বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হতে হবে ১:৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের বিপরীতে ৩ জন নার্সের প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে চিকিৎসকের তুলনায় নার্সের সংখ্যা কম। এতে রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন ১ লাখ ২ হাজার ৯৯৭ জন। তার বিপরীতে নার্স রয়েছেন মাত্র ৭৬ হাজার ৫১৭ জন। অথচ চিকিৎসক অনুপাতে নার্স থাকার কথা ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৯১ জন। চিকিৎসকের তুলনায় নার্সের ঘাটতি ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৪ জন।
রোববার (১২ মে) ছিল আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক শক্তি, নার্সিং-সেবার ভিত্তি’—এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিবসটি। এ দিবস উপলক্ষে উল্লেখিত তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ)।
বিএনএ জানায়, নার্সদের অভিযোগ তারা যোগ্যতা অনুযায়ী পদমর্যাদা পান না। এমপিএইচসহ দেশ-বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারী সহস্রাধিক নার্স আছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ধাপে ধাপে তাদের পদোন্নতি পাওয়ার কথা। কিন্তু তা তারা পাননি। এই বৈষম্যের কারণে নার্সদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলেও জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি খাঁন মো. গোলাল মোরশেদ বলেন, এবারের নার্স দিবসের প্রতিপাদ্য আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের নার্সরা আমাদের ভবিষ্যৎ হতে পারছে না। তার অন্যতম কারণ-অধিদপ্তর এবং কাউন্সিলের সবগুলো পদ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে গত ৪৮ বছর ধরে আমাদের নার্সদের কোনো ধরনের পদোন্নতি নেই। চাকরির শুরুতে সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে প্রবেশ এবং ৫৯ বছর বয়সে একই পদে থেকে অবসর গ্রহণ করছেন তারা। কোনো ধরনের পদোন্নতি ও পদায়ন না দিয়ে নার্সিং অধিদপ্তর এবং নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব পদগুলোতে হাসপাতালের নার্সদের নিয়ে সংযুক্তিতে বছরের পর বছর খাটানো হচ্ছে। দেশে এই মুহূর্তে নিবন্ধিত নার্স ও মিডওয়াইফের সংখ্যা ৯৫ হাজার ১৬৮ জন। এর মধ্যে ৮৮ হাজার নার্স ও ৭ হাজার ১৬৮ জন মিডওয়াইফ।
তিনি আরও বলেন, সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে সরকারি চাকরিতে কর্মরত আছেন প্রায় ৪৪ হাজার নার্স। সরকারি ৭০টি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে সবগুলো পদে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সরা সংযুক্তিতে কর্মরত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের নার্সিং অধিদপ্তরে দুই থেকে তিন বছর সংযুক্তিতে রাখেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নার্সরা যেন তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হতে না পারেন, সেজন্য মহাপরিচালকের নেতৃত্বে নার্সদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপ তৈরি করে বিভেদ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সিং শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে আটটি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর করেন। অ্যান্ট্রি পয়েন্টে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেন। বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতেই এই উদ্যোগ।
নার্সদের অভিযোগ, একজন নার্স যে পদে চাকরিতে প্রবেশ করছেন, চাকরি থেকে বিদায় নিচ্ছেন সেই পদে থেকেই। অর্থাৎ, সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকরিতে যোগদান করে বেশির ভাগই বিদায়ও নিতে হচ্ছে একই পদে থেকে। নার্স মর্যাদার বিষয়ে রাষ্ট্রের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলেও তা বাস্তবায়ন নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply