ইংরেজি ডেড সি শব্দের বাংলা মৃত সাগর। নামেই যেন অশুভের আভাস রয়েছে। বাস্তবেও কি তাই? জর্ডান নদীর এই শাখা হ্রদটিকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই। নামে মৃত সাগর হলেও এ সাগরে ডুবে কেউ মারা যান না। এমনকি সাঁতার না জানলেও এই সাগরের পানিতে আপনি ভেসে থাকতে পারবেন! কারণ হয়তো অনেকেরই অজানা।
মৃত সাগরে সমুদ্রের উচ্চ লবণাক্ততা রয়েছে। যার ফলে এখানে জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। এ কারণেই জলাধারটি ‘মৃত সাগর’ বা ডেড সি বলে পরিচিতি পায়।
এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত জলের প্রাকৃতিক আধার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২০ মিটার গভীরে অবস্থিত এটি বিশ্বের সবচেয়ে নিচু অঞ্চল। এর লবণাক্ততা শতকরা ৩০ ভাগ। সমুদ্রের জলের চেয়ে এর লবণাক্ততা ৮.৬ গুণ বেশি।
মজার ব্যাপার হলো, এ সমুদ্রে উদ্ভিদ বা প্রাণী না থাকলেও এখানে বিভিন্ন ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া হরহামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ সাগরের উৎপত্তি হয় প্রায় ২০ লাখ বছর আগে।
ওই সময় জর্ডান নদী, ভূমধ্যসাগর এবং ওয়াদি আরাবাহ অঞ্চল লোহিত সাগরের পানি বারবার প্লাবিত হত। এর ফলে একটি সংকীর্ণ উপসাগরের সৃষ্টি হয়। এটি আবার জেজরিল উপত্যকায় একটি সরু সংযোগের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
প্রাকৃতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, কালক্রমে পূর্ব উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে। ফলে মহাসাগরের প্লাবনে এই অঞ্চলে সৃষ্ট উপসাগরটি কালক্রমে হ্রদে পরিণত হয়।
ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই অঞ্চলের বাসিন্দারা নানা সমকামিতায় লিপ্ত ছিল। এমনকি তারা নবী লুত (আঃ)-এর দ্বীনের দাওয়াতও অস্বীকার করে। পরবর্তীতে তাদের পাপের ফলশ্রুতিতে জিবরায়েল ফেরেশতা ডেড সি’র আশপাশ এলাকার মাটিতে প্রবেশ করে সম্পূর্ণ এলাকাটি শূন্যে তুলে ধরে উপরকে নীচে এবং নীচকে উপরে তুলে সজোরে ফেলে দেন। যার ফলে সৃষ্টি হয় মৃত সাগরের। মৃত সাগর সম্পর্কে খ্রিষ্টানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে বলা হয়েছে, মৃত সাগর সমুদ্রের রাজা ডেভিডের আশ্রয়স্থল।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত সাগর গুরুত্ব পাওয়ায় বিজ্ঞানীদের মাঝে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার কৌতূহল তৈরি হয়। শুরু হয় গবেষণা। গবেষণা শেষে গবেষকরা জানান, মহাসাগরের জল এবং মৃত সাগরের জলে মিশে থাকা খনিজ উপাদানগুলোর মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে।
গবেষকরা আরও আবিষ্কার করেন, মৃত সাগরের জলে মিশে থাকা লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড , ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড , ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। এর লবণাক্ততা শতকরা ৩০% । ফলে পানির ঘনত্ব ১.২৪ কিলোগ্রাম / লিটার। জলে এ বিশেষ রাসায়নিক মিশ্রণের কারণেই ম্যাজিকের মতো যে কেউ মৃত সাগরের জলে ভেসে থাকতে পারে।
শুধু গবেষকদের জন্যই নয়, মৃত সাগর অঞ্চলটি চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষণাস্থলও হয়ে উঠেছে। অনেকের বিশ্বাস, মৃত সাগরের কাদা বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে সহায়ক।
যেমন হ্রদের জলে খনিজ দ্রব্যাদির বিপুল উপস্থিতি এবং বাতাসে এলার্জি উৎপাদক পদার্থ, পরাগরেণু, উচ্চ ভূ-মণ্ডলীয় চাপ, সৌর বিকিরণে অতি বেগুনি উপাদানের কম উপস্থিতি, উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ এ সবই শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। এই অঞ্চলে অতি বেগুনি রশ্মির স্বল্পতা থাকায় সান বাথের জন্য আদর্শ জায়গা বলে মনে করেন অনেক গবেষক।
শুধু গবেষকদের কাছেই নয়, পর্যটকদের কাছেও মৃত সাগরের আকর্ষণ অনেক বেশি। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা মৃত সাগরে ভেসে থাকতে ভালোবাসেন বলে রহস্যে ঘেরা মৃত সাগর ভ্রমণের জন্যও বেশ জনপ্রিয়।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply