মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন

২৪ গণঅভ্যুত্থান জন-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের সংঘবদ্ধ অপশক্তি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাতিল কর : গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ৮ জুলাই ২০২৫ইং মঙ্গলবার, সকাল ১১ টায় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য-এর অস্থায়ী কার্যালয়, ২৭/১১/১ তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় “ ২৪ গণ-অভ্যুত্থানের জন আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের সংঘবদ্ধ অপশক্তি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাতিলের দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সাংবাদিক সম্মেলন” অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড হারুন চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসডিপি)’র আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)’র মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান। উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডাঃ সামছুল আলম, বাংলাদেশের সাম্যমাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খান মোঃ নুরে আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য আজাদ হোসেন হৃদয়, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) যুগ্ম মহাসচিব মোঃ আমানতউল্লা আমান সাংগঠনিক সম্পাদক রেজা খান, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড আমরুল হক প্রামানিক।

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য নেতৃবৃন্দ বলেন,  ৫২ এর ভাষা ৬৯, ৯০, ২৪ গণঅভ্যুত্থান সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সর্বোপরি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। ২৪ গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা গণ-নিপীড়নের এহেন অপরাধ নাই যা করে নাই। হামলা মামলা গুম খুন করেই ক্ষান্ত হয় নাই রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। আর্থিক খাতে ভয়াবহ লুটপাট অর্থ পাচার এমন পর্যায় গিয়েছে রাষ্ট্রের পুঁজিটাও পাচার করে দিয়েছে। দেশের সবচেয়ে নিরাপদ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকেও চুরি হয়েছে। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জোট গঠনের দিন থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সকল অন্যায়ের প্রতিবাদে রাজপথে সোচ্চার ছিলো। ২০২৩ সালের ৩ মার্চ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রেজিমের পতন না ঘটিয়ে রাজপথ দখলে রাখার অঙ্গীকার করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সহ স্বৈরাচার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। রক্তাক্ত জুলাই এযাবৎকালের সবচেয়ে  সফল (একটা মারলে একটাই মরে)  গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ২০২৪ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে রেজিমের অবসান ঘটে। ছাত্র শিক্ষক শ্রমজীবি সকল শ্রেনী পেশার মানুষের বিশাল ত্যাগে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ। স্বৈরাচার মুক্ত পরিবেশে জন আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিক ভাবেই আশাতীত ভাবে বেড়ে যায়। সকল প্রকার অন্যায় অপরাধ দুর্নীতি মুক্ত একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের ব্রত তৈরী হয়। যেখানে ধর্ম বর্ণ জাতি আদিবাসী বাঙ্গালী  ভাষা লিঙ্গ পরিচয়ে নয় সবাই দেশের নাগরিক পরিচয়ে সমতার ভিত্তিতে বসবাস করবে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। ৮ আগস্ট ২০২৪ বহুল কাঙ্ক্ষিত নোবেল বিজয়ী ড.  ইউনুস প্রধাণ উপদেষ্টার শপথ গ্রহণ করে ও একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে। দেশের সবাই আকন্ঠ সমর্থন করে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করে। ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসর ব্যতিত সকল রাজনৈতিক দল সবধরনের সহযোগিতার অঙ্গীকার করে। ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ কমিশন গুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে ড. ইউনুস কে সভাপতি ও ড. আলী রিয়াজ কে সহসভাপতি অপর কমিশনের প্রধান কে সদস্য করে সাত সদস্যের  জাতীয় ঐকমত্য গঠিত হয়। রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এই মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জোটগত ভাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কে সকল ধরনের সহযোগিতা করে। প্রথমে মতামত দেয়, ছয়টি কমিশন পুস্তক আকারে মতামত প্রকাশ করে। প্রকাশিত পুস্তক আমরা সংগ্রহ করি। পরবর্তীতে পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিশন ছাড়া পাঁচটি কমিশনের স্প্রেডসিট প্রদান করে, ১৬৬ টি প্রস্তাবনা সহ। আমরা ১১৬ টিতে ঐকমত্য ১৮ টিতে আংশিক ঐকমত্য ৩২ টিতে ভিন্নমত সহ স্প্রেডসিট জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রিয়াজের নিকট সশরীরে প্রদান করি। ২১ মে ২০২৫ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, দীর্ঘ আলোচনার পর ১৩৪ টিতে একমত ৬ টিতে আংশিক ও ২৬ টিতে ভিন্নমত পোষণ করে। কয়েকটি প্রস্তাবনা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের  সহসভাপতি ড. আলী রিয়াজ ও অন্য সদস্যরা বাড়াবাড়ি ধরনের চাপাচাপি করে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সংবিধানের মূলভিত্তি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, ৫,৬, ৭ অনুচ্ছেদ বাতিল ও জাতীয় সংবিধান কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে।  তবে কোন ধরনের তিক্ততা ছাড়াই সৌহার্দ পূর্ণ পরিবেশে আলোচনা শেষ হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে আমাদের অবস্থান আমরা স্পষ্ট করি, বাংলাদেশ সংবিধানের মূলভিত্তি বিশেষ করে সমাজতন্ত্র ছাড়া বৈষম্য দুর করার বিকল্প নাই দৃঢ় ভাবে ঘোষণা করি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী কাজ জাতির সামনে তুলে ধরা ৩৩ রাজনৈতিক দল কে কোন প্রস্তাবনায় একমত আংশিক ও ভিন্নমত পোষণ করেছে। দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে কোন দল কোন সংস্কার চেয়েছে, কোন সংস্কার চায়নি, কি সে তাদের তাদের মঙ্গল  কোন দল তাদের মঙ্গল চায় সেই দল কে তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

তাঁরা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কে আমরা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেই রাজনৈতিক দলের মতামত পেয়ে গেছেন, জাতির সম্মুখে প্রকাশ করে দেন।  এখন আর সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করার সুযোগ নাই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা দেখতে পেলাম স্বৈরাচার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে অগ্রনী ভুমিকা পালন করা জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য কে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ ধাপে আলোচনা চালিয়ে সময়ক্ষেপণ করেই চলেছে।  সংস্থার সংস্কার খেলা বাদ দিয়ে ঐকমত্য  ঐকমত্য খেলায়  মেতে উঠেছে। নিত্যনতুন ইস্যু তৈরী করে জাতিকে মোটা দাগে বিভক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব কে নানাভাবে ট্যাগ লাগিয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যে ভয়াবহ বিভাজনে বিভাজিত করতে সক্ষম হয়েছে। সুক্ষ্ম ভাবে বিরাজনীতিকরণ করে একটা অনির্বাচিত অপশক্তি কে অনন্তকাল ক্ষমতায় রাখার  এই ষড়যন্ত্রের পুরোটাই হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে।

গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণের দৃষ্টি সংস্কার বিচার নির্বাচনের দিকে রেখে দেশে সকল ক্ষেত্রে অচলায়তন না কাটিয়ে সংকট কে আরো গভীরে নিয়ে গেছে। আর্থিক খাত বিনিয়োগ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। ক্ষমতাসীনদের আশকারা পেয়ে সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি সারাবিশ্বে ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিশেষ করে সম্প্রতি মালয়েশিয়া ৩৬ বাংলাদেশী গ্রেফতার, ইসলামি জঙ্গি আইএস এর সাথে তাদের সম্পৃক্ততা সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখতিয়ার ছাড়াই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি মানবিক করিডর ও বন্দর ইজারা দেওয়া। সম্প্রতি নন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নন ডিসক্লোযার এগ্রিমেন্ট, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আইএমএফ বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন হলে অদুর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ পরিনতি বয়ে আনবে।

২৪ গণঅভ্যুত্থানের জন আকাঙ্ক্ষা চাপা পরে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ‘মেটিকুলাস রেজিম চেঞ্জ’ এর নিচে। আর এই সকল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে অন্তর্বর্তীকালীনন সরকারের আড়ালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের দাবী, দ্রুত রাজনৈতিক দলের মতামত প্রকাশ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাতিল কর। ২০২৫ ইং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর কর।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS