শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করলো যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুলকে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (১৫ মার্চ) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘৃণা করার অভিযোগ এনেছেন।

পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে আমাদের মহান দেশে আর স্বাগত জানানো হবে না।”

তিনি তাকে একজন ‘বর্ণবাদী রাজনীতিবিদ’ হিসাবে অভিহিত করে বলেছেন, “তার সঙ্গে আমাদের আলোচনা করার কিছু নেই।”

উল্লেখ্য, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। এই আবহে সেই দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হলো। যা কি না মার্কিন ইতিহাসে খুব বিরল ঘটনা।

শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার এক্স পোস্টে, ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের একটি প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসন সম্পর্কে একটি অনলাইন বক্তৃতার সময় রাসুলের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে রাসুল বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যা শুরু করছেন তা হলো ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের ওপর আক্রমণ, যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের বিরুদ্ধে, দেশে… এবং বিদেশে ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটি আধিপত্যবাদকে একত্রিত করে।”

তিনি আরো বলেন, “ম্যাগা আন্দোলন ছিল খুব স্পষ্ট তথ্যের প্রতিক্রিয়া, যা দেখায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনসংখ্যাগত পরিবর্তন হচ্ছে যেখানে ভোটারদের … ৪৮ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ হয়ে উঠবে।”

এর জবাবে রুবিও তার পোস্টে রাসুলকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত ব্যক্তি) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে বহিষ্কার হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার দূত রাসুল বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘকাল। গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রমাণ ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের নতুন আইনে শ্বেতাঙ্গদের থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার বিধান আছে। সেই আইনের পরিপ্রেক্ষিতেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাহায্য করা বন্ধ করেছিলেন ট্রাম্প। এরপর সম্প্রতি সেই একই আইনের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প দাবি করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকরা চাইলে আমেরিকায় বসবাস করতে পারেন। শুধু তাই নয়, তাদের দ্রুত মার্কিন নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়েও আশ্বাস দেন ট্রাম্প। 

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকানা একটি বিতর্কিত বিষয়। বর্ণবাদের অবসানের তিন দশক পরেও বেশিরভাগ কৃষিজমি এখনও শ্বেতাঙ্গদের মালিকানাধীন এবং সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সরকারের চাপের মধ্যে রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নতুন আইনকে ‘ভূমি অধিগ্রহণের অস্ত্র’ হিসেবে না দেখে, এটি একটি সাংবিধানিক অধিকার বলে দাবি করেছেন। তার মতে, “নতুন আইনটি মানুষের মধ্যে ভূমির অধিকার নিয়ে ন্যায্যতা আনার জন্য কাজ করছে।”

ঔপনিবেশিক ও বর্ণবাদী যুগের উত্তরাধিকারের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকানার প্রশ্নটি রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কৃষ্ণাঙ্গদের তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল এবং সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।

শ্বেতাঙ্গরা এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার তিন-চতুর্থাংশ কৃষিজমির মালিক। ২০১৭ সালের সর্বশেষ ভূমি নিরীক্ষা অনুসারে, কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানরা দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, কিন্তু তারা মাত্র ৪ শতাংশ জমির মালিক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS