বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন

২০ – ৩০ পয়সায় লেবুর পিস, হতাশ চাষীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২
  • ১৩৬ Time View

রাজবাড়ী প্রতিনিধি মেহেদী হাসান রাজু : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার প্রতিটি হাটে বেশ কয়েকদিন হলো লেবুর বাজারে চরম ধ্বস নেমেছে। হাটে প্রতি পিস লেবু পাইকারীতে ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে ১ টাকা থেকে দেড় টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। এই বাজার দেখে উপজেলার লেবু চাষীরা চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। 

আর এরকম বাজার দর পাওয়ায় চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। 

গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার বহরপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে আসা লেবু পাইকাররা কিনছেন প্রতি হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। যেখানে গাছ থেকে ১ হাজার লেবু সংগ্রহ করতে শ্রমিককেই দিতে হয় ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে পরিবহণ খরচ ও বাজার খাজনা। বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর, জামালপুর, সোনাপুর, নারুয়া, আড়কান্দি, তেঁতুলিয়া, রামদিয়া, বালিয়াকান্দি ও সমাধীনগর হাটে এই সপ্তাহের বাজারের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এইসব বাজারে প্রতি হাজার লেবু  বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। যা প্রতি পিস ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সায়। 

আড়তদার ও চাষীরা বলেছেন, গত ১ থেকে দেড় মাস আগেও ১ হাজার লেবুর দাম ছিলো ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। রমজান মাসেও ১ হাজার লেবুর দাম ছিলো ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকায়। আমদানীর তুলনায় বাজারগুলোতে লেবুর চাহিদা কম থাকায় ভালো দাম পাচ্ছেন না এই উপজেলার লেবু চাষীরা। 

  মঙ্গলবার (২৭ জুন) উপজেলার একাধিক চাষীর কাছে লেবু কী দর বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে তারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, 

এটা আর জানতে চাইয়েন না! ১৮ শত লেবু এনেছিলাম তা পানির চেয়েও কম দামে লেবুগুলো বিক্রি করেছি। ১৮ শত লেবু মাত্র ৪৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। 

তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জমিতে লুবুর চাষ করছি। প্রতি বছর প্রতি বিঘা জমির লেবু বিক্রি করে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে যে দামে লেবু বিক্রি করছি তাতে সার, কিটনাশক ও পরিচর্যার খরচতৌ দুরের কথা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহের খরচও উঠছে না। এরপর পরিবহণ খরচও আছে। এবার লেবুতে চরমভাবে লোকসান হয়ে গেল।

বহরপুর বাজারের সব সময় লেবু বিক্রি করা চাষী মোঃ বিল্লাল হোসেন সহ কয়েকজন বলেন, আমাদের বালিয়াকান্দি উপজেলার লেবু নিজেদের জেলার চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী হয়। এবারে বহু লেবু আমদানী হচ্ছে, সেক্ষেত্রে চাহিদা নাই। তারা আরও বলেন, চাষিদের কাছ থেকে ৪০০ – ৪৫০ টাকা হাজার কিনে নিয়ে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা হাজারে লাভ রেখে খুচরা বিক্রেতাদের নিকট বিক্রি করে দেয়। 

বাড়াদী গ্রামের লেবু চাষী মোঃ গোলাম মোর্শেদ চাঁদু বলেন, কৃষকেরা বাজারে প্রতি পিস লেবু ২০ – ৩০ পয়সা হারে বিক্রি করছেন। অথচ খুচরা বিক্রেতারা প্রতি পিস লেবু বিক্রি করছেন ১ টাকা থেকে দেড় টাকায়। লেবুর লাভের বেশীর ভাগই খাচ্ছেন পাইকার ও খুচরা ব‍্যবসায়ীরা। বাজারে পাইকারেরা সিন্ডিকেট করে চাষীদের কাছ থেকে কম দামে লেবু কিনে বেশী দামে বিক্রি করছেন। তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রনের কেউ নেই। প্রতিটি হাট বাজারে খুচরা তরকারি ব‍্যবসায়ীরা এখনও প্রতি পিস লেবু দেড় টাকা থেকে দুই টাকা বিক্রি করছেন। হাটে বেশ কয়েকজন কাঁচা তরকারী ব‍্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, পাইকারদের কাছ থেক্রে তিনি ১০০ পিস লুবু ৩০ টাকায় ক্রয় করেছেন। সেই লেবু তারা বিক্রি করছেন, ছয় টাকা হালি দরে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এই উপজেলায় প্রতিবছরই কিছু কিছু করে লেবুর আবাদ বাড়ছে। কৃষক আমাদের নিকট রোগ বালাই সম্পর্কে পরামর্শ চাইলে আমরা উপদেশসহ পরিদর্শন করে থাকি।  কিন্তু বাজারে লেবুর দাম কম হওয়ায় কৃষকদের এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে প্রতি বিঘা জমিতে লেবু উৎপাদনে খরচ হয় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি হাজার লেবু দুই হাজার টাকায় বিক্রি হলে কৃষকের কিছুটা লাভ থাকার কথা। সেক্ষেত্রে বর্তমানে বাজারে প্রতি হাজার লেবু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০০ টাকায়। এই দাম খুবই নগন‍্য। এই রকম বাজার থাকলে চাষীরা লেবু উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। চাষীদের উৎপাদিত পণ‍্যের ন‍্যায‍্যমূল‍্য নিশ্চিতে জরুরী উদ‍্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS