বরিশাল: ঈদ শেষে বরিশালসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ কর্মস্থলে ফিরছেন। বরিশাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল নামে লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে। আজ শনিবার উভয় পথে যাত্রীদের ঢল আরও বেড়েছে। রবিবার বেলা ১২টার পর থেকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে বরিশাল-কাঠালবাড়ি রুটে বাস সংকটে পড়েন যাত্রীরা।
ঢাকামুখী শত শত যাত্রীকে টার্মিনালে গিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও সড়ক পথের যাত্রীরা বাস পাচ্ছেন না। আবার বাস পেলেও ৩০০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। বিআরটিসি বাসেও ৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। বাস সংকটের কারণে অনেক যাত্রী চড়া ভাড়ায় থ্রি-হুইলার রিজার্ভ করে যাচ্ছেন কাঠালবাড়ি ঘাটে।
এ দিকে রবিবার বিকেল ৪টায় বরিশাল নৌ-বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, শনিবারের মতো যাত্রীদের চাপ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা যাওয়ার জন্য বন্দরে নোঙ্গর করে আছে ১৩টি লঞ্চ। পারাবত লঞ্চের সুপারভাইজার মো. সেলিম বলেন, আজও (রবিবার ) যাত্রীদের ভিড় আছে। শনিবারের মতো নির্ধারিত সময়ের দুই-তিন ঘণ্টা আগেই লঞ্চগুলো ছেড়ে যেতে হবে।
নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে কাঠালবাড়ি যাত্রীদের ভিড়
রবিবার দুপুর ২টায় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, শতশত যাত্রী টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন কাঠালবাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু কাঠালবাড়ি রুটে চলাচলকারী বিএমএফ পরিবহনের কাউন্টার ছিল বন্ধ। বিএমএফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান সুমন বলেন, যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। যে গাড়িটি যাত্রী নিয়ে যায়, সেটি আসতে দেরি হয়। এজন্য বাস সংকট হওয়ায় কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিএমএফ কাউন্টার বন্ধ থাকার কারণে লোকাল রুটের বাসে বাড়তি ভাড়ায় কাঠালবাড়ি ঘাটে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। দুপুর আড়াইটায় দেখা যায় হাজী ক্লাসিক নামের একটি বাস (বরিশাল-ব-১১০০৮৮) জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে নিয়ে যাত্রী তুলছে কাঠালবাড়ি যাওয়ার জন্য।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী গ্রামের মো. মামুন খান (৪৫) স্ত্রী সন্তানসহ পাঁচজন নিয়ে বরিশাল গেছেন ঢাকায় যাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ঈদে বাড়িতে বাড়তি খরচ হয়েছে। হিসাব করে বাস ভাড়া রেখেছিলেন। বাড়তি ভাড়ার জন্য এখন সেই হিসাব মিলছে না। অতিরিক্ত ভাড়া গুণে তিনি কীভাবে ঢাকায় ফিরবেন সেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
পটুয়াখালীর লেবুখালী থেকে নথুলতাবাদ টার্মিনালে রিপোর্টার এস এল টি তুহিন এর সাথে কথা হয়। এক গার্মেন্টস কর্মী খাদিজা আক্তারের (৩২) সঙ্গে। ৩০০ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় কিনেছেন খাদিজা। তিনি অভিযোগ করেন বলেন, বাস টার্মিনালে বাড়তি ভাড়া নেওয়া প্রতিরোধে কোনো তদারকি টিম নেই। তাই যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
মশিউর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, বেলা ১২টায় তিনি নথুলতাবাদ টার্মিনালে এসেছেন। ২টা পর্যন্ত বাস পাননি। কখন পাবেন সে নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছে না। মশিউর বলেন, বাস না পেলে থ্রি-হুইলারে কাঠালবাড়ি যাবেন।
পারাবত-১২ লঞ্চের কেবিনের করিডোরে স্টাফদের পেতে রাখা তোষক –নথুল্লাবাদ কেন্দ্রিক বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ঈদের কারণে যাত্রীদের ভিড় বেশি। তাই বাড়তি ভাড়া নিতে হয়। কারণ, যে বাসটি কাঠালবাড়ি যায় সেই বাসটি যাত্রীশূন্য অবস্থায় আবার বরিশাল আসে। লোকসান এড়াতে বাড়তি ভাড়া নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে বাস সংকট হয়েছে বলে স্বীকার করেন কিশোর কুমার দে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল কর্মকর্তা গাজী মনিরুজ্জামান নামের এক যাত্রী বলেন, বিআরটিসি বাসেও ৫০ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বিআরটিসির ডিপোতেও বাস সংকট রয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না।
বরিশাল বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৫০ টাকা বাড়তি নেওয়া হলেও তা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই আছে। কাঠালবাড়ি থেকে যাত্রী ছাড়াই বাসগুলো বরিশালে আসে। যাতে লোকসানে পড়তে না হয় এজন্য ৫০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
নৌ-বন্দরেও যাত্রীঢল রবিবার বিকেল ২ টায় বরিশাল নৌ-বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, ১২টি লঞ্চ যাত্রী নেওয়ার জন্য বন্দরে নোঙ্গর করে আছে। লঞ্চগুলো হচ্ছে অ্যাডভেঞ্চার-১, সুরভী- ৭ ও ৮, প্রিন্স আওলাদ-১০, পারাবত- ৯, ১০ ও ১২, সুন্দরবন- ১০ ও ১১, মানামী এবং কুয়াকাটা-২। দুপুর ২টার পর থেকেই ডেকের যাত্রীরা লঞ্চে আসতে শুরু করেন বলে জানিয়েছেন লঞ্চ কর্মীরা।
সুরভী লঞ্চের কলম্যান কবির খান বলেন, গত দুই চেয়ে আজ যাত্রী বেশি হবে। দুপুর থেকেই যাত্রীদের ঢল নেমেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সবকটি লঞ্চের অধিকাংশ কেবিনে যাত্রীরা উঠে অপেক্ষা করছেন লঞ্চ ছাড়ার জন্য। কারণ, শুক্রবার ও শনিবার যাত্রীপূর্ণ হওয়ায় ১৩টি লঞ্চ নির্ধারিত সময়ের ২-৩ ঘণ্টা আগেই ঢাকার উদ্দেশে বরিশাল ঘাট ত্যাগ করেছে। ফলে অধিকাংশ কেবিন যাত্রী লঞ্চ ফেল করেছেন। সে রকম দুর্ভোগে যাতে পড়তে না হয় সেজন্য দুপুরের পরই লঞ্চে এসে কেবিনে অবস্থান নিয়েছেন প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের যাত্রী মো. জহির সিকদার।
বরিশাল নৌ-বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রোভার স্কাউট, নৌ-পুলিশ ও আনসারদের নিয়ে নৌবন্দরে শৃঙ্খলা বজায় রাখা হচ্ছে। কোনো লঞ্চে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের দু’জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বন্দরে তদারকি করছেন।
বরিশাল নৌবন্দরে রবিবার বিকেলে যাত্রীদের ঢল সিট বাণিজ্য –ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখী লঞ্চের তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে লঞ্চ কর্মীদের সিট বাণিজ্যের কারণে। রবিবার দুপুরে বরিশাল নৌবন্দরে নোঙ্গর করা লঞ্চগুলো ঘুরে দেখা গেছে, লঞ্চের স্টাফরা ডেকের ফ্লোরে চাদর ও তোষক বিছিয়ে রেখেছেন। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, স্টাফদের বিছিয়ে রাখা চাদর ও তোষকের জায়গা নিতে হলে তাদের ২০০-৩০০ টাকা দিতে হয়। এতে তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। যারা স্টাফদের রাখা সিট কিনতে না পারেন তারা বাধ্য হয়ে ছাদের যাত্রী হন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply