সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন

অস্ট্রেলিয়ায় প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ফজলুল হক স্মরণে জীবনীপাঠ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

সালাম মাহমুদ
  • আপডেট : রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

সালাম মাহমুদ:  অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ (ট্রাব) অস্ট্রেলিয়া শাখা ও ফজলুল হক রিসার্চ সেন্টার অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগে প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ফজলুল হক এর প্রয়ান দিবসে তার স্মরণে জীবনীপাঠ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ট্রাব অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি, ভয়েস অব সিডনি সম্পাদক অর্ক হাসান এর সভাপতিত্বে ও ডায়াসপোরা শিশু-বিষয়ক সাংবাদিক কে এম ধ্রুব এর সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডকুমেন্টারি নির্মাতা তানজি তমা।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে আলোচনায় অংশ নেন বাচসাস এর প্রাক্তন সভাপতি ও বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুর রহমান, ট্রাব এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চ্যানেল আইয়ের এস এম নাসির, ট্রাব ইন্ডিয়া শাখার সভাপতি ও ফজলুল হক রিসার্চ সেন্টার এর প্রস্তাবিত সভাপতি ড. নটরাজ রায়, ট্রাব যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি, ট্রাব ইউরোপ শাখার সভাপতি আবু তাহের প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন সাংবাদিক আতাউর রহমান, জহির রায়হান স্মৃতি সংসদ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি তৌহিদ হাসান, এক্টিভিস্ট রেট্রো মুবিন, উদ্যোক্তা শাকিল শিকদার প্রমুখ। আলো ছড়িয়ে আড়ালে চলে যাওয়া এই মহান ব্যক্তির বিদেহী আত্মার প্রতি দোয়ার মাধ্যমে আয়োজন সমাপ্ত হয়।

প্রয়াত ফজলুল হক (মনি চৌধুরী) ছিলেন এক কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক।  প্রাচীন বাংলার উত্তর ও পশ্চিমাংশে অবস্থিত এক সমৃদ্ধ জনপদ ছিল পুণ্ড্রদেশ বা পুণ্ড্রবর্ধন। যার মাটি ও মানুষ ছিল সোনার মত খাটি। সেই জনপদের আরেক নাম উত্তর বঙ্গ। উত্তর বঙ্গ জনপদের  আধুনিক বাংলায় জন্ম নেন এই খাটি মানুষ। তাঁর নাম ফজলুল হক ওরফে মনি চৌধুরী। শিল্প সংস্কৃতির অঙ্গনে এই নাম এখন সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। তিনি যখন সিনেমা পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন  তখনকার দিনে চলচ্চিত্র পত্রিকার সম্পাদক হওয়া এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেন পরিচয় দেওয়াটা গল্পের মতোই শোনাতো। বৃক্ষ থেকেই যেমন ফল হয় তেমনি পুণ্ড্রবর্ধন থেকে মনি চৌধুরী বা ফজলুল হক ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার হন। গৌড়বঙ্গের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত এই গুরুত্বপূর্ণ জনপদ পুণ্ড্রদেশ যার রাজধানী ছিল মহাস্থানগড় (বর্তমান বগুড়া জেলায়)। সেই জনপদে জন্ম নেওয়া এই প্রতিভাধর সত্তা যার আলোর রেখা বঙ্গজয়ী হয়। মৌর্য, গুপ্ত, পালসহ বিভিন্ন শাসনামলে এই অঞ্চল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল। তার ঐতিহ্য পথে তিনি সমৃদ্ধ করেন গোটা বঙ্গ সংস্কৃতিকে।

তিনি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন এ উত্তর বঙ্গ থেকে। ঢাকা তখনো সাংস্কৃতিক বলয় হয়ে উঠেনি। কলকাতার পরেই উত্তর বঙ্গ যার আওতায় কুচবিহার ও জলপাইগুড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। যার মাটি ও মানুষের প্রতিভূ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর সম্পাদিত সিনেমা বিষয়ক পত্রিকার মান ও বিষয়বস্তু আজকের দিনের প্রযুক্তিগত আঙ্গিকের গোড়ায় দিকটাতে কত শক্তিশালী ছিল যা গবেষকদের রীতিমত বিস্মিত করে। তাই তাঁকে ( ফজলুল হক) বৃহত্তর বঙ্গে একজন পথিকৃত চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে নমস্য ধরা হয়। তিনি শিশু চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও পথপ্রদর্শক ছিলেন।

তাঁর নির্মিত প্রেসিডেন্ট  (চৎবংরফবহঃ) চলচ্চিত্রটি বৃহত্তর বঙ্গের প্রথম শিশু চলচ্চিত্র হিসেবে চিহ্নিত। চলচ্চিত্রটি বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে শুট হয়েছিল, যাতে দেশ সম্পর্কে শিশুদের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রাধান্য পেয়েছিল ।

তাঁর অবদানের প্রতি সম্মান হিসেবে ফজলুল হক স্মৃতি পদক ( ঋধুষঁষ ঐধয়ঁব গবসড়ৎরধষ অধিৎফ) প্রতিষ্ঠিত হয়; এটি প্রতি বছর চিত্রজগত এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় অবদান রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও স্মারক অডিটোরিয়াম তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। আমরা জানি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (ইঋউঈ) প্রধান অডিটোরিয়ামগুলোর একটিকে তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে ।

পারিবারিক জীবন ও উত্তরাধিকার: তাঁর সহধর্মিণী: প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক রাবেয়া খাতুন; তিনি বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ৫০টিরও বেশি উপন্যাস এবং ৪০০+ ছোটগল্পের রচয়িতা তিনি। তাঁর নামে বাংলা একাডেমি থেকে কথাসাহিত্যে স্মারক সাহিত্য সম্মাননা প্রদান করা হয় ।

সন্তান:তাঁর পুত্র কন্যা বাংলাদেশের শিল্পসাহিত্য ও সাংবাদিকতায় সুপরিচিত মুখ। তার পুত্র ফরিদুর রেজা সাগর চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব। শিশু সাহিত্যে তিনি বাংলা একাডেমি ও একুশে পুরস্কার প্রাপ্ত। তিনি বাবার নির্মিত শিশু- চলচ্চিত্র প্রেসিডেন্ট ( চৎবংরফবহঃ)–এ ছোট বেলায় মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন। আজ তিনি বাংলাদেশের একজন গর্বিত ও প্রভাবশালী চলচ্চিত্র প্রযোজক, গল্পকার ও ছোটো কাকু চরিত্রের জনক। তিনি এ পর্যন্ত অনেক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। বানিয়েছেন ছোটে পর্দা ও বড়ো পর্দার পরিচালক, অভিনেতা ও অভিনেত্রী। প্রয়াত কিংবদন্তি ফজলুল হকের রক্তের উত্তরাধীকার বলে কথা ফজলুল হক (২৬ মে ১৯২২-২৬ অক্টোবর ২০০৩) একজন বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও সাংবাদিক ছিলেন।

ফজলুল হক, জন্ম: ২৬ মে ১৯৩০ খ্রিষ্ঠাব্দ বগুড়া, ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান বাংলাদেশ অংশে । মৃত্যু: ২৬ অক্টোবর ২০০৩ (বয়স ৭৩) কলকাতায়। পেশায় সাংবাদিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক। তাঁর কর্মজীবন ১৯৫০-২০০৩।

দাম্পত্য সঙ্গী কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন:
সন্তান ১.কেকা ফেরদৌসী ২.ফরিদুর রেজা সাগর,৩ ফরহাদুর রেজা প্রবাল,৪. ফারহানা মাহমুদ কাকলী
তাঁর পিতা-মাতা যথাক্রমে এফ মাহমুদ ( পিতা) ও এফ জাহান (মাতা)।

সারসংক্ষেপ: ফজলুল হক ছিলেন চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও শিশু চলচ্চিত্র–এর একজন পথিকৃত, যিনি সিমেমা (ঈরহবসধ) ম্যাগাজিনের মাধ্যমে সাংবাদিকতার একটি ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁর নির্মিত প্রেসিডেন্ট( চৎবংরফবহঃ) একটি প্রগতিশীল শিশু চলচ্চিত্র। তিনি  প্রেসিডেন্ট চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ দাগ রেখেছেন। তাঁর পরিবারেও তাঁর সংস্কৃতি ও শিল্প-প্রবণতা উত্তর প্রজন্মে বহন করছে। আগেই বলেছি- তাঁর স্ত্রী ঔপন্যাসিক রাবেয়া খাতুন এবং পুত্র ফরিদুর রেজা সাগর, যিনি নিজে আজকের দিনে প্রভাবশালী হিসেবে কাজ করছেন।

তাঁর সম্পাদিত “সাপ্তাহিক সিনেমা” পত্রিকা তখনকার দিনে ছিল সৃজনশীলতায় বৈশিষ্ট্য। পত্রিকাটি বিনোদন ও চলচ্চিত্র বিষয়ক ম্যাগাজিন ছিল। বর্তমান সময়ে এটি বাংলাদেশের সাপ্তাহিক বিনোদন বা সিনেমা বিষয়ক পত্রিকার ইতিহাসেবসবচেয়ে আধুনিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর সাংবাদিকতায় ফটোগ্রাফ, প্রিন্ট লেআউট, কম্পোজিশন, আর্টওয়ার্ক—সকল বিষয়ের গভীর জ্ঞান ছিল এবং তিনি নিজেই প্রথম ছাপা কপি হাতে নিতেন।

আলো ছড়িয়ে আড়ালে চলে যাওয়া এই মহান ব্যক্তি আজ বাঙালি সংস্কৃতির নির্মাতাদের একজন। তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা অবিরাম।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS