ভূতাপেক্ষভাবে পদ প্রমার্জনের মাধ্যমে পদোন্নতিসহ সুপারনিউমেরারী পদন্নোতি দিতে হবে।
8. অবিলম্বে নার্সিং সুপারভাইজার এবং নার্সিং ইন্সট্রাক্টর পদগুলো ৯ম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে।
৫. ডিপ্লোমা নার্স-মিডওয়াইফদের সনদকে স্নাতক (পাশ) সমমান দিতে হবে এবং সকল গ্রাজুয়েট নার্স-মিডওয়াইফদের জন্য প্রফেশনাল বিসিএস চালু করতে হবে।
৬. বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়োগ-বিধি ও মানসম্মত বেতন কাঠামো তৈরী করতে হবে এবং অপ্রশিক্ষিত ও নিবন্ধনবিহীন ভুয়া নার্স-মিডওয়াইফদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. নার্স-মিডওয়াইফদের ঝুঁকিভাতা প্রদানসহ নার্সদেন উপর জোরপূর্বক স্বৈরাচারী সরকারের চাপিয়ে দেয়া নার্সিং ইউনিফরম পরিবর্তন করতে হবে।
৮. শয্যা, রোগী ও চিকিৎসক অনুপাতে নার্স-মিডওয়াইফদের পদ সৃজন ও নিয়োগ দিতে হবে।
আমরা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের আওতাধীন সর্বস্তরের নার্স-মিডওয়াইফ ও কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জাতীয় সংগঠন “বাংলদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ)”, “বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটি (বিএমএস)” যৌথ ভাবে উপরোক্ত দাবীগুলো অতিস্বত্বর বাস্তবায়ন এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করার জনস্বার্থ ও নার্স-মিডওয়াইফ ও কর্মচারীদের স্বার্থ বিরোধী হীন অপচেষ্টা পরিহারের জোর দাবী জানাচ্ছি। যদি এর ব্যত্যয় হয় তবে অস্তিত্ব রক্ষায় সারাদেশব্যাপি কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা ও বাস্তবায়ন ছাড়া আমাদের বিকল্প থাকবেনা বলে পরিষ্কার অবস্থান ব্যক্ত করছি এবং এ বিষয়ে উদ্ভুত সকল পরিস্থিতির দায়ভার সংশ্লিষ্ট বিভাগ, প্রশাসন ও ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply