শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ১১:০৫ অপরাহ্ন

জানুয়ারী মাসে ৬৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭৭ জন নিহত- যাত্রী কল্যাণ সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিদায়ী জানুয়ারী মাসে ৬৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭৭ জন নিহত, ১২৭১ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ৫৭ টি দুর্ঘটনায় ৫৯ জন নিহত, ২৩ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৬ টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত, ০৯ জন আহত এবং ০৫ জন নিখোঁজ হওয়ার খবর সংবাদপত্রে মিলেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এই সময়ে ২৮৯ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩০১ জন নিহত ও ২৩৯ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৪৩.৮৫ শতাংশ, নিহতের ৪৪.৪৬ শতাংশ ও আহতের ১৮.৮০ শতাংশ। এছাড়া ১৫৬ বাস দুর্ঘটনায় ১৫৯ ও আহত ৪৫২ আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ২৩.৬৭ শতাংশ, নিহতের ২৩.৪৯ শতাংশ ও আহতের ৩৫.৫৬ শতাংশ। এবং ১৬৩ ব্যাটারিচালিত-ইজিবাই-নসিমন-অটোরিকশা-মাহিন্দ্রা দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত ও ৩৩৬ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ২৪.৭৩ শতাংশ, নিহতের ২০.৫৩ শতাংশ ও আহতের ২৬.৪৩ শতাংশ।

আজ ১০ ফেব্রুয়ারী সোমবার সংগঠনের এক প্রেস বার্তায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

দেশের বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য ৯৬টি জাতীয়, আঞ্চলিক, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে ধারাবাহিকভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায়, বিদায়ী জানুয়ারী মাসে সর্বমোট সড়ক, রেল ও নৌপথে ৭৩২ টি দুর্ঘটনায় ৭৫৪ জন নিহত এবং ১৩০৩ জন আহত হয়েছে। এই মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ঢাকা বিভাগে, সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ময়মনসিংহ বিভাগে।

এই মাসে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত- ১৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৩৮২ জন চালক, ২৩৮ জন পথচারী, ১৮৮ জন শ্রমিক, ১৫১ জন শিক্ষার্থী, ১৭ জন শিক্ষক, ১৭১ জন নারী, ২১ জন শিশু, ০৮ জন সাংবাদিক, ০৩ জন চিকিৎসক, ১২ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং ৪১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে সড়কে ০৪ জন পুলিশ সদস্য, ০১ জন আনসার সদস্য, ০২ জন বিজিবি সদস্য, ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০২ জন সাংবাদিক, ১১৯ জন নারী, ১২ জন শিশু, ৮৬ জন শিক্ষার্থী, ১৩ জন শিক্ষক, ৩১১ জন চালক, ৪৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ০৩ জন চিকিৎসক, ২১৯ জন পথচারী ও ১২ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিহত হয়েছে।

এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ১০৩২টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৬.৫৭ শতাংশ বাস, ২৩.৮৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৫.৪২ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৪.৯৪ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৩১.২৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৭.৯২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ইজিবাইক-নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দুর্ঘটনা ভয়াবহ বাড়লেও এসব সংবাদ গণমাধ্যমে কম আসছে বলে প্রকৃত চিত্র তুলে আনা যাচ্ছে না।

সড়কে দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১০.৩৫ শতাংশ ভোরে (৪.০০-৬.০০), ২৬.৬৯ শতাংশ সকালে (৬.০০-১২.০০), ১৫.৫৩ শতাংশ দুপুরে (১২.০০-৩.৩০), ৮.১৬ শতাংশ বিকালে (৩.৩০-৫.৩০), ১৭.৫২ শতাংশ সন্ধ্যায় (৫.৩০-৭.০০), ১৯.৫২ শতাংশ দিবাগত রাতে (৭.০০-১২.০০), এবং ২.১৯ শতাংশ মধ্যরাতে (১২.০০-৪.০০) সংগঠিত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ০.৬৩ শতাংশ (০০-১০) বছর, ২৩.২৫ শতাংশ (১১-২০) বছর, ৩১.৬২ শতাংশ (২১-৩০) বছর, ১৩.৬৩ শতাংশ (৩১-৪০) বছর, ১৩.৫ শতাংশ (৪১-৫০) বছর, ৯ শতাংশ (৫১-৬০) বছর এবং ৮.৩৭ শতাংশ (৬১-১০০) বছর বয়সী ব্যাক্তি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪১.৬০ শতাংশ গাড়ি চাপা, ৩৮.১৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩.৩৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৬.১৬ শতাংশ বিবিধ কারনে এবং ০.৬৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩৭.৮০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮.৭৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮.০৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংগঠিত হয়েছে। এছাড়াও দেশে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৬৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.০৪ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, ০.৬৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণসমূহ :
১। বেপরোয়া গতি।
২। বিপদজনক অভারটেকিং।
৩। সড়কের নির্মাণ ত্রুটি।
৪। ফিটনেসবিহীন যানবাহন।
৫। চালক, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা।
৬। চালকের অদক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতা।
৭। পরিবহন চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব।
৮। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার।
৯। মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো।
১০। অরক্ষিত রেলক্রসিং।
১১। রাস্তার উপর হাট-বাজার, ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা।
১২। ট্রাফিক আইন প্রয়োগে দুর্নীতি।
১৩। ট্রাফিক আইন প্রয়োগে দুর্বলতা।
১৪। ট্রাফিক আইন অমান্য করা।
১৫। রোড মার্কিং না থাকা।
১৬। সড়কে চাঁদাবাজি।
১৭। চালকের নিয়োগ ও কর্মঘন্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা।
১৮। সড়কে আলোকসজ্জা না থাকা।
১৯। রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উচু না থাকা।  
২০। সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর দ্বায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহি না থাকা।
২১। দেশব্যাপী নিরাপদ, আধুনিক ও স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারনে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ভয়াবহভাবে বাড়ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা :
১. দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অর্šÍভুক্ত করা।
২. দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা।  
৩. সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্ধ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা।
৪. সড়ক নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করা।
৫. দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং অংকন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৬. গণপরিবহন চালকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭. সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্টা করা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা।
৮. গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।
৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ৬ মাস বৃদ্ধি করা।
১০. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া।
১১. ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য  ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমী গড়ে তোলা।
১২. সড়কের মিডিয়ানে উল্টো পথের আলো এবং পথচারীর পারাপার রোধে মহাসড়কের রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উচু করা।
১৩. গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকদের সাথে ভুক্তভোগীদের পক্ষে যাত্রী সাধারনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS