শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ। হজ ইসলামের ফরজ বা আবশ্যকীয় ইবাদত। আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজের জন্য নির্ধারিত সময়।
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে ও অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমতাবস্খায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে।
হজ পালনের জন্য বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরী, মিনা, আরাফাত, মুযদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন ও অবস্থান আবশ্যক। শারীরিক ও আর্থিকভাবে হজ পালনে সক্ষম হয়ে ওঠার অবস্থাকে ইস্তিতাহ বলা হয়। যে মুসলমান এই শর্ত পূরণ করে তাকে মুস্তি বলা হয়। হজ হল মুসলিম জনগণের সংহতি, আল্লাহর নিকটে তাদের আনুগত্যের প্রদর্শনী।
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে ও অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমতাবস্খায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে।
অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রূপই হয়ে যায়। আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন, শয়তান আরাফার দিন হতে অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না, কেননা ওই দিন আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
ওমরাহ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো الزيارة والقصد জিয়ারত বা সফর ও ইচ্ছা। শরিয়তের পরিভাষায় ওমরাহ বলা হয় নিয়ত করে ইহরামসহ কাবা শরিফের চারপাশ সাতবার তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার সাঈ করা ও মাথা মুণ্ডানোকে ওমরা বলে।
আফাকি তথা দূরবর্তী ওমরা সম্পাদনকারীর জন্য মদিনা মুনাওয়ারায় হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। ওমরা পালন গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। ওমরা পুরুষ ও নারী সবার জন্য প্রযোজ্য। ওমরা পালন করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এমন কোনো বিধান নেই।
ওমরাহ পালনের বিশেষ কোনো সময় নেই। তবে হজের নির্ধারিত বিশেষ সময়ে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন) ওমরা পালন করা বিধেয় নয়। এই পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় ওমরা পালন করা যায়। হজের সফরেও ওমরা করা যায়। একই সফরে একাধিক ওমরা করতে কোনো বাধা নেই।
হজ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত। হজ ও ওমরার মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে।
১. হজ মুসলমানদের জন্য একটি ফরজ ইবাদত। অন্যদিকে, ওমরাহ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো الزيارة والقصد জিয়ারত বা সফর ও ইচ্ছা। ওমরাহ ফরজ নয়।
২. প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাদের জীবনকালে হজ পালন করা বাধ্যতামূলক যদি তারা শারীরিকভাবে উপযুক্ত এবং আর্থিকভাবে এটি করতে সক্ষম হয়। ওমরাহ জীবনে একবার হলেও করা ফরজ নয়।
৩. হজ এক নির্দিষ্ট সময়ে করতে হয়। অন্যদিকে, ওমরা বছরের যেকোনো সময়ই করা যায়।
৪. ওমরার মধ্যে আরাফার ময়দান ও মুজদালিফায় অবস্থান, দুই ওয়াক্ত নামাজ একসঙ্গে আদায় করা ও খুতবার কোনো বিধান নেই। তাওয়াফে কুদুম ও তাওয়াফে বিদাও নেই। অন্যদিকে, ওই সব কাজ হজের মধ্যে রয়েছে। বরং করতেই হয়।
৫. ওমরার মধ্যে তাওয়াফ আরম্ভ করার সময় তালবিয়া পড়া মওকুফ করা হয়। অন্যদিকে, হজের মধ্যে জামরাতুল আকাবাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময় মওকুফ করা হয়।
৬. ওমরাহ নষ্ট হলে বা জানাবত অবস্থায় তওয়াফ করলে একটা ছাগল বা মেষ জবেহ করা যথেষ্ট। অন্যদিকে, হজে তা যথেষ্ট নয় বরং পরবর্তী বছর পুনরায় হজ সম্পন্ন করতে হয়।
সমাজে একটি ভুল কথা প্রচলিত রয়েছে। তিনবার ওমরাহ করলে আর হজ করতে হয় না। এটি একটি কঠিন মিথ্যা কথা। এমন কোনো বিধান ইসলামে নেই। হজ ফরজ বিধান। এর সঙ্গে ওমরাহকে কোনোভাবেই মিলানো যাবে না। যার আর্থিক সামর্থ্য থাকে, শারীরিক সুস্থতা থাকে তাকে অবশ্যই হজ আদায় করতে হবে। হজ ফরজ বিধান। একটি কবুল হজের প্রতিদান নিশ্চিত জান্নাত।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply