বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৬ অপরাহ্ন

৬ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন ২৫ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪

চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ২৫.৮৮ শতাংশ। এর মধ্যে রাজস্ব বাজেট বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে ৩১.৮ শতাংশ। আর উন্নয়ন বাজেটের বাস্তবায়ন হয়েছে ১৫.৭ শতাংশ। বাজেটের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম আদায়ের কারণে এমনটা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছয় মাসের বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের অর্থবছরে বছরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বড় ঘাটতি থাকায় ২০২৪ অর্থবছরের বাজেট আয় ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা শুরুতেই অনেক বেড়ে যায়। ২০২৩ অর্থবছরে মূল বাজেটের বিপরীতে বছর শেষে বাস্তবে ব্যয় হয় ৯০ শতাংশেরও কম।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট প্রকৃত পরিচালন ব্যয় ছিল ২০২৪ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটের ৩১.৮ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সুদ প্রদান, শিক্ষা, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিষয়, পাবলিক অর্ডার অ্যান্ড সেফটি এবং কৃষিতে ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।  অন্যদিকে হাউজিং ও জেনারেল পাবলিক সার্ভিসেসের মতো খাতগুলোর পরিচালন ব্যয় তুলনামূলক কম ছিল।

২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রশাসন খাতের ব্যয় বৃদ্ধি করা হয় এবং অর্থবছর ২০২৩-এর প্রকৃত ব্যয়ের তুলনায় অন্যান্য সমস্ত বিভাগের বরাদ্দ হ্রাস করা হয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সমস্ত বিভাগের মধ্যে, সুদ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যয় সর্বোচ্চ ছিল এবং সুদ পরিশোধের প্রকৃত ব্যয়ের ক্ষেত্রেও এ খাতের অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ সুদ পরিশোধে যায় ৩৩ শতাংশ, সাধারণ পাবলিক সার্ভিস ১৬ শতাংশ, শিক্ষা ১৫ শতাংশ, প্রতিরক্ষা ৮ শতাংশ, পাবলিক অর্ডার অ্যান্ড সেফটি ৭ শতাংশ এবং কৃষি ও এসএসডব্লিউ (উভয়) খাতে ৬ শতাংশ করে ব্যয় হয়। বিস্তৃত খাত-ভিত্তিক ও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসের পাশাপাশি, পরিচালন ব্যয়কে অর্থনৈতিক গোষ্ঠীতেও বিভাজন করা হয়েছে। এই শ্রেণিবিভাগের মধ্যে রয়েছে, বেতন ও ভাতা, পণ্য ও পরিষেবা, দেশি ও বিদেশি সুদ পরিশোধ, ভর্তুকি ও বর্তমান স্থানাস্তর, ব্লক বরাদ্দ, সম্পদ ও কাজের অধিগ্রহণ, শেয়ার ও ইকুইটিতে বিনিয়োগ, বৈদেশিক আর্থিক সম্পদ এবং অপারেটিং বাজেট থেকে অর্থায়নকৃত কর্মসূচি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পরিচালন ব্যয় হয় মোট বাজেটের ৩১.৮ শতাংশ। সুদ প্রদান ৫৩ শতাংশ এবং বেতন ও ভাতার ৩৮ শতাংশ মতো। নির্দিষ্ট কিছু বিভাগে ব্যয়ের হার সামগ্রিক ব্যবহারের হারকে ছাড়িয়ে গেছে।

বিবেচ্য ৬ মাসে প্রকৃত উন্নয়ন ব্যয় হয়েছে অর্থবছরের মোট উন্নয়ন বাজেটের ১৫.৭৩ শতাংশ। এ সময়ে রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় মিলে মোট বাজেট খরচ হয় এক লাখ ৯৪ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা, যা একই অর্থবছরে উভয় খাতে মোট বাজেট বরাদ্দের ২৫.৮৮ শতাংশ।

উন্নয়ন ব্যয়কে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের মোট বরাদ্দ ১৩টি বিস্তৃত সেক্টরের অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রকৃত ব্যয় মোট উন্নয়ন বাজেটের ১৫.৭৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রকৃত ব্যয় ছিলো সংশোধিত বাজেটের প্রায় ১৪.১৮ শতাংশ ছিল। মূল বাজেটের সাথে তুলনা করা হলে এটি আরও বেশি ছিল।

এই সময়ে বরাদ্দকৃত মোট উন্নয়ন বাজেটের তুলনায় বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিষয় ৩৯.৫৮ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ২৪.৮২ শতাংশ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, জমি, পানি সম্পদ ও খাদ্য ২৪.৩২ শতাংশ, আবাসন ২২.৯৯ শতাংশ, এলজিআরডি ২২.৪৫ শতাংশ এবং শিল্প, পাট, বস্ত্র, বাণিজ্য, শ্রম ও বৈদেশিক ২০.৯২ শতাংশ খাতে ব্যয় করা হয়েছে। সাধারণ পাবলিক সার্ভিস, স্বাস্থ্য, এবং পরিবহন ও যোগাযোগের মতো বড় খাতে গড় বরাদ্দের তুলনায় কম ব্যয় হয়েছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট উন্নয়ন ব্যয়ের সর্বাধিক অংশ সামাজিক অবকাঠামোতে ৪৪.৬ শতাংশ এবং তারপরে ভৌত অবকাঠামো ৩৪.৪ শতাংশ খরচ হয়েছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের ৬ মাসে সারা বছরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৩৭.৩ শতাংশ রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়। এই সময়ে যে রাজস্ব আদায় হয়েছে তার ৮৪.৯ শতাংশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডভুক্ত (এনবিআর) কর খাত থেকে এসেছে। এনবিআরের মোট কর আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৩৬.৮ শতাংশ।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এই লক্ষ্যমাত্রা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের তুলনায় ১৪.৭২ শতাংশ এবং মূল বাজেটের তুলনায় ১৫.৫৩ শতাংশ বেশি।

২০২৩ অর্থবছরে মোট রাজস্ব সংগ্রহ ছিল জিডিপির ৮.১৬ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৮৪.৭ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে মোট রাজস্ব সংগ্রহ পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই অর্জন ৩৭.৩ শতাংশ।

২০২৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব জিডিপির ১০ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এটি আগের বছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের তুলনায় প্রায় ১৫.৫ শতাংশ বেশি এবং ২০২৩ অর্থবছরের সংগৃহীত প্রকৃত রাজস্বের চেয়ে ৩৬.৪ শতাংশ বেশি।

সরকারের রাজস্বের একটি বড় অংশ আসে এনবিআর উৎস থেকে (২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৪.৯ শতাংশ)। বিবেচ্য ৬ মাসে এনবিআর এবং নন-এনবিআর কর রাজস্বের বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১১.৭ শতাংশ এবং ঋণাত্মক ২.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এদিকে কর বহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কর এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব খাতে ৬ মাসে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার অর্জন হয়েছে যথাক্রমে ৩৬.০ এবং ৪৮.৬ শতাংশ। ২০২৩ অর্থবছরে প্রকৃত কর রাজস্ব আদায় ছিল জিডিপির ৭.৩ শতাংশ। আর ২০২৪ অর্থবছরের জন্য কর রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হল জিডিপির ৯ শতাংশ। এটি অর্থবছর ২০২৩-এর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৫.৯৮ শতাংশ বেশি এবং একই সময়ের প্রকৃত সংগ্রহের চেয়ে ৩৭.৩ শতাংশ বেশি।

চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এনবিআর এর কর রাজস্বের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পরোক্ষ কর থেকে এসেছে। এনবিআরের সংগৃহীত মোট করের মধ্যে ৪০.৬৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে, ৩১.৮৭ শতাংশ আয়কর থেকে, ১৪.২১ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে, ১১.৯৩ শতাংশ আমদানি শুল্ক থেকে, বাকিটা অন্যান্য উৎস থেকে।

২০২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর নাগাদ সামগ্রিক ভারসাম্য (অনুদান ছাড়া) জিডিপির ০.১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা একটি নেতিবাচক চিত্র। ২০২৩ অর্থবছরে প্রকৃত বাজেট ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) জিডিপির শতাংশ হিসাবে ছিল ৪.৬১ শতাংশ। অনুদানসহ তা ছিল জিডিপির ৪.৫৫ শতাংশ। 

অন্যদিকে অর্থবছর ২০২৪ এর জন্য বাজেট ঘাটতি (অনুদান ছাড়া) জিডিপির ৫.২৩ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। অনুদানসহ ঘাটতি জিডিপির ৫.১৫ শতাংশ হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS