বরিশাল এস এল টি তুহিন: মায়ের নামে জমি লিখে নিয়ে পৈত্রিক ঘর থেকে মাকে বের করে দিলেন বড় ছেলে মাহাবুব আলম মৃধা (৫০)। এর প্রতিবাদ করায় তিন বোন, ছোট ভাই ও বোনাই ও ভাগ্নেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের নলচিড়া গ্রামে। ঘর থেকে বের করে দেয়ার পরে মা নলচিড়া বাজারের একটি দোকান আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে বৃদ্ধা মা হালিমা বেগম (৮২)। স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের শাহজাহান মৃধা গত ২০ বছর আগে মারা যান । মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি স্ত্রী হালিমা বেগমকে জেএল নলচিড়া মৌজার এসএ-১৯ কতিয়ানের ৬৪ শতাংশ জমি লিখে দেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে বড় ছেলে মাহাবুব মৃধার কাছে থাকত মা হালিমা বেগম। পরবর্তিতে মাহাবুব মৃধা মায়ের নামের ৬৪ শতাংশ জমি লিখে নেওয়ার জন্য মা হালিমা বেগমের (৮২) উপর চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে মায়ের নামের নামের জমি লিখে নেন বড় ছেরে মাহাবুব মৃধা। পরে অন্যান্য সম্পত্তি তাহার নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে মাহাবুব। জমি লিখে নেওয়ার পরে কিছুদিন যেতে না যেতে মাকে ঘর থেকে বের করে দিতে নানান ফন্দি ফিকির করে পায়তারা চালায় মাহাবুব মৃধা। এক পর্যায়ে এ নিয়ে নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধার সভাপতিত্বে সালিস বৈঠক বসে। বড় বোন আকলিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, মায়ের কাছ থেকে জমি লিখে নিতে মাকে প্রস্তাব দেয় আমার ভাই ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মাহাবুব মৃধা। মা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করতে থাকে এবং স্বামীর বসতঘর হতে বেশ কয়েকবার বাহির করে দেয়, এমন কি মায়ের ভরণপোষণ ঔষধ ও চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার ও সম্পত্তি লিখে নেওয়ার বিষয়গুলো অন্যান্য ছেলে ও মেয়েদের মা জানালে নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে, নলচিড়া বাজার পরিচালনা কমিটি, গৌরনদী মডেল থানা, বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে বিভিন্ন সময় ছোট ভাই ও বোনেরা বড় ভাই মাহাবুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। এ নিয়ে কয়েকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সকল সালিশ বৈঠক ও গ্রাম আদালতের সিদ্বান্ত উপেক্ষা করে মাহবুব আলম মাকে ঘরে উঠতে বাঁধা দেন। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে ছোট ভাইদের বঞ্চিত করতে ষড়যন্ত্র করে মাহাবুব মৃধা। মা হালিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বড় ছেলে আমার নামের জমি লিখে নিয়ে আমাকে স্বামীর বসত ঘর থেকে বের দেয়। আমি এর বিচার চাই, স্বামীর ভিটায় আমি ফিরে যেতে চাই। ছোট ভাই মমিন মৃধা অভিযোগ করে বলেন, বড় ভাই ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মাহাবুব মৃধা কর্তৃক মায়ের নামের লিখে নিয়ে মাকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার প্রতিবাদ করলে মাহাবুব মৃধা আমাকে তিন বোন, বোনাই ভাগ্নেসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২ জনকে আসামি করে বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। মিথ্যা মামলায় মাহাবুব মৃধা দাবি করেন, নলচিড়া বাজারের তার দোকানে গত ৯ জুন আমরা হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করে ৫০মন ভুট্টা, ৪০মন ধান, ১০ মন মুগ ডাল লুট করেছি। শুধু তাই নয় আমরা জোরপূর্বক পুকুর থেকে ৭/৮ মন মাছ লুট, বাগানের বাঁশ কেটে নিয়ে গেছি। মায়ের জমি লিখে নিয়ে মায়ের সঙ্গে অবিচার করে নিজেকে রক্ষায় বড় ভাই মাহাবুব মৃধা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে। এ ঘটনা শোনার পরে থেকে বৃদ্ধা মা অসুস্থ্য হয়ে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, মাহাবুব মৃধা মায়ের সাথে অমানবিক আচরন করার পরে ছোট ভাই বোনদের জব্দ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে। আদৌ বাজারে হামলা বা লুটপাটের কোন ঘটনা ঘটেনি। বরং মাহাবুব মৃধা মাহবুব মৃধা মা হালিমা বেগম, ছোট ভাই মমিন মৃধা, বড় বোন আকলিমা বেগমসহ বাজারের দোকানের ভাড়াটিয়াদের সাথে দুর্ব্যবহার ও তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মাহাবুব। বৃদ্ধা মা হালিমা বেগমকে ঘর থেকে বের করে দেয়া ও ছোট ভাই বোনদের মিথ্যা মামলা হয়রানীর তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। নলচিড়া বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট আওয়ামীলীগের নেতা মোঃ বাদশা ফকির ও সাধারন সম্পাদক মোঃ রতন মিয়া জানান, মৃত শাহজাহান মৃধার স্ত্রী হালিমা বেগমকে বড় ছেলে মাহাবুব মৃধা স্বামীর ভিটা থেকে বের করে দেয়ার পরে সে বাজারে থাকা স্বামীর একটি দোকান ঘরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেন। এ নিয়ে বাজার কমিটি একাধিকবার সালিস বৈঠক হয়। কিন্তু বড় ছেলে মাহাবুব মৃধা সালিসদের সিদ্বান্ত অমান্য করে মাকে ঘরে উঠতে দেয়নি। এমন কি মাহাবুব মৃধা ভাই বোনদের বিরুদ্ধে বাজারের দোকানে হামলা ও লুটপাটের মত মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply