রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

৫৪৯ রানে ওলট-পালট আইপিএল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

ট্রাভিস হেডের ৩৯ বলে সেঞ্চুরি, হেনরিখ ক্লাসেন, এইডেন মার্করাম ও আব্দুল সামাদের ঝড় বয়ে গিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বোলারদের ওপর। যে ঝড়ে ওলট-পালট হয়েছে আইপিএল ও টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের একাধিক রেকর্ড। কারণ ২০ ওভারের খেলায় ২৮৭ রান স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলবে কেউ, এটা অনেকেরই ভাবনায় আসার কথা না। এই অবাস্তব ভাবনাকেও বাস্তবে রুপান্তরিত করেছে হায়দরাবাদ ।

টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি। প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ কাজে দারুণ ভাবে কাজে লাগালো হায়দরাবাদ। হেড, ক্লাসেনদের দাপুটে ব্যাটিংয়ের সুবাদে হায়দরাবাদ করল ৩ উইকেটে ২৮৭ রান। আইপিএলের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ১৯ দিনের মাথায় নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভেঙেছে হায়দরাবাদ। বেঙ্গালুরুর ২২ গজে আগ্রাসী মেজাজে শুরু করেন হায়দরাবাদের দুই ওপেনার। অভিষেক শর্মা ২২ বলে ৩৪ রান করে আউট হয়ে যান।

তিনি মারেন ২টি করে চার এবং ছয়। উইকেটের অন্য প্রান্তে লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন হেড। শতক পূরণ করেন ৩৯ বলে। শেষ পর্যন্ত ৯টি চার এবং ৮টি ছয়ের সাহায্যে তিনি করলেন ৪১ বলে ১০২ রান। তিন নম্বরে নামা ক্লাসেনও রেয়াত করলেন না প্রতিপক্ষ বোলারদের। তাঁর ৩১ বলে ৬৭ রানের ইনিংসে রয়েছে ২টি চার এবং ৭টি ছক্কা। এমনকি ১০৬ মিটার ৬ মেরে বল পাঠিয়েছেন মাঠের বাইরেও। পরে মার্করাম এবং সামাদও দলের রান তোলার গতি বজায় রাখলেন।

মার্করাম ১৭ বলে অপরাজিত ছিলেন ৩২ রানে। বেশি আগ্রাসী ছিলেন সামাদ। তিনি অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ৩৭ রান করে। ৪টি চার এবং ৩টি ছয় এসেছে তার ব্যাট থেকে। এই ব্যাটারদের ঝড়ের সুবাদে গত ২৭ মার্চ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ২৭৭ রান করেছিল প্যাট কামিন্সের দল। এদিন নিজেদের সেই রেকর্ড ভেঙে দিল তারা।

টসের সময় প্যাট কামিন্স বলেছিলেন, ‘২৪০ রানের উইকেট মনে হচ্ছে।’ অধিনায়কের সেই কথা সত্য প্রমাণ করতেই যেন শুরু থেকে তাণ্ডব চালালেন হেড। বেঙ্গালুরুর বোলারদের তুলাধুনা করে উপহার দিলেন সেঞ্চুরি। যার মধ্যে তিনি ছক্কায় হাঁকিয়েছেন ৮টি। ২০১৬ সালের আইপিএলে আরিসিবির হয়ে খেলেছিলেন হেড। সেবার ক্রিস গেইলের বদলি হিসেবে আইপিএল অভিষেক হয়েছিল এই অজির।

৮বছর পর এবার আরসিবি বিপক্ষেই আইপিএল শতক হাকালেন হেড, উদযাপন করলেন গেইলের স্টাইলে। ব্যাটের হ্যান্ডেলে হেলমেট ঝুলিয়ে! আইপিএলে দল হিসেবে সবচেয়ে ছক্কার রেকর্ডটিও এদিন নিজেদের দখলে নিয়েছে হায়দরাবাদ। পুরো দল মিলে ৬ মেরেছে মোট ২২টি। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল বেঙ্গালুরুর। পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ক্রিস গেইলের ১৭৫ ও আরসিবির ২৬৩ রান করার দিন দলটি ৬ মেরেছিল ২১টি।

স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল হায়দরাবাদ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নেপালের ৩১৪ রানের ধারেকাছে যেতে পারল না তারা। তবে এই সংস্করণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের কীর্তি গড়ল আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। যদিও ম্যাচের মাঝে ব্রডকাস্টারদের সাথে আলাপকালে হেড মজার ছলে জানিয়ে দেন, পরবর্তীবার হায়দরাবাদের লক্ষ্য থাকবে স্কোরবোর্ডে ৩০০ রান তোলার।

বেঙ্গালুরুর সফলতম বোলার লকি ফার্গুসন ৫২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। ৬৮ রান খরচ করে ১ উইকেট নিলেন রিস টপলি। তবে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে বেঙ্গালুরুই প্রথম কোন দল যাদের ৪ বোলার পঞ্চাশের বেশি রান দিয়েছে। পঞ্চাশের বেশি রান দেয়া বাকি দুজন হলেন বিজয়কুমার ও ইয়াশ দয়াল। হায়দরাবাদের ছুঁড়ে দেয়া ২৮৮ রানের লক্ষ্যে শুরুটা দারুণ করে বেঙ্গালুরু। পাওয়ার প্লেতে ডু প্লেসি ও কোহলি মিলে নেন ৭৯ রান। কিন্তু কোহলি ২২ বলে ৪০ রান করে বিদায় নিলেই ম্যাচে ফেরে হায়দরাবাদ।

খানিক পর তিনে নামা উইল জ্যাকসকেও বিদায় করে কামিন্সরা। তবে এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে ২৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন ডু প্লেসি। কিন্তু দলীয় রান ১০০ পার হওয়ার পরই আউট হন পাতিদার। সে সময় চলে ইনিংসের নবম ওভার। বেঙ্গালুরুর ইনিংস ১০ম ওভারে আসতে না আসতেই ডু প্লেসিও ফেরেন প্যাভিলিয়নে। প্যাট কামিন্সের বলে ক্লাসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৮ বলে ৬২ রান করে। একই ওভারে আরেকটি আঘাত হানেন সানরাইজার্স দলপতি। দলের ৫ ব্যাটারের বিদায়ে আরসিবি সেখান থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি।

বাকি ব্যাটাররা চেষ্টা চালালেও হায়দ্রাবাদের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে ডু প্লেসির দল। সে সময় লড়াই শুরু করেন মাহিপাল লমরোর ও দীনেশ কার্তিক। ২৩ বলে দুজন মিলে জুটি গড়েন ৫০ রানের। কিন্তু ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে এসে নিজের তৃতীয় উইকেট হিসেবে লমরোরকে বিদায় করেন কামিন্স। সঙ্গী হারালেও একাই লড়তে থাকেন কার্তিক। এক প্রান্তে লড়াই করে কার্তিক তুলে নেন ২৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি। মাইলফলকে পৌঁছে অবশ্য থামেননি এই ব্যাটার। একাই লড়তে থাকেন দলের পক্ষে। কিন্তু তার এই হাফ সেঞ্চুরি শুধু বেঙ্গালুরুর পরাজয়ের ব্যবধানটাই কমিয়েছে। তবে ১০৮ মিটার ৬ হাঁকিয়ে আইপিএলের এই আসরের সবচেয়ে বড় ছক্কা হাঁকানোর মালিক বনে যান কার্তিক।

বেঙ্গালুরুর জয়ের আশা শেষ হয়ে গেলেও কার্তিক হাঁটতে থাকেন ব্যক্তিগত মাইলফলকের দিকে। কিন্তু ১৯তম ওভারের শেষ বলে ৩৯ বলে ৮৩ রান করে থাঙ্গারাসু নাটারাজনকে উইকেট দিয়ে বসেন এই ভারতীয়। কার্তিকের বিদায়ে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রানের পুঁজি পায় ডু প্লেসির দল। ২৫ রানে ম্যাচ জিতে নেয় হায়দরাবাদ। কামিন্স বাহিনীর চলতি আসরে এটি চতুর্থ জয়। আর এই হারে আসরে ষষ্ঠ হারের স্বাদ পেল বেঙ্গালুরু।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS