বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাটারদের তিন সেঞ্চুরি এবং দুই হাফ সেঞ্চুরির সৌজন্যে প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে সাউথ আফ্রিকা। জবাবে দ্বিতীয় দিনে ৩৮ রান তুলতে চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনে দলটি অলআউট হয় ১৫৯ রানে। ফলো অনে পড়ে আবারও ব্যাটিংয়ে নেমেছে দলটি।
ফলো অনে পড়ে আবারও খেলতে নেমে সেই একই চিত্র বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। ষষ্ঠ ওভারে প্রথম উইকেট হারায় দলটি। ড্যান প্যাটারসনের করা প্রথম বলেই ফিরে যান সাদমান ইসলাম। অফ স্টাম্প তাক করা বলটি সাদমানের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় কিপার কাইল ভেরাইনির গ্লাভসে। দুই রানে জীবন পাওয়া সাদমান এ দিন করেন ৬ রান। এর একটু পর জীবন পান জাকির হাসান। ১ রানে থাকা অবস্থায় স্লিপে তার ক্যাচটি মিস করেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ২৮ রানে দ্বিতীয় ও ২৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সেনুরান মুথুসামির অফসাইড স্টাম্পের করা বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন মাহমুদুল হাসান জয়। ১১ রানে ফিরে যান তিনি। চারে নামা মুমিনুল ইসলাম ফিরে যান শূন্য রান করে। প্রথম ইনিংসে ৮২ রান করা মুমিনুল কেশভ মহারাজকে ডিপে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মুথুসামির হাতে ধরা পড়েন। ৪ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। ক্যারিয়ারে ১৬বারের মতো টেস্টে শূন্য রানে আউট হয়েছেন মুমিনুল। বাঁহাতি ব্যাটার ফেরার একটু পর জাকিরের উইকেটও হারায় বাংলাদেশ।
চা বিরিততে যাওয়ার আগে আচমকা উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন জাকির। লেংথ পড়তে না পারা বাঁহাতি ব্যাটারের ব্যাট ও প্যাডের মাঝে ফাঁকা থাকায় সেখান দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। উইকেটের পেছনে থাকা ভেরেইনা স্টাম্পিং করতে সময় নেননি একদমই। চা বিরতি থেকে ফিরে আবারও উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এবার সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম টেস্টে ব্যর্থ হওয়া ডানহাতি ব্যাটার রানের দেখা পাননি চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও। মুথুসামির ফুল লেংথ ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেছেন তিনি।
লেগ বিফোর হয়ে ফিরেছেন ২ বলে ২ রান করে। সব মিলিয়ে ২ ইনিংসে মাত্র ৪ বল খেলা মুশফিক করেছেন মোটে ২ রান। একটু পর ফিরেছেন সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ। মহারাজের একটু লাফিয়ে উঠা ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ৩০ গজের ভেতরে থাকা ট্রিস্টিয়ান স্টাবসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ রান করা এই ব্যাটার। এরপর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার।
মুথুসামির বলে শর্ট লেগে থাকা ডি জর্জির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৩৬ রানে। তাইজুল ইসলামও দ্রুতই সাজঘরে ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক হওয়া অঙ্কন প্রথম ইনিংসে ডাক মেরেছিলেন। এবার অবশ্য ৬৪ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। শেষ দিকে অপরাজিত ৩৮ রানের ইনিংস খেলে হারের ব্যবধান কমিয়েছেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত অল আউট হয়েছে ১৪৩ রানে।
যদিও দিনের শুরুর ভাগেই বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কাগিসো রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক কাইল ভেরাইনিকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। অফফর্ম অব্যাহত থাকল তার। এই ইনিংসে করেন ১৭ বলে দুটি চারে ৯ রান। ঠিক তিন বল পর বিদায় নেন মুশফিকুর রহিমও। ডেন পিটারসেনকে রীতিমতো অনর্থকভাবে ফ্লিক করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে টনি ডি জর্জিকে ক্যাচ উপহার দেন মুশফিক। এরপরের ওভারের প্রথম বলে জোড়া আঘাত হানেন রাবাদা। অফ স্টাম্প তাক করা লেংথ ডেলিভারিটি ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা হয়।
দুই পা না নাড়িয়ে আগেভাগে শট খেলে ফেলে এক রানে বিদায় নেন ইনফর্ম মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজকে ফেরানোর এক বল পরে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকেও বিদায় করেন রাবাদা। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন প্রোটিয়া এই পেসার। অঙ্কন রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি। জাতীয় দলে অভিষেক ইনিংসে মুশফিকের মতোই দুই বলে শূন্য রান করেন তিনি। দলীয় ৪৮ রানে আট উইকেটের হারানোর পর দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন মুমিনুল হক এবং তাইজুল ইসলাম। এই দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শতরান স্পর্শ করে বাংলাদেশ। এর একটু পর হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন মুমিনুল। ৭৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি আসে তার ব্যাটে।
প্রিয় ঘরের মাঠে আস্তে আস্তে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুমিনুল। তাকে উপযুক্ত সঙ্গ দিচ্ছিলেন তাইজুল। দুজনের জুটি একশ ছাড়ায়। যদিও সেঞ্চুরি করা হলো না মুমিনুলের। ৮২ রানে ব্যাটিং করার সময় সেনুরান মুথুসামির বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। ১৫১ রানে নবম উইকেট পড়ে বাংলাদেশের। আটটি চার ও দুটি ছক্কায় সাজানো ছিল মুমিনুলের ইনিংস। ফেরার আগে তাইজুলের সঙ্গে নবম উইকেট জুটিতে ১০৩ রান তোলেন মুমিনুল। একইসঙ্গে বিরল এক রেকর্ডর সাক্ষী হন তিনি।
পঞ্চাশ রানের নিচে আট উইকেট যাওয়ার পর এবারই প্রথম নবম উইকেট জুটিতে একশ রানের বেশি তুলতে পেরেছে কোনও দল। শেষ উইকেট হিসেবে ফিরে যাওয়ার আগে ৯৪ বলে ৩০ রান করেন তাইজুল। কেশভ মহারাজকে সামনে হাঁকাতে গিয়ে কট এন্ড বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply