নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের উদ্যোগে ২৫ মে ২০২৫ রোববার, সকাল ১০:৩০ মিনিটে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল আলম মিলনায়তনে “স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় রাজনৈতিক দলের করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভা” অনুষ্ঠিত হয়
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক ও সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)’র সভাপতি কমরেড হারুন চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডাঃ সামছুল আলম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)’র মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড খান মোঃ নুরে আলম, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড আমরুল হক প্রামানিক, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দাল (পিডিপি)’র যুগ্ম মহাসচিব মোঃ আমানতউল্লা আমান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। রাষ্ট্রে একটি গভীর শূন্যতা সৃষ্টি হলে রাষ্টপতি সংবিধানের ১০৬ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে ৮ই আগস্ট ২০২৪ ড. ইউনুস কে প্রধান উপদেষ্টার শপথ পাঠ করিয়ে একটি জরুরী আপদকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে। সতের বছরের দুঃশাসন রক্তাক্ত জুলাই গণহত্যার পর যে জন আকাঙ্ক্ষা তৈরী হয় তার সাথে বিগত প্রায় দশমাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। একদিকে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের বিরতিহীন ষড়যন্ত্র অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশির ভাগ উপদেষ্টাদের অযোগ্যতা দেশকে ক্রমশ অবনতির দিকে ধাবিত করছে। সময়ের সাথে সাথে ক্ষমতা কে উপভোগ করার মানসিকতা অনেক উপদেষ্টা ও ক্ষমতার কাছাকাছি অবস্থানকারিদের ভিতর পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকাালীন সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ ছিলো ভেঙ্গে পরা রাষ্ট্র কাঠামোর মেরামত করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। দুর্নীতি, অর্থপাচার, বাজার সিন্ডিকেট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের আক্ষরিক অর্থে বিচার শুরু করা। এর কোনটাই আশানুরূপ দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য প্রথম মাসে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করার কথা থাকলেও দশ মাস পরেও তা প্রকাশ না করায় জনমনে স্বাভাবিক সন্দেহ ও সংশয় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পরিকল্পিত ভাবে মীমাংসিত বহু বিষয় নতুন নতুন বিতর্ক তৈরী করে ক্ষমতা কে দীর্ঘায়িত করার পাঁয়তারা করছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, এখন কেন আমরা ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় রাজনৈতিক দলের করনীয়’ এমন একটি টপিকের উপর আলোচনা করছি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গত বুধবার ২১ শে মে ২০২৫ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক আইনবিষয়ক কিছু উদ্যোগ মৌলিক স্বাধীনতাগুলো ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন সপ্তাহের বিক্ষোভের পর, যাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের আগে দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো ফিরিয়ে আনা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নতুন সরকার বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক এসব পদক্ষেপ হতাশাজনক। তারও আগে ২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৫ সোমবার আন্তর্জাতিক ৬ সংগঠন ও জোটের বিবৃতি, প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ও ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে বিশিষ্ট লেখক ও সম্পাদকদের আন্তর্জাতিক জোট পেন ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে। এই জোটসহ বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছে অ্যাকসেস নাও, আর্টিকেল নাইন্টিন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
তাঁরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব ছিলো দ্রুত মৌলিক সংস্কার শেষ করে নির্বাচন আয়োজন করা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে এমন এমন কাজ করছে বা করার চেষ্টা করছে যা দেশকে গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সেন্টমার্টিন নিয়ে রহস্যময় আচরণ জনমনে ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে। এরই মাঝে প্রতিবেশী রাষ্ট্র গৃহযুদ্ধ কবলিত মায়নমার সীমান্তে মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা ছাড়াই একতরফা ভাবে করতে চাচ্ছে। জাতীয় ঐক্য মত ছাড়া এগুলো করার এখতিয়ার তাদের না থকলেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের প্রধান চরম স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে রাজনৈতিক দল কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বানোয়াট লাগামহীন কথা বার্তা গণমাধ্যমে বলেই চলেছে।
তাঁরা আরো বলেন, এমতাবস্থায় আজকে আলোচ্য বিষয়টির গভীরতা অপরিহার্য। এখন প্রধান উপদেষ্টার অভিমান করে পদত্যাগের কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি বিভাজনের কথা বলছেন। বিভাজন করলো কে?
বিভাজন তৈরি করা হয়েছে ক্ষমতাসীনদের ভিতর থেকে। রাজপথে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য কে বিভক্ত করে পরস্পরের প্রতিপক্ষ বানানোর পুরো অপকৌশল চালানো হয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে। পদত্যাগ পদত্যাগ নাটক বন্ধ কর। গুজব গুঞ্জন ছড়ানো বন্ধ কর। সংস্কার সংস্কার করে কালক্ষেপণ করার আর সুযোগ নাই। রাষ্ট্রের অচলায়তন কাটাতে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিকল্প নাই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় রক্তাক্ত জুলাই ২৪ গণ-অভ্যুত্থান থেকে অর্জিত নৈতিক শক্তি ব্যহত হওয়া। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের রাজপথে সকল রাজনৈতিক দলের শতভাগ সমর্থন দিয়েছে যে শিক্ষার্থীদের, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে শিক্ষার্থীদের গণ-অভ্যুত্থানের সকল ক্রেডিড দেওয়ার পরও। কৌশলে শিক্ষার্থীদের আলাদা করে রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য বাস যোগ্য মানবিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাজনৈতিক নেতারা জীবনের সবটা উজাড় করে দিয়েছে। তরুণ শিক্ষার্থী যারা আগামী দিনে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিবে তাদের দিয়ে অপমান করা হচ্ছে। সবকিছুর পিছনে আছে দীর্ঘদিনের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রাষ্ট্র কে বিরাজনীতিকরন করা। যাতে দেশি-বিদেশি অপশক্তি লুটেপুটে খেতে পারে।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য মনে করে দেশের ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা এবং নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে বাধ্য করায় আবারো রাজপথে ইস্পাত দৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply