শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

বরিশালে বেড়েছে বাঁশের তৈরি চাইয়ের কদর 

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

বরিশাল এস এল টি তুহিন : বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। এ সময় বরিশালের বিলাঞ্চলসহ খাল-নদী পানিতে থাকে টইটুম্বুর, যেখানে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিচরণ। বর্ষাকালে জেলেসহ গ্রামের সাধারণ মানুষের মাছ শিকারে আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। ফলে মাছ শিকারে সুতোয় বোনা জালসহ বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরণের ফাঁদের কদরও বেড়ে যায়।

বরিশালের গ্রামীণ বাজারগুলোর বিক্রেতাদের তথ্যানুযায়ী, বাঁশের তৈরি মাছ শিকারের ফাঁদ ‘চাই’য়ের কদরের এখনও আছে আগের মতোই। বর্ষা এলেই ক্রেতা পর্যায়ে চাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। বর্ষায় গ্রামের হাট-বাজারে মাছ শিকারের চাইয়ের সংগ্রহ বাড়াতে হয় বলে জানান মৎসজীবি ও ব্যবসায়ী আনোয়ার আকন। তিনি বলেন, এলাকা ভিত্তিক চাইয়ের কদর একেক জায়গায় একেকরকম। তবে আগৈলঝাড়া উপজেলার মোহনকাঠী গ্রামের মানুষের হাতে বানানো চাইয়ের কদর রয়েছে সমগ্র বরিশালজুড়ে। আর চাই তৈরি করতে গিয়ে ‘আগৈলঝাড়ার চাই পল্লী’ হিসেবেও গ্রামটিকে মানুষ চেনে এখন। মোহনকাঠী গ্রামে কখন থেকে চাই তৈরির কাজ শুরু হয়েছে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে না পারলেও কেউ বলছেন শতবছরের পুরোনো পেশা এটি। আবার কেউ বলছেন দুইশত বছর ধরে এ গ্রামের মানুষ চাই তৈরি ও বিক্রির কাজে জড়িত।

গ্রামের বাসিন্দা নলিনী বৈরাগী জানান, বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের চার’শ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে চাই তৈরি করে। এখনও গ্রামের পুরুষেরা বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস চাই তৈরি ও শুষ্ক মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করে। তার ভাষ্যমতে, নানাবিধ সমস্যার মধ্যে বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের বাসিন্দারা চাই তৈরির পেশাকে ধরে রেখেছে। চাই তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, বেত ও লতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অর্থাভাবে পড়ছে। আবার অনেকে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন ও বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণের টাকা এনে পেশা ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছে। তবে এতে তাদের কষ্ট কমছে না বাড়ছে বলে জানান গ্রামের বাসিন্দা ও কলেজছাত্র প্রশান্ত বৈদ্য।

গ্রামের মাখন বৈরাগীর ছেলে দুলাল বৈরাগী জানান, তারমতো লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে চাই বুনার কাজ করে গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ে। আর বর্ষা মৌসুম এলে চাই বুনার কাজে সবার ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়।

মোহনকাঠী গ্রামের হরলাল বৈদ্য জানান, দু’শ টাকার তলা বাঁশ, দু’শ টাকার কৈয়া লতা দিয়ে একেকজন শ্রমিক ৫ দিনে এক কুড়ি (২০টি) চাই তৈরি করতে পারেন। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন আনার ফলে তাদের কাছে প্রতি কুড়ি চাই পাইকারি হিসেবে বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৬শত টাকায়। বাজারে যার দাম দুই থেকে আড়াইহাজার টাকা। ওই গ্রামের লক্ষণ বৈরাগী জানান, তাদের গ্রামের তৈরি চাই স্থানীয় মাহিলাড়া, পয়সারহাট, সাহেবেরহাট, ধামুরাসহ বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠী, ঘাঘর, শশীকর, নবগ্রাম, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS