নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আজ মঙ্গলবার ০৩/০৬/২০২৫ সকাল ১০ টায় জোটের অস্থায়ী কার্যালয় সেগুনবাগিচায় পর্যালোচনা বৈঠক করে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক ও সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)’র সভাপতি কমরেড হারুন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কমরেড খান মোঃ নুরে আলম, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডাঃ সামছুল আলম, কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড আমরুল হক প্রামানিক, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)’র মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান ও জোটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সভায় আলোচকেরা বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখে দুর্নীতি ও আর্থিক খাতে লুটপাট কে উৎসাহিত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বাজেট ২৪’র গণ-অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ন বিপরীত। অধঃপতিত পুঁজিবাজার ও শিল্পখাতে বিনিয়োগ সুরক্ষা নিয়ে কোন ব্যবস্থা না রাখায় শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে না, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না, বেকারত্ব বাড়বে। এতে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পরবে। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটির বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঘাটতি, ঘাটতি পূরণের জন্য মাথাপিছু ঋণের বোঝা বাড়বে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব উচ্চাভিলাষী। প্রত্যক্ষ করের চাইতে পরোক্ষ করের দিকে জোর বেশি দেয়ায় সরাসরি এর প্রভাব পরবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের উপর। এখনই জনজীবন ত্রাহিত্রাহি অবস্থা পরোক্ষ করের কারণে আরো দুর্বিষহ করে তুলবে।
‘ঋণ করে ঋণ শোধ’ করার যে নীতি পতিত স্বৈরাচারের আমলে গড়ে উঠেছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটেও তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ মুহূর্তে সরকারের ঘাড়ে চাপা ঋণের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা। এমন বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ঋণের বোঝা আরো বাড়বে। বাজেটে মুল্যস্ফীতি বিগত দিন ১০ শতাংশ থেকে ৬.৫ শতাংশে নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা থাকলেও, কিভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা সম্ভব সে বিষয়ে কোন লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়নি। কোভিড-সৃষ্ট দুর্যোগে পর্যুদস্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর বাদ দিলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২৫ বছরের মধ্যে এবারই সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মূল কারণ কৃষি খাত। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে কৃষি খাতকে উৎসাহিত করার কোন পদক্ষেপ এবারের বাজেটেও নাই। ব্যাংক ধ্বংসের মূল কারণ খেলাপি ঋণ, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বর্তমানে মূলধনের ৩০ ভাগ। খেলাপি ঋণ আদায় কিংবা নিরুৎসাহিত করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় নাই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করলেন, সেটিও বড় ব্যয়ের বাজেট নয়, বড় বড় প্রকল্পের কথাও তিনি বলেননি। কিন্তু এই বাজেট মানুষকে কতটা স্বস্তি দেবে সেই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি মানুষ যে আরও দারিদ্র্য হচ্ছে, কাজ হারাচ্ছে, আয় কমছে—তা থেকে উত্তরণ ঘটানোর মতো পরিকল্পনাও তিনি দেননি। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ঝুঁকির মুখে থেকেই গেলো। সামগ্রিক ভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা খাতওয়ারী বাজেট বাড়ানো-কমানো গতানুগতিক বিগত স্বৈরাচারের দেখানো পথেই হেঁটেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত এ বাজেটের শিরোনাম দেয় হয় ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’। সুযোগ ছিল শিরোনামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণার। পুরনো ছক ও রীতি ঝেড়ে ফেলে বাস্তবতার পথে হাঁটার। কিন্তু ড. সালেহ উদ্দিন সে পথে না হেঁটে গতানুগতিক ছকেই বাজেট ঘোষণা করেছেন। অধিকাংশ রাজস্ব আয় অনুন্নয়নশীল খাতে খরচ হয়ে যাবে। উন্নয়নশীল খাতে বাজেট বরাদ্দ নাই বললেই চলে। ফলে অতীতের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটও অবাস্তবায়িতই থেকে যাবে।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ নাই। এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে সরকার নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কোন ভাবেই কাটবে না। বাজেট বাস্তবায়ন অর্থনীতির বেহাল দশা থেকে মুক্তির উপায় দেশের রাজনৈতিক অচলায়তন কাটাতে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply