নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আজ ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ কমাতে ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙ্গার দাবিতে বাংলাদেশ পোলট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ) এর সংবাদ সম্মেলন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তন সেগুনবাগিচা ঢাকা প্রথমেই বিপিএ এর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহ সকল কে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
একটি দেশ তখনই উন্নয়নশীল হয় যখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নতি ঘটে দেশের অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, রেমিটেন্স যোদ্ধা ও রপ্তানি খাত কিন্তু এরাই অবহেলিত সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হয় । বৈষম্য দূর করে অবহেলিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
আপনারা অবগত আছেন যে বাংলাদেশ পোলট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ) দীর্ঘদিন ধরে প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিদের নিয়ে কাজ করে আসছে , ডিম মুরগির বাজারে স্বস্তি রাখার চেষ্টা করেছি কর্পোরেট গ্রুপের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলেছি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ ও ভোক্তা অধিদপ্তরের যৌথ বাজার মনিটরিং করা কে আমরা সাধুবাদ জানাই তবে বাজারেও তার প্রভাপ পরেছে । ভারতে ১ কেজি ফিডের দাম ৪০ টাকা থেকে
৫০ টাকা, ১ টি মুরগির বাচ্চার দাম ২৫ টাকা থেকে ৩৫টাকা্, ১ টি ডিমের উৎপাদন খরচ ৫ টাকা, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ৭৬ থেকে ৮৬ টাকা্, কিন্তু বর্তমানে ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ প্রতিবেশী দেশের তুলনায় আমাদের দেশে দ্বিগুণ যেমন ১ কেজি ফিডের দাম ৬০থেকে ৭২ টাকা, ১টি মুরগির বাচ্চার দাম ৬০ থেকে ১০০টাকা, ডিমের উৎপাদন খরচ ১০.২৯ টাকা, ১কেজি ব্রয়লার মুরগীর উৎপাদন খরচ ১৫৫ থেকে ১৭০ টাকা, ১কেজি সোনালি মুরগির উৎপাদন খরচ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। এখন বর্তমানে উৎপাদন খরচ এর বিপরীতে প্রতি কেজি মুরগিতে ৪০থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত লস গুনতে হচ্ছে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রান্তিক খামারিদের খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।ডিম মুরগির বাজার অস্থিরতার জন্য দায় সিন্ডিকেট করে বছরে ফিড ও মুরগির বাচ্চায় ৫৯২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা আমাদের দেশে বছরে ফিডের চাহিদা ১ কোটি ২০ লক্ষ টন সেখানে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৮০ থেকে ৮৭ লক্ষ টন আমরা যদি সর্বনিম্ন পার কেজিতে ৫ টাকা বেশি ধরে হিসাব করি তাহলে পার টনে পাঁচ হাজার টাকা হয় এবং ৮০ লক্ষ টনে বছরে প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে ফিড সিন্ডিকেট আর এর খেসারত দিচ্ছে ভোক্তা ও প্রান্তিক খামারীরা ।
দুঃখজনক বিষয় হলো যেখানে সরকারের সকল দপ্তর দাম কমানোর চেষ্টা করছে অন্যদিকে সব সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উল্টো সিন্ডিকেটের পক্ষে সাফাই গাইছেন । ২০২২ সালে যখন ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয় যেহেতু ফিড উৎপাদনে যে ইনগ্রেডিয়েন্টস গুলো প্রয়জন হয় ৬৫% আমদানি নির্ভর হলেও তারা সকল জায়গায় বক্তব্য বলেন ৯৫% আমদানি করেন এর কারন খুজে দেখুন আমদানির নামে এখানে চলে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও ভুট্টার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাই আমাদের দেশসহ প্রতিবেশী সকল দেশেই ফিডের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় । বেশি দাম বাড়ে ভারতে বাজারে ৬৩ থেকে ৬৮ রুপি পার কেজি তখন বাংলাদেশে ফিডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ থেকে ৬২ টাকা পার কেজি ঠিক তখনই ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ফিডের চাহিদা বেড়ে যায় তখন বাংলাদেশের ফিড মিল গুলো বাংলাদেশের বাজারে ফিডের সংকট তৈরি করে এবং চোরাই পথে ভারতের ফিড রপ্তানি করেছেন । ২০২৩ সালের অক্টোবর ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের বক্তব্য উঠে আসে ট্রেড এন্ড টেরিফ কমিশনের মিটিং এ । ২০২২ সালে মে মাস থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ভুট্টা সয়া মিলের দাম কমতে থাকে ঠিক তখনই ভারতের বাজারে ফিডের দাম কমতে থাকে এবং ২০২৩ সালে ফিডের দাম কমে দাঁড়ায় ৪১ থেকে ৪৩ রুপি এবং ২০২৪ সালে ভারতের বাজারে আবারও দাম কমে ৩৬ থেকে ৪০
রুপি । আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় ফিড উৎপাদনের ইংগ্রেডিয়েন্স সকল ধরনের পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে কোন কারন ছাড়াই ফিডের দাম বাড়তেই থাকে । পোল্ট্রি ফিডের বাড়তি দামের কারণ খুঁজতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কে সুপারিশ করেন পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন খরচের নিয়ে একটি স্টাডি করার জন্য । সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে
ট্রেড এন্ড টেরিফ কমিশন ফিড মিল, হ্যাচারি, প্রান্তিক খামারি,সকল এসোসিয়েশনের সাথে দফায় দফায় মিটিং হয় পোল্ট্রি ফিড এর উপরে সমীক্ষা চালায় সেখানে দেখা যায় যে বাংলাদেশের বাজারে পোল্ট্রি ফিডে পার কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে এবং সেই মিটিংয়ে বিপিএ এর পক্ষ থেকে আমিও উপস্থিত ছিলাম ফিডের দাম কমেনি এর কারণ যতগুলো ফিড কোম্পানি আছে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাড়তি দাম কেই ধরে রেখেছেন যার কারণে সরকার ডিম মুরগির বাজারে হস্তক্ষেপ করতে চাইলেই প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে লসের সম্মুখীন হচ্ছেন।
আমাদের দেশে সপ্তাহে আড়াই থেকে তিন কোটি সকল ধরনের মুরগির বাচ্চার চাহিদা রয়েছে বর্তমানে সপ্তাহে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দুই কোটি মুরগির বাচ্চা যা চাহিদার থেকে এক কোটি কম । মুরগির বাচ্চা আমদানি বন্ধ থাকায় হ্যাচারি গুলো মুরগির বাচ্চার সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছে । যেই মুরগির বাচ্চা গত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ২০ থেকে ৩০ টাকার ভিতরে বিক্রয় করে ছিল ২০২৩ সেপ্টেম্বর মাসে এসে সেই দাম দাঁড়ায় ৫০ টাকা তখন আমরা প্রতিবাদ করি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিউজ আসে এরপরে তড়িঘড়ি করে ২৮ থেকে ৩০ টাকা খরচের মুরগির বাচ্চা কেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা য় একটি মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫২ থেকে ৫৭ টাকা । কিন্তু সেই দামে মুরগির বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছিল না সেই বাচ্চা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায় এবং ২০২৪ সালে ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান দিয়ে দাবি করেন । প্রতি মুরগির বাচ্চায় ১০ টাকা দাম বাড়াতে হবে এবং তাদের দাবি পুরন করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নতুন করে আবার ও ১০ টাকা দাম বাড়িয়ে দেয় সর্বশেষ মুরগির বাচ্চার দাম বেঁধে দেয়া হয় সরকারিভাবে ৬৩ থেকে ৭০ টাকা সেই বাচ্চা এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাচ্চার সংকট রেখে বিক্রয় করা হয় ৭০ থেকে ১২০ টাকা তারমানে আমরা যদি গড়ে একটি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরে হিসাব করি তবে মাসে ৮ কোটি বাচ্চা উৎপাদন হয় ৮ কোটি বাচ্চা ৩০ টাকা বেশি নিলে প্রতি মাসে ২৪০ কোটি টাকা হয় এবং সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত ৮ মাস একটানা মুরগির বাচ্চয় সিন্ডিকেট করে মুরগির বাচ্চা উতপাদনকারী সকল হ্যাচারী গুলো প্রায় ১৯২০ টাকা মুরগির বাচ্চায় অতিরিক্ত মুনাফা করেছেন মে মাস থেকে মুরগির বাচ্চার দাম একটু একটু করে কমতে থাকে কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে কি এমন হলো যে এখন মুরগির বাচ্চা তারা বিক্রি করতেছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকার ভিতরে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সবসময় কর্পোরেট গ্রুপদের অ্যাসোসিয়েশন গুলো কে নিয়ে মিটিং করে দাম নির্ধারণ করে দেন এবং প্রান্তিক বাণিজ্যিক খামার গুলোকে অ্যাড্রেস করা হয় না কোন মিটিং দাওাতকরা হয় না।শেয়ার বাজারের মতো মুরগির বাচ্চায় হাজার হাজার কোটি টাকা সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্র। সরকারের সকল দপ্তর সিন্ডিকেটের বিপক্ষে থাকলেও প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর ডি এল এস কর্পোরেট সিন্ডিকেটর পক্ষ নিয়ে সাফাই গান তাদের সিন্ডিকেট বলা যাবে না তারা বাবসায়ি।
গত ১৫ বছরে প্রান্তিক খামারীদের দিকে নজর না দেয়ায় চার থেকে পাঁচ টা কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার খামার থেকে এক লক্ষ খামার বন্ধ হয়ে গেছে । বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানক চার থেকে পাঁচ টা কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে এক লক্ষ খামার বন্ধ হয়ে গেছে বর্তমানে রানিং আছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার খামার তাও মাঝে মাঝে বন্ধ হচ্ছে আবার চালু হচ্ছে । একদিকে একজন প্রান্তিক খামারি এক হাজার দুই হাজার মুরগি পালন করে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে পালিয়ে আছেন চেকের মামলায় অন্যদিকে কর্পোরেট গ্রুপগুলো সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পোল্ট্রি ফিড মুরগির বাচ্চা ও বাজার সিন্ডিকেট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন প্রত্যেকটা কোম্পানির ২০ টা ৩০ টা করে কোম্পানি তাদের সকল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান করছি ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচের ৭৫% পোল্ট্রি ফিডে খরচ করতে হয় তাই ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি রাখতে পোল্ট্রি ফিড মিল ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি ও এসোসিয়েশন ঔষধ কোম্পানি গুল সহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা আমদানির অনুমোদন থাকতে হবে এবং কর্পোরেট গ্রুপ ও ঔষধ ভ্যাকসিন কোম্পানি গুলতে অভিযান চালিয়ে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা ও ঔষধ ভ্যাকসিনের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে । কর্পোরেট গ্রুপ গুলো ফিড ও মুরগির বাচ্চা ১০০% উৎপাদন করে এবং বাজারের ডিম ও মুরগির চাহিদার মাত্র ১৫% থেকে ২০% মুরগি ডিম উৎপাদন করে তাদের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তারা মাঝে মাঝে দাম অনেকটা কমিয়ে দেয় যাতে প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় । কর্পোরেট গ্রুপ গুলো ফিড ও মুরগির বাচ্চা ১০০% উৎপাদন করে তাই করবে । কোম্পানির কন্ট্রাক্ট ফার্মিংও তাদের নিজস্ব ডিম মুরগি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে যাতে চাহিদার মাত্র ১৫% থেকে ২০% ডিম মুরগি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে । পোল্ট্রি ফিড এবং মুরগির বাচ্চা, ঔষধ ভ্যাকসিন দাম কমিয়ে আনলেই ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ কমে আসবে ভোক্তারাও ন্যায্য মূল্য কিনতে পারবে প্রান্তিক খামার গুলো লাভবান হবে এবং ডিম মুরগির বাজারে সিন্ডিকেট থাকবে না বন্ধ খামার গুলো উৎপাদনে ফিরে আসবে।
প্রান্তিক উৎপাদক যখন লাভবান হবে তখন নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে নতুন নতুন খামার হবে এবং ডিম মুরগির উৎপাদন বাড়বে কখনোই ডিম মুরগির সংকট দেখা দিবে না । বেকারত্ব দূর হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে চাকরির পিছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ বাড়বে।
সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার , সহ সভাপতি বাপ্পি কুমার দে , সাধারন সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সকল জেলা উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক ডিম মুরগি উৎপাদন কারী প্রান্তিক খামারি উপস্থিত থাকবেন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply