বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন

খেলাপিরা নতুন কোনো ব্যবসা করতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে রোডম্যাপ ঘোষণা ক‌রে‌ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপিরা নতুন করে কোন ব্যবসা করতে পারবে না। এছাড়াও জ‌মি, বা‌ড়ি ও গা‌ড়ি না কিনতে পারা সহ বিভিন্ন সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবেন।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ‘দেশের ব্যাংকিং খাতের শ্রেনিকৃত ঋণ হ্রাস এবং কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার’ রোডম্যাপ অনুমোদন পেয়েছে। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে ‘রোড ম্যাপের’ বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে এসব বিষয়ে বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাছের।

তিনি জানান, নতুন পথনকশায় ব্যাংক খাতের খেলাপিদের আর ছাড় না দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ অবলোপন ও অবলোপন ঋণ আদায় জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করা পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। একইসঙ্গে সীমার বেশি ঋণ না দেওয়া, যোগ্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ এবং শেয়ারধারী পরিচালকদের যোগ্যতা নির্ধারণ করার বিষয়েও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

রোড ম্যাপ অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

খেলাপি ঋণ কমানোর পরিকল্পনায় বলা হয়, কোনো ব্যাংকের কোনো ঋণ একাধারে দুই বছর খেলাপি থাকলে (যা বর্তমানে তিন বছর) সেসব ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে অবলোপন করতে হবে। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ব্যাংকের কোনো ঝুঁকি তৈরি হবে না।

এছাড়া অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট গঠন করা হবে। এই ঋণ আদায়ের লক্ষ্য অর্জন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পারফর্মেন্সে যুক্ত করা হওয়ার কথা রোড ম্যাপে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধের জন্য দেওয়া বাড়তি মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হবে না। এর ফলে ব্যাংকের তারল্য সংকট কমবে। ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাহ হবে। এ জন্য খেলাপি ঋণ আদায় করা কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ভাতা চালুর কথাও বলা হয়। ঋণের জামানত বাধ্যতামূলকভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে দিয়ে মূল্যায়ন করাতে হবে।

এদিকে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে ৬টি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্যাংকের শেয়ারধারী পরিচালকদের যোগ্যতা ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা সংশোধন করা হবে। ফলাফল হিসেবে ব্যাংকের সামগ্রিক ঋণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হবে।

রোড ম্যাপ অনুযায়ী, ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, তাদের সম্মানী নির্ধারণ এবং দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এতে স্বতন্ত্র পরিচালকেরা আমানতকারী ও শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি নিয়োগ ও পুনঃ নিয়োগে বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন পদ্ধতি আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। পারদর্শিতার সূচকের ভিত্তিতে এমডিদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে।

আরও বলা হয়, বর্তমানে একজন গ্রাহক যে পরিমাণ ঋণ নিতে পারে, তার বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করা হবে। এতে একীভূত হওয়ার তিন বছর পর্যন্ত কোন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ শক্তিশালী হবে, মূলধন ঘাটতি দূর হবে ও খরচ কমে আসবে।

এছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে মৌলিক প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাধ্যতামূলক করা হবে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS