মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

টিম কম্বিনেশন নিয়ে যা বললেন শ্রীরাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে বাংলাদেশ অনেক কিছু শিখেছে বলেই মনে করেন দলের টেকনিক্যাল পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরাম। টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের জন্য সেরা কম্বিনেশন পেয়ে গেছেন বলে মনে করেন তিনি। গতকাল শ্রীরাম বলেন, ‘বাংলাদেশের জয়ের জন্য সব একসঙ্গে আসতে হবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের দুটো সুযোগ ছিল। প্রথম ম্যাচে আমরা ইনিংসের শেষ ১০ ওভারে ১০০ রান করেছি। আর এই ম্যাচে শেষ ১০ ওভারে ১০০ রান ডিফেন্ড করতে হয়েছে। দুটো ম্যাচেই আমাদের অল্প বিস্তর ঘাটতি ছিল। কিন্তু শেখার বিষয় এগুলোই। ভালো দলগুলো শেষ দশ ওভার প্রতি ১০ রান তোলে অথবা ১০ রান ডিফেন্ড করে।’
ওপেনিংয়ে চারটি ভিন্ন কম্বিনেশন দেখা গেছে বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে মেহেদী মিরাজ-সাব্বির রহমান, দ্বিতীয় ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত- মেহেদী মিরাজ, তৃতীয় ম্যাচে শান্ত-লিটন দাস ও গতকাল চতুর্থ ম্যাচে শান্ত-সৌম্য সরকার ওপেন করেন।

তবে বিশ^কাপে বাংলাদেশ ঠিক কোন জুটি খেলাবে তা স্পষ্ট নয়। শ্রীরাম বলেন, ‘আপনাদের কাছে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা এটিকে কম্বিনেশন হিসেবে দেখি। আমরা বুঝতে পারবো ভিন্ন কন্ডিশনে প্রত্যেক খেলোয়াড় কীভাবে সাড়া দেয়। ভিন্ন ভিন্ন দলের সঙ্গে আমাদের কম্বিনেশন কেমন হবে সেটারও পরিষ্কার একটা ধারণা পেয়েছি। আমাদের সব বিকল্প প্রস্তুত রাখতে হবে। কোন সেরা দলটা খেলাতে চাই সেটার ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার। আমার মনে হয়, অধিনায়ক, ডিরেক্টর এবং আমি নিজেও এ ব্যাপারে একমত। আমাদের ভাবনায় দুই-তিনটা কম্বিনেশন রয়েছে। কন্ডিশন অনুযায়ী আমরা সেগুলো ব্যবহার করবো।’
ত্রিদেশীয় সিরিজে চার ওপেনারের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে সৌম্য সরকারের ব্যাটিংকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শ্রীরাম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে তিন নম্বরে সুযোগ পেয়ে ১৬ বলে ২৩ রান করেন সৌম্য। গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে আউট হন ৪ বলে ৪ রান করে। সৌম্যকে নিয়ে শ্রীরাম বলেন, ‘সে শট খেলে আউট হয়েছে। এটাই ইনটেন্ট। আমার মনে হয় সে স্বার্থহীনভাবে দলের জন্য খেলেছে। প্রথম দুই ওভার থেকে আমরা ৬-৭ রানের বেশি নিতে পারিনি। সে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট  হয়ে গেছে। আগের ম্যাচে তিনে নেমে সে একটা ভালো ইনিংস খেলেছে। এটা শুভ ইঙ্গিত। সৌম্যর মত খেলোয়াড়ের মাঝে আত্মবিশ^াস তৈরি করে দিতে হবে আমাদের।’
বিশ^কাপের আগে বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আসতে পারে। শ্রীরাম বলেন, ‘আমাদের হাতে দুটো দিন আছে। কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা সেটা আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। আমরা জানি, আমরা কী চাই।’
বিশ্বকাপের ‘দল’ পেয়ে গেছেন সাকিব
ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে যেভাবে লড়াই করলো বাংলাদেশ, তাতে বিশ^কাপে ভালো কিছুর আশা করাই যায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে গতকাল সাকিব আল হাসানদের পারফরম্যান্স ছিল উজ্জ্বল। কিছু জায়গায় ভুল না করলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারতো টাইগাররা। গতকাল হ্যাগলি ওভালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১৭৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। আর ম্যাচের এক বল বাকি থাকতে হার মানে টাইগাররা। তবে নিজেদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আর সাকিব জানালেন, নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে টিম কম্বিনেশন নিয়ে সামগ্রিক ধারণা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্টের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা এখন পরিষ্কার যে বিশ্বকাপে কোন দল খেলানো হবে, আমরা ঠিক কী চাচ্ছি। আমরা যেভাবে খেলেছি, প্রথম ম্যাচ ও শেষ ম্যাচের দিকে দেখুন, অনেক উন্নতি হয়েছে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগ পর্যন্ত আমরা এই ধারা ধরে রাখতে চাই। ক্লোজ ম্যাচের অভিজ্ঞতা অবশ্যই কাজে লাগবে।’
নিউজিল্যান্ডের এই সিরিজটি মূলত বিশ^কাপের রিহার্সেল। বাংলাদেশ চারটি ম্যাচেই হেরেছে। প্রথম দুটিতে যেমনই হোক, শেষ দুই ম্যাচে উন্নতির ছাপ রেখেছেন দলের ব্যাটাররা। অধিনায়ক সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ব্যাক-টু-ব্যাক ফিফটি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৭০ রান করা সাকিব এবার ৪২ বলে উপহার দিয়েছেন ৬৮ রান। তার ইনিংসে ৭ চারের সঙ্গে ছিল ৩টি ছক্কার মার। 
রানে ফিরেছেন লিটন কুমার দাসও। আগের তিন ম্যাচে যথাক্রমে ৩৫, ১৫ ও ২৩ রান করে আউট হয়েছিলেন লিটন। গতকাল হাঁকালেন ফিফটি। দলীয় ৪১ রানে নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৮৮ রানের জুটি গড়েন লিটন। সাজঘরে ফেরেন দলীয় ১২৯ রানে। ৪২ বলে ৬ বাউন্ডারির সঙ্গে দুই ছক্কায় ৬৯ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
শেষ ম্যাচে উজ্জ্বল ছিলেন পেসার হাসান মাহমুদ। ৪ ওভারের স্পেলে ২৭ রানে ২ উইকেট নেন তরুণ এই ডানহাতি পেসার। ১৩তম ওভারে বাবর আজম ও হায়দার আলীকে আউট করে ম্যাচ ফেরান বাংলাদেশকে। উইকেট না পেলেও ঠিকঠাক ছিল শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদের বোলিং। শরীফুল দেন ৩০ রান আর তাসকিন আহমেদের খরচ ৩২। ইনিংসের ১৯তম ওভারে এসে প্রথমবার বল হাতে পান সৌম্য সরকার। মাত্র ৬ রান দিয়ে সৌম্য তুলে নেন মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট। শেষ ওভারে এসে ৮ রান ডিফেন্ড করতে পারেননি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে খরুচে। ৩.৫ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। দিনটি বাজে গিয়েছে সাইফুদ্দিনের ফিল্ডিংয়েও। ১০.৪তম ওভারে ম্যাচসেরা খেলোয়াড় রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন সাইফুদ্দিন। তখন রিজওয়ান ছিলেন ৩৩ রানে। ম্যাচ শেষে সাকিব বলেন, ‘এটি (নিউজিল্যান্ডে জেতা) কঠিন। তবে আজকে আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলেছি। হয়তো আর কিছু রান বেশি করতে পারতাম। শেষ ওভারে আমরা মাত্র ৩ রান করেছি। শেষের ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে দলের আশা ছিল ১০-১৫ রানের। তবে এমন হতেই পারে।’
৩ ম্যাচে ৭.৯১ ইকোনমিতে ৪ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তিনিই সেরা। ৩ ম্যাচে ২ উইকেট নিলেও তাসকিন আহমেদের ইকোনমি রেট ৭.৫৮। সেই তুলনা একটু খরুচে শরীফুল ইসলাম (৯.২৯)। এক ম্যাচ খেলে ২ উইকেট নেয়া আরেক পেসার ইবাদত হোসেন রান দিয়েছেন ১০.০০। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ইকোনমি রেট সবচেয়ে বেশিÑ ১১.৪৮। এক ম্যাচে ৪৮ রান দেয়ার পর মোস্তাফিজুর রহমানকে আর মাঠেই নামানো হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে পেসারদের ভূমিকা রাখতে হবে বেশি। এ জায়গায় বাংলাদেশ দলে অন্তত আরেকজন মানসম্পন্ন বোলারের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
ওপেনিংয়ে কাটেনি অস্থিরতা

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে এ পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে ১৫ বার উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। খেলিয়েছে ভিন্ন ১১ জন ব্যাটার। কিন্তু এই ২৭ ম্যাচে উদ্বোধনী জুটি ৩০ পেরিয়েছে মাত্র তিনবার। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৪০ রান। ত্রিদেশীয় সিরিজে চারটি ভিন্ন জুটি ট্রাই করে দেখেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। সাব্বির, শান্ত, সৌম্য, লিটন, মিরাজÑ কারো ব্যাট থেকেই বড় ইনিংস আসেনি। আর সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটিটি ছিল ২৫ রানের। শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার জায়গাটায় আরও কাজ করতে হবে। প্রথম ম্যাচ বাদে পরেরগুলোতে ফিনিশারের ভূমিকা ঠিক পালন করতে পারেননি ইয়াসির আলী রাব্বী। সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও এ জায়গায় ব্যর্থ। চার ইনিংসে একবার দুই অংকে যেতে পেরেছেন সোহান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS