১৬ বছর বয়সী কিশোরী রোজিনা আক্তার। প্রায় এক বছর ধরে আপন মামার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল বিচ্ছিন্ন। আর মামার বাসায় থাকার নামে তার ওপর চলে দিনের পর দিন নির্যাতন। সারা শরীরে জখমের চিহ্ন। থেঁতলে ফেলা হয়েছে সামনের দুই পায়ের আঙুল। হাত-পা পিঠে কাটাদাগ ও আগুনের ছেঁকা।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকার একটি ভবনের চারতলা থেকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রোজিনাকে। পরে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে সেই অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেয় ওই কিশোরী। রোজিনা চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের চৌরাস্তা এলাকার আহমদ ভূইয়ার মেয়ে।
স্থানীয় যুবক মোরশেদ আলম, হেলাল ও বেলাল জানান, মাদ্রাসা রোডে চার থেকে পাঁচ মাস ধরে ভাড়া থাকছেন রোকেয়া-রুবেল দম্পতি। তাদের দুই সন্তান। একজন প্রতিবন্ধী। মূলত তাদের দেখাশোনা ও বাড়ির কাজ করার জন্য আপন ভাগ্নিকে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তারা এতটাই অমানুষ যে মেয়েটাকে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন করে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্যাতন থেকে বাঁচতে দরজা খুলে পালিয়ে যায় ওই কিশোরী। পরে স্থানীয় এক খালা তাকে দেখতে পেয়ে বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন ওই ভবনে ঢুকে তালাবদ্ধ করে দেয়। ওই সময় বাসায় শুধু রুবেল ছিল। তার স্ত্রী বাইরে ছিল। আমরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তার স্ত্রী থানায় এলে তাকেও আটক করা হয়।
এদিকে এক বছর পর মেয়ে রোজিনার শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখে থানার ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন বাবা আহমদ ভূইয়া। পাশাপাশি মেয়েও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কিশোরীর বাবা আহমদ ভূইয়া বলেন, আমার মেয়েকে আমার আপন শ্যালক এক বছর ধরে নিয়ে এসেছে। এক বছর ধরে আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। মেয়েকে বাড়িতে আনার কথা বললে, রুবেল আজ-কাল বলে এক বছর পার করেছে। মেয়েকে এভাবে দেখতে হবে জীবনে কল্পনা করিনি। তারা আমার মেয়েকে শেষ করে ফেলেছে। মেয়ের পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আমি এর বিচার চাই।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী বলে, মামা-মামি এক বছর ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেয় না। প্রতিদিন মারে। পুতা, দা, ছুরিসহ বিভিন্ন কিছুদিয়ে শরীরে আঘাত করে। পিঠে ব্লেড ও দা দিয়ে কেটে ফেলে। আর গরম খুনতি দিয়ে ছেঁকা দেয়। পায়ের আঙুলগুলো পুতা দিয়ে থাতলে দেয়। আমাকে ঠিকমতো খাবার দিত না। কিছু হলেই মারত। আজকে মামি বাসায় ছিল না। এসেই শুধু শুধু মারতেন। তাই মামাকে ফাঁকি দিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যাই। মামি আমার সঙ্গে যা করছে, আমি এর বিচার চাই।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, কিশোরী নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে শহরের মাদ্রাসা রোড থেকে স্থানীয়রা আমাকে কল করে। পরবর্তীতে আমি সেখানে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নাজমুলসহ ফোর্স পাঠাই। ঘটনায়স্থল থেকে নির্যাতিত কিশোরী ও অভিযুক্ত একজনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply