শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

লিফট আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২

লিফট- আধুনিক নগরসভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিশ্বের বুকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যতটা এগিয়ে যাচ্ছে নগরকেন্দ্রিক সভ্যতায় ততোই প্রয়োজন হচ্ছে এসব যন্ত্রের।

নিজস্ব প্রতিনিধি (ছবি) হাসুঃ ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফট আমদানিতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে লিফট ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত ছিলো। এক্ষেত্রে লিফটের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ শুল্ক (১ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর) ছিলো। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে লিফটকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে পূর্বের ১১ শতাংশ করসহ ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এতে খাতটিতে ৩১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলো। যা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে দেশের অবকাঠামো খাতে। এছাড়া বর্তমানে এই সেক্টরে ছোট, মাঝারি এবং বড় পরিসরে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার জড়িত। যাদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।

আপনার সদয় অবগতির জন্য বাংলাদেশের লিফট সেক্টরের একটি চিত্র তুলে ধরছি:

  • বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই লিফট পরিসেবা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর একক প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। এই সেক্টরটি এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর। বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উচ্চ ধারণক্ষমতা এবং দ্রুতগতির লিফট বিভিন্ন হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে।
  • লিফট যেহেতু একটি মানববাহন, এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্ব বহন করে।
  • বাংলাদেশ এলিভেটর, এসকেলেটরস এন্ড লিফট ইম্পোটার্স এসোসিয়েশন (বেলিয়া) সরকারের সাথে একযোগে এই আমদানী নির্ভর সেক্টরের বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন, সেফটি এবং স্ট্যান্ডার্ড নীতিমালা প্রনয়ণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রনয়ণ ইত্যাদি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে একযোগে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।
  • করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ব বাজারে স্টিলের দাম বাড়ারকারণে লিফটের ক্রয় মূল্য ২০ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। জাহাজ ভাড়া ৭-৮ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্য ১৮ ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারনে এলসি মার্জিন ৫০ শতাংশে বেধে দেয়ায় প্রতিটি আমদানীকারক চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়ে আছে।
  • সর্বোপরি স্থানীয় বাজারে একটি লিফটের ক্রয় আদেশ পাওয়ার পর প্রস্তুতকারকের সাথে অর্ডার প্রসেসিং পর্ব সমাধান, ড্রয়িং তৈরী এবং তা অনুমোদন শেষে ঋণপত্র হাতে পাওয়ার পর প্রস্তুতকারক লিফটি অর্ডার মোতাবেক প্রস্তুত করে, নিরীক্ষা করে জাহাজীকরণ করতে কমপক্ষে ৮-১০ সপ্তাহ সময় নেয়। জাহাজ আমাদের বন্দরে আসতে আরও প্রায় ৪-৫ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। সব মিলিয়ে অর্ডার গ্রহণ থেকে পণ্য ছাড় করাতে ১২-১৫ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।
  • এই মুহুর্তে লিফটের য়াদেশ, অগ্রিম গ্রহণ, ঋণপত্র খোলা, প্রস্তুত পর্যায়ে, জাহাজীকরণ অবস্থায় এবং বন্দরে শুল্কায়ন পর্যায়ে সহস্রাধিক লিফট প্রক্রিয়াধীন। হঠাৎ করে এই পরিমান লিফট যা পূর্বের শুল্কহারে (১১%) বিক্রয় করা হয়েছে সেগুলোর জন্য বাড়তি হারে (৩১%) শুল্ক প্রদান করতে হলে ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এবং এই সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট বহু কর্মকর্তা/কর্মচারী বেকার হয়ে পথে বসবে।
  • বর্তমানে এই সেক্টরে ছোট, মাঝারী এবং বড় পরিসরে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক কর্মকর্তা/ কর্মচারী নিয়োজিত যাদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

আমাদের প্রস্তাব-

  • নীতিমালা তৈরী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রনয়ণ পূর্ব পর্যন্ত লিফটকে অত্যাবশ্যক ক্যাপিটাল মেশিনারী ক্যাটাগরীতে রাখা এবং পূর্বের শুল্ক হার ১১% (১% আমদানি শুল্ক + ৫% অগ্রিম আয়কর + ৫% অগ্রিম কর) শতাংশ বহাল রাখা।
  • লিফট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালা প্রনয়ণ। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের আলোকে বাংলাদেশ লিফট স্ট্যান্ডার্ড প্রনয়ণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরী এবং প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন।
  • লিফট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালা প্রনয়ণ। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের আলোকে বাংলাদেশ লিফট স্ট্যান্ডার্ড প্রনয়ণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরী এবং প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন।
  • উপরোক্ত প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পাদন করার পর লিফট প্রস্তুত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য নূন্যতম ৩ বছর সময় বেধে দেয়া।
  • উপরোক্ত পন্থা অবলম্বন করে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপে এগুলে বিগত ৫০ বছর ধরে অর্জিত আমাদের সক্ষমতা ব্যবহার করে আমরা বাংলাদেশকে একটি টেকসই লিফট শিল্প উপহার দিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারব বলে বিশ্বাস করি।

অতএব, উপরোক্ত বিষয় ও পরিস্থিতির আলোকে সরকারের সদয় বিবেচনার জন্য লিফটকে অত্যাবশ্যক ক্যাপিটাল মেশিনারি ক্যাটাগরিতে রেখে আগের ১১ শতাংশ শুল্কহার বহাল রাখার আকুল আবেদন করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS