
ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫:
পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে তিন দশকে একটি স্বনামধন্য উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে জাবারাং কল্যাণ সমিতি (জাবারাং)। ১৯৯৫ সালে খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ক্রাউন প্লাজা হোটেলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সম্মানিত পরিচালক (যুগ্মসচিব) জনাব মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি জাবারাং কল্যান সমিতির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকাকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে, তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের ঐতিহ্য ধারন করতে হবে, লালন করতে হবে; এবং জাবারাং এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, এবং ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি আরও জানান যে, ”এনজিও বিষয়ক ব্যুরো প্রান্তিক পর্যায়ের ছোট উন্নয়ন সংস্থার কথা বিবেচনা করছে, তাই, এনজিওব্যুরো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই, ছোট স্থানীয় সংস্থাগুলি ডোনার ফান্ডেড প্রজেক্টে পার্টনার হিসেবে কাজ করতে পারবে। এছাড়া ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফান্ড নিয়ে কাজ করতে এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন লাগবে না।”
অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্মানিত সদস্য প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি ইউনেস্কো’র হেড অব এডুকেশন নোরিহিদে ফুরুকাওয়া জাবারাংয়ের এডুকেশন এবং এমএলই প্রোগ্রামের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধি কামনা করেন। বক্তারা জাবারাংয়ের কার্যক্রমেরবিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন, পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে উন্নয়ন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নেয়ার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ সময় জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা স্বাগত বক্তব্যে যেসকল জাতীয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান ও বলেন, জাবারাংয়ের এই ৩০ বছরের পথচলা মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার, ভাষা, শিক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাস।
অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় প্রামাণ্যচিত্র ‘জাবারাং: ৩০ বছরের পথচলা’, যেখানে সংস্থাটির বহুভাষাভিত্তিক মাতৃভাষা শিক্ষা (MLE), টেকসই জীবিকা, যুব নেতৃত্ব বিকাশ, এবং স্বাস্থ্য ও নারী ক্ষমতায়নে অবদানের চিত্র তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২১ সালে জাবারাং-এর নির্বাহী পরিচালক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকে ভূষিত হন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উন্মোচন করা হয় ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ ‘Roots to Impact’। ‘Roots to Impact: গত ৩০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. হরি পূর্ণ ত্রিপুরা।
জাবারাংয়ের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বিনোদন ত্রিপুরা’র সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনা পর্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনসিইউ প্রতিনিধি মো. তাজউদ্দিন, গণসাক্ষরতা অভিযানের তপন কুমার দাশ, প্লান ইন্টারন্যাশনালের ফারজানা মেহরিন, সেভ দ্য চিলড্রেন মেহেরুন নাহার স্বপ্না, হেডম্যান ও গ্রামীণ সাধারণ নেটওয়ার্কের (ভিসিএফ নেটওয়ার্ক) সভাপতি যুব লক্ষন চাকমা, নারী হেডম্যান এখিন চৌধুরী, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সমন্বয়কারী সঞ্জয় মজুমদার, সিডব্লিএফডি’র নির্বাহী পরিচালক ল্যাডলি ফায়েজ, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ প্রতিনিধি মাসুদ আলম, উইভ সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক নাই ইউ প্রু মার্মা মেরী, দীঘিনালা ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর মো. মাইনউদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে কেক কেটে জাবারাং কল্যাণ সমিতির ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply