পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার মিত্রদের সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং আগাম নির্বাচন আয়োজনের আইনি অধিকার আছে কিনা তা নিয়ে শুনানি শুরু করেছে। কারণ ইমরান খানের বিরোধীরা দাবি করেছেন যে ক্ষমতায় থাকার জন্য এটি ইমরান খানের একটি চক্রান্ত।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানের আইনজীবী ও তার মিত্র এবং বিরোধী- উভয় পক্ষের যুক্তি শুনানি শুরু করে। এরপর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত করে। অকস্মাৎ অধিবেশন মুলতবি করার কোনো তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি এবং কখন রায় আসবে তাও অস্পষ্ট।
রবিবার ইমরান খানের মিত্র এবং পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোট এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আইনসভা ভেঙে দিয়েছেন।
বিরোধীদের দাবি, অনাস্থা ভোট বাতিলের সাংবিধানিক ক্ষমতা ডেপুটি স্পিকারের নেই।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ আলি জাফরের মতে, সুপ্রিম কোর্টের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল, ডেপুটি স্পিকার সুরির অনাস্থা ভোট বাতিল করার সাংবিধানিক ক্ষমতা ছিল কিনা।
জাফর দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, আদালতকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এই বিষয়ে রায় দেয়ার ক্ষমতা ডেপুটি স্পিকারের আছে কিনা।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আদালতের রায়ে জানা যায় ডেপুটি স্পিকার তার ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে রায় দিয়েছেন, তাহলে পুনরায় সংসদ আহ্বান করা হবে এবং ইমরান খানের ওপর অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি আদালত ডেপুটি স্পিকারের সর্বশেষ রায় বহাল রাখে,তাহলে পাকিস্তানে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বিরোধী দল দাবি করে যে তাদের কাছে সংসদে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য পর্যাপ্ত ভোট ছিল। তারা জানায়, ৩৪২ আসনের বিধানসভায় তাদের ১৭২ ভোট রয়েছে। কারণ ইমরান খানের নিজের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা জাস্টিস পার্টির কিছু সদস্য এবং তার সরকারের জোটের অংশীদার মুত্তাহিদা কওমী মুভমেন্ট ইতোমধ্যে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছে।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে শাসন করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছে। বাকি সময়েও পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকে চালিত করেছে সেনাবাহিনী।
বর্তমানের সংকটের বিষয়ে সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া রবিবার মার্কিন সমর্থিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান- চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায়। কারণ তারা পাকিস্তানের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
রবিবার সুরি অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার পরে অধিবেশনে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। তিনি বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘শাসক পরিবর্তন করার জন্য ‘বিদেশি শক্তির’ সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগ করেন।
ইমরান খানও তাকে অপসারণ করার জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিক নীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন। কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।
ইমরান খান জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা থেকে তাকে অপসারণের জন্য করা ষড়যন্ত্রে ওয়াশিংটন তার বিরোধী পক্ষকে সাহায্য করছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস পাকিস্তান এবং ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন প্রচেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন, আমরা সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক নীতির শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরকে সমর্থন করি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে অন্য রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সমর্থন করি না; আমরা বৃহত্তর নীতি, আইনের শাসনের নীতি, ন্যায়বিচারকে সমর্থন করি।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply