শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য ৭ শত ৬৭ কোটি ২১ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। গত বছর এই বাজেটের পরিমাণ ছিল ৫ শত ৭২ কোটি ৫ লাখ। এবছর বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৪ শতাংশ। বাজেটে ঘাটতি পরিমাণ ১ শত ৪২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

আজ সোমবার ২৬ জুন ২০২৩ইং তারিখে শহীদ ডা. মিল্টন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটর ৯০তম সভায় এই বাজেট অনুমোদিত হয়।  

এবারের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ২০২১ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করার সময় গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৪ কোটি টাকা। গবেষণার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ খাতেও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বাজেটে চিকিৎসা ও শৈল্য খাতে (এমএসআর) ২৪ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে ৪২ কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে।

এবারের সিন্ডিকেট সভায় দেশের একমাত্র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল বিলম্বে চালুর জন্য মূলত যথাসময়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না আসার বিষয়টি সিন্ডিকেটে তুলে ধরা হয়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সকল যন্ত্রপাতি চলে আসবে এবং সে অনুসারেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এই হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো ডায়লাইসিস মেশিন, এ্যানেসথেশিয়া মেশিন, এইচআইএস, আর্থোস্কপিক মেশিনসহ এ জাতীয় অত্যন্ত জরুরি মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি না পাওয়ার কারণেই মূলত এই হাসপাতালটির অন্তঃবিভাগ চালু করতে বিলম্ব হয়। তবে ইতোমধ্যে সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শসেবা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সু ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০  হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন এবং  এমআরআই, সিটি স্ক্যান, বিএমডিসহ প্রায় ৪০ হাজার টেস্ট সম্পন্ন করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের সভায় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের বিষয়টি ও বাজেট সংক্রান্ত বিষয় সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। এসময় জানানো হয়, আগামী মাস অর্থাৎ জুলাই মাসের ৫ তারিখে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের রোগী ভর্তি  ও অপারেশন কার্যক্রম চালু করা হবে। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক, এমপি  এর উপস্থিতিতে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের রোগী ভর্তি  ও অপারেশন কার্যক্রম চালু করা হবে।  

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত আবশ্যিক বিষয় হল এনাটমি, ফিজিওলজিসহ বিভিন্ন বেসিক কোর্স। এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন বেসিক কোর্সসমূহে পূর্বের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় এবং যা আজকের সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন তাঁদের প্রাপ্য ঝুঁকিভাতা থেকে বঞ্চিত ছিল। বর্তমান প্রশাসন তাঁদের ন্যায় দাবির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে  বছরে ২টি ঝুঁকিভাতা চালু করেছে এবং এই বিষয়টিও আজকের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ভাতার (শিক্ষা বৃত্তি) পরিমাণ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন উল্লেখ করে সিন্ডিকেটে দাবি করা হয়েছে।

সিন্ডিকেট সভায় বাজেট উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। সভায় মূল্যবান বক্তব্য রাখেন ও পরামর্শ দেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এর সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মাননীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোঃ আব্দুল আজিজ,এমপি, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব বেগম ফরিদা খানম,এমপি, বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান, বিসিপিএস এর সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, আমন্ত্রিত সদস্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, ইউজিসির অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী, সিন্ডিকেট সদস্য অতিরক্তি সচিব জনাব একেএম নুরুন্নবী কবির, অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ বেলায়েত হোসেন তালুকদার প্রমুখ।

সভায় মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে সিন্ডিকেট এর সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানান এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ১৫ আগস্টের সকল শহীদকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ার কারণে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় এক হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন আট থেকে নয় হাজার রোগী সেবা নিচ্ছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে  সকল জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা রোগীরা এখানে যাতে পায় এবং রোগীদের বিদেশে যেতে না হয়। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার স্মার্ট বাংলাদেশ এর স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে বিএসএমএমইউকে উত্তরোত্তর উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সকলের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বিশ্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল অবস্থান আছে এবং তারা এটা অকপটে স্বীকার করেন।

মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব বেগম ফরিদা খানম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাসেবায় সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। এখানে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। শুধু সাধারণ মানুষই নয় বর্তমানে দেশের বিশিষ্ট জনেরা, ভিআইপি ব্যক্তিবর্গ এখানে চিকিসাসেবা নিচ্ছেন এবং সুস্থ হয়ে সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।  

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম পদক প্রাপ্তি এবং নন রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের বকেয়া ভাতা সম্পূর্ণ প্রদান করার  জন্য মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে ধন্যবাদ জানান।  

বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, গরীব রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে এবং জটিল জটিল রোগ সমূহের চিকিৎসাসেবা দেয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি আরো বলেন, রেসিডেন্ট ও নন রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাদের ভাতা বা শিক্ষা বৃত্তি বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক ও জরুরি।


সম্পাদনা: সহযোগী অধ্যাপক ডা. এস এম ইয়ার ই মাহাবুব ও সুব্রত বিশ্বাস। ছবি: মোঃ আরিফ খান। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS