চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আয়কর থেকে রাজস্ব আয়ে অব্যাহত বাড়ছে ঘাটতির পরিমাণ। জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এ খাত থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩১ হাজার ২৫৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮০২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে এনবিআরের আয়কর উইংয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, অর্থবছরের প্রথম দিকে সবসময়ই কম রাজস্ব আয় হয়। শেষের তিন-চার মাসে আদায় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। এছাড়া আয়কর সেবা মাস উপলক্ষে চলতি মাসে রিটার্ন জমার পরিমাণ এবং আয়কর রাজস্ব আয় বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আয়কর থেকে রাজস্ব আয় বাড়ার কথা। এ সময় অনেক প্রার্থী তাদের আয়কর জমা দেন।’ ঘাটতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা যেভাবে নির্ধারণ করেছে, তাতেই গলদ রয়েছে। যার জন্য ঘাটতি থাকছে রাজস্ব আয়ে।’
জানা গেছে, আয়কর থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে সম্প্রতি স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব আয়ের কৌশল নিয়েছে এনবিআর। ওই কৌশল অনুযায়ী, ভূমি রেজিস্ট্রেশন থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা, ভ্রমণ কর খাত থেকে ৫০০ কোটি, টোব্যাকো কর থেকে ৩০০ কোটি, পরিবেশ সারচার্জ থেকে ৫০০ কোটি, করের পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে ২৫০ কোটি, কার্বোনেটেড বেভারেজ থেকে ১ হাজার কোটি ও বকেয়া কর আয়ের মাধ্যমে ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা রয়েছে আয়কর বিভাগের।
তবে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকলেও ভূমি রেজিস্ট্রেশন এবং কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর করহার কমিয়েছে এনবিআর। এছাড়া বেশকিছু এসআরও জারি করে আরো কিছু খাতের ওপর থেকে করহার কমানো হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে কর অব্যাহতিও। এ বিষয়টি আয়কর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের। এর মধ্যে আয়কর খাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। স্থানীয় পর্যায়ে মূসক (ভ্যাট) থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং আমদানি ও রফতানি পর্যায়ের রাজস্ব থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করসেবা মাসের উদ্বোধনীতে রাজস্ব আহরণ কমার আশঙ্কা প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমও। তিনি বলেন, ‘দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হলে অবশ্যই রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব এবং এ খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।’
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply