আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহ। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরাম ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সর্বস্তরে ইসলামি শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের সর্বস্থরের ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন এই ফোরাম। ইতোমধ্যে ইসলাম শিক্ষা নিয়ে সৃষ্ট জাতীয় সংকট কালে ফোরামের ভূমিকায় অনেকগুলো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ফোরামকে সম্মানিত উপস্থিতি সুসংগঠিত করা এবং শিক্ষা-প্রশিক্ষণের সর্বস্তরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার আন্দোলনে আপনাদের সর্বাত্মক সহোযোগিতা কামনা করছি।
আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশ। এই দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের ধর্ম ইসলাম। অন্যান্য ধর্মের নাগরিকগণও ধর্মপ্রাণ। সাধারণ শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কিন্তু রাষ্ট্রের নাগরিক ও নতুন প্রজন্মের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থায় শিক্ষার কোনো জরেই ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা “গুরুত্ব ও আবশ্যিকভাবে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা নেই। নাগরিকগণ ধর্মশিক্ষা নানা সোর্স থেকে শেখে। ফলে অশিক্ষা-কুশিক্ষা কুলংধারে আচ্ছন্ন হয়ে ধর্মান্ধতা ও উগ্রতা সৃষ্টি করে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ধর্ম ও নৈতিকতায় অজ্ঞ থেকে সমাজ এবং রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে অনৈতিকতা ও অবক্ষয়ের ছয়লাব ঘটায়। এই নৈতিক অবক্ষয় রোধ, ধর্মীয়-বিজ্ঞানমনষ্ক নৈতিক সমাজ ও রাষ্ট্র পরিগঠন, নৈতিকতায় উজ্জীবিত করতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সর্বস্তরে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা আবশ্যিকভাবেই কারিকুলাম ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত রাখা অত্যাবশ্যক। ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক ভাষা আরবি। এই ভাষা জানলে মুসলিম প্রজন্মের ধর্মীয় জ্ঞান অর্জিত হবে। তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশের জব মার্কেটে সহজে অংশ নিতে পারবে এবং উচ্চ রেমিটেন্স আর্ন করতে পারবে। বর্তমান বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষায় ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছে। জ্বর ভিত্তিক সমস্যাসমূহের বাস্তবচিত্র উল্লেখপূর্বক আমাদের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা হলো-
১.০ শিক্ষার প্রাথমিক স্তর
১.১ প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধর্মীয় শিক্ষা, ধর্মীয় বই এবং ধর্মীয় শিক্ষক নেই।
১.২ প্রাথমিকে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ইসলাম শিক্ষা বই আছে, কিন্তু তা মান সম্মত নয়।
১.৩ প্রাথমিক স্কার ধর্মীয় ভাষা আরবী পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা নেই।
১.৪ ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা ও জায়গা নেই।
১.৫ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ধর্মীয় বিষয়টি রাখা হয় নি।
১.৬ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বলান্ত উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাগণ ধর্মশিক্ষা বান্ধব নয়।
১.৭ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা দেশের বৃহত্তম নাগরিকের ধর্ম ও আদর্শের পরিপন্থী। ফলে বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসের মূল্য না দিয়ে ভিন্ন মত প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত। যেমন-সংগীত বিষয় না থাকলেও এ বিষয়ে ৬৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের গেজেট প্রকাশ করেছে।
১.০ দাবি
১.১ প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধর্মীয় শিক্ষা, ধর্মীয় বই প্রণয়ন করে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
১.২ প্রাথমিক তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ইসলাম শিক্ষার জন্য মানসম্মত বই প্রণয়ন করতে হবে।
১.৩ প্রাথমিকে উপযুক্ত (হাফেজ, কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার গ্রাজুয়েট) ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিতে হবে।
১.৪ প্রাথমিক স্তরে আরবী ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং এ জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
১.৫ ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য নামাজের জায়গা (অন্যদের জন্য উপযুক্ত ধর্ম চর্চার স্থান) ব্যবস্থা করতে হবে।
১.৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ‘ধর্মীয়-কালচারাল’ শিক্ষক পদ সৃষ্টি করে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
১.৭ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষাসহ সকল পঠন-পাঠনে ও পরীক্ষায় গুরুত্বসহ ধর্মীয় শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১.৮ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উপদেষ্টা এবং মহাপরিচালক ও সচিবসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে ধর্মবিশ্বাসী জাতীয় মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিতদের মধ্য থেকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। কেননা, প্রাথমিকের প্রায় ৩ কোটি শিশু প্রজন্মের জীবনবিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যায় না।
১.৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কালচারাল ও ধর্মশিক্ষক হিসেবে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন-যাঁদের ফাফিল-কামিল এবং কাওমিতে দাওরা ডিগ্রি আছে। তাঁদেরকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কেননা, ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ উচ্চশিক্ষিত। তাঁরা ফজর থেকে যোহর-আসর পর্যন্ত বিরাট সময় বসে থাকেন। ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ইমামতিকে ডিউটির আওতায় আনা যায়। এর ফলে ছাত্র ছাত্রীরা যোহর ও আসর নামাজ পড়তে পারবে। তাঁরা কোমলমতি শিশুদের আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, গান, গজল, দেশত্ববোধ, দেশপ্রেম ও শরীর চর্চা শেখাবেন এবং পরিশীলিত ও উন্নত জাতী গঠনে ভূমিকা রাখবেন।
১.১০ উল্লিখিত বিষয়াদি পূর্ণবিবেচনা করে সরকারকে নতুন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষক পদ সৃষ্টিপূর্বক পুনরায় গেজেট প্রদানের জন্য জোর দাবি করছি।
২.০ মাধ্যমিক স্বর (সমস্যা)
২.১ মাধ্যমিক স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা আছে। কিন্তু ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সামষ্টিক মূল্যায়নে (পরীক্ষায়) না রাখার কারণে বিষয়টি শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সকলের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতা এখনো চলমান রয়েছে। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি রাখা হয়নি।
২.২ ধর্মীয় শিক্ষকের উপযুক্ত/ নির্দিষ্ট পদ নেই।
২.৩ মাধ্যমিক পর্যায়ের ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক মানসম্মত নয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আরবী বিষয়টি অপশনাল (optional) রাখা হয়েছে।
২.৪ এসসিটিবি-তে অনেকগুলো ধর্ম বিষয়ক পদ ছিল। কিন্তু ঐ পদগুলোর বিপরীতে অন্য বিষয়ের লোকজন নিয়োগ দিয়ে চলছে।
২.৫ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাই হলো মৌলিক-ফান্ডামেন্টাল এডুকেশন। এই শিক্ষা নিয়ে বারবার গিনিপিকের মতো শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন ও পরিমার্জন চলতেই থাকে। কখনো এসবিএ (SBA), কখনো বহুনির্বাচনী অভীক্ষা (বৃত্ত ভরাট), কখনো সৃজনশীলের নামে শিক্ষাকে ম্যাচাকার করে দেওয়া হচ্ছে। এতে সার্টিফিকেটধারী এক অথর্ব ও অক্ষম প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে।
২.০ দাবি
২.১ মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক মানসম্মত করে প্রণয়ন করতে হবে। যথোপযুক্ত গুরুত্বসহ পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২.২ ধর্মীয় শিক্ষকের পদ নির্দিষ্ট করে ফাজিল, কামিল ও কওমী দাওরা গ্রাজুয়েটদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২.৩ এসসিটিবি-তে ধর্মীয় পদগুলোতে ইসলামিক স্কলার ও ব্যক্তিত্বদের নিয়োগ করতে হবে।
২.৪ হবে। এনসিসিসি-তে এবং অন্যান্য নীতি নির্ধারণি গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদে ইসলামি স্কলার ও ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্ত করে টেকসই কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন করতে।
২.৫ মধ্যপ্রাচ্যের জব মার্কেট পেতে এবং ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে আরবি ভাষা গুরুত্বসহ সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ বিষয় শিক্ষকদের পথ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিতে হবে।
২.৬ ধর্ম ও সংস্কৃতি চরার জন্য নামাজের জায়গা (অন্যদের জন্য উপযুক্ত বর্ম চার্চার স্থান) ব্যবস্থা করাতে হবে।
২.৭ স্বাধীনতা ও সার্বারীমত্ব সুরক্ষা এবং সুঠাম কর্মক্ষম জাতি পরিগঠনের লক্ষ্যে ‘সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ’ ৭ম শ্রেণি থেকে আবশ্যিক করতে হবে।
২.৮ মাধ্যমিকে ‘ও’ লেভেল ‘এ’ লেভেলের কারিকুলাম ও সিলেবাসের মতো অপরিবর্তীত দীর্ঘ মেয়াদি টেকসই মানসম্বন্বত কোর্স-কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। সৃজনশীশ ও বহুনির্বাচনী অরীক্ষা নামক অভিশাপ থেকে আগামী প্রজন্মকে মুক্ত করতে হবে।
৩.০ উচ্চমাধ্যমিক স্তর (সমস্যা)
৩.১ উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়াট না থাকায়। এ জ্বরের শিক্ষার্থীরা ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকে। তাদের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হয় না।
৩.২ ২০২৫- ২০২৬ শিক্ষাবর্ষেও ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি উন্নমাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে মানবিক শাখায় চতুর্থ বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান ও ব্যবাসায় শিক্ষা শাখায় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ইসলাম শিক্ষা না থাকায় বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অধ্যয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
৩.৩ উচ্চমাধ্যমিক সরকারি ও বেসরকারি সকল কলেজে বিগত ফ্যাসিস্টদের আমলে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি খুলতে দেওয়া হয় নি। এমনকি যে সকল কলেজে ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক অবসরে চলে গেছেন বা মারা গেছেন। সে সব কলেজে নতুন করে তাঁদের পদ পুরণ করা হয় নি। বরং বিষয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ডিখারুননেসা নুন কলেজে এমপিওভুক্ত পদ থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
৩.০ দাবি
৩.১ উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ‘ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা’ আইসিটির (ICT) মতো ১০০ নম্বরের একটি নতুন বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩.২ ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি উচ্চমাধ্যমিক একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে মানবিক শাখায় নৈর্বাচনিক এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পাঠ্যভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩.৩ উচ্চমাধ্যমিক সরকারি ও বেসরকারি সকল কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি খুলতে হবে এবং, শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে দ্রুত নিয়োগদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩.৪ উচ্চমাধ্যমিক স্তরে অনেক শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। অবিলম্বে সে সকল পদে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৩.৫ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা এবং সুঠাম কর্মক্ষম জাতি পরিগঠনের লক্ষ্যে ‘সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ’ নতুন একটি বিষয় এই স্করের শিক্ষায় আবশ্যিক করতে হবে। এজন্য সেনাবাহিনী থেকে প্রশিক্ষিত উপযুক্ত শিক্ষকের পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৪.০ উচ্চশিক্ষা স্তর (সমস্যা)
8.১ মাধ্যমিক স্তরের পরে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন শাখা, বিভাগ, ডিসিপ্লিন, সাবজেক্ট এবং প্রোগ্রাম তথা কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, মেডিকেল ও প্রযুক্তিগত সকল কোর্সের শিক্ষার্থীদের অ্যাকডেমিকভাবে (academically) কোর্স কারিকুলামে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার কোনো শব্দের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ নেই। ফলশ্রুতিতে তারা স্বতঃই সেক্যুলার ভাবধারার হয়ে গড়ে উঠে এবং কর্মক্ষেত্রে নীতিনৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম, কর্তব্যপারায়ণতার পরিবর্তে স্বেচ্ছাচারী ভোগবাদী ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।
8.২ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কলেজগুলোতে বিগত ফ্যাসিস্টরা “ইসলামিক স্টাডিজ” বিষয়টি খুলতে দেয় নি। এমনকি যে সকল কলেজে “ইসলামিক স্টাডিজ” বিভাগের শিক্ষক অবসরে চলে গেছেন বা মারা গেছেন। সে সব কলেজে নতুন করে তাঁদের পদ পূরণ করা হয় নি। বরং বিষয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
8.৩ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, প্যারা-মেডিকেল, কারিগরিসহ সকল বিশেষায়িত সরকারি ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে “ইসলামিক স্টাডিজ’ বা ধর্মীয় নৈতিকতা অধ্যয়ন ও পঠন-পাঠনের কোনো সুযোগ নাই। এমনকি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগও নাই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধর্মশিক্ষার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত।
8.8 স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ব্যতীত অন্য কোনো বিভাগে বা ডিসিপ্লিনে অর্থাৎ বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা- প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়টি নন-মেজর সাবজেক্ট হিসেবে ও অধ্যয়নের সুযোগ রাখা হয় নি।
8.০ দাবি
8.১ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয় ও বিভাগ খুলতে হবে।
৪.২ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অন্যান্য শাখা ও বিভাগে বিশেষ করে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা-প্রশাসন বিভাগের সকল ডিসিপ্লিনে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়টি নন-মেজর সাবজেক্ট হিসেবে সিলেবাসভুক্ত করতে হবে।
৪.৩ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, প্যারা-মেডিকেল, কারিগরিসহ সকল বিশেষায়িত সরকারি ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ খুলতে হবে।
৪.৪ সকল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ধর্মীয় নৈতিকতা অধ্যয়ন ও পঠন-পাঠনের জন্য সকল ডিসিপ্লিনে ১০০ নম্বরের ধর্মীয় নৈতিকতা একটি বিষয় সিলেবাসভুক্ত করতে হবে। যেমন-বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ (১০০ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঠিক অনুরূপ ১০০ নম্বরের ধর্মীয় নৈতিকতা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫.০ সাধারণ শিকা ও প্রশিক্ষণ (সমস্যা)
৫.১ প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ তথা বিসিএস, বিচারবিভাগ, চিকিৎসা বিভাগ, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীসহ কোনো ক্ষেত্রেই ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা নেই বা কোনো প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না। যার ফলশ্রুতিতে এসব বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও রাষ্ট্রের অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ স্বতঃই অমানবিক ও কর্তব্যপরায়ণতাহীন মানসিকতা নিয়ে কর্মপরিমণ্ডলে কর্মরত থাকেন। এজন্য তাঁদেরকে জনগণ ও রাষ্ট্রের সেবক ও রক্ষক না হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
৫.২ জব মার্কেট ও পেশা ভিত্তিক পরিকল্পনাহীন শিক্ষা ব্যবস্থার দরুণ লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি হচ্ছে।
৫.০ দাবি
৫.১ প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ তথা বিসিএস, বিচারবিভাগ, চিকিৎসা বিভাগ, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীসহ সকল প্রশিক্ষণে ন্যূনতম ১০০ নম্বরে “ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা” আবশ্যিক করতে হবে।
৫.২ মধ্যপ্রাচ্যের জব মার্কেট পেতে এবং ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে আরবি ভাষা গুরুত্বসহ সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫.৩ পেশাভিত্তিক রাষ্ট্রের জনশক্তিকে গঠন করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে বিষয় ও ডিসিপ্লিন প্রণয়ন ও চালু করতে হবে।
৫.৪ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা এবং সুঠাম কর্মক্ষম জাতি পরিগঠনের লক্ষ্যে ‘সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ’ একটি নতুন বিষয় সকল ভরের শিক্ষায় আবশ্যিক করতে হবে।
পরিশেষে, সরকারকে আমরা সবিনয়ে অনুরোধ করছি, উপরিউক্ত বিষয়াবলী অবিলম্বে বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এটাই জুলাই-২০২৪-এর গণঅভু্যুত্থানের চেতনা ও দাবি। জুলাই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বহুদাম দিয়ে কেনা আমাদের এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা এবং নতুন এই বাংলাদেশ। আশা করি ছাত্র-জনতার এই আকাঙ্ক্ষা। দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। আল্লাহ আমাদের সকলের সুমতি দিন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply