বরিশাল প্রতিনিধিঃ বরিশালের গণ-সমাবেশে আওয়ামী লীগ বর্গীর (লুটতরাজ প্রিয়) রূপ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। ফখরুল বলেন, আজ আওয়ামী লীগ বর্গীর রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরি ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা-এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।
শনিবার (৫ নভেম্বর) অসহনীয় দ্রব্যমূল্য, লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় মহা সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। প্রধান অতিথি হিসেবে ১০ মিনিট বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। মহাসচিব বলেন, এই সরকার দুর্নীতি করেনি এমন একটা জায়গা দেখান। একটা চাকরিও কি তারা দিয়েছে?। দিয়েছে তবে সেটি আওয়ামী লীগের ছেলেদের। ২০ লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছে। বিনা পয়সার সার দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু আমাদের সময়ের থেকে তিন গুণ দেশি দামের সার দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার হামলা আর মামলা করছে। ভোলায় লঞ্চে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই আবার মামলা দিয়েছে। এখন দেশে কেউ নিরাপদ নয়। এ সময় খালেদা জিয়া বরিশালকে বিভাগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বরিশালে বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মানুষকে খাওয়ানোর পয়সা নাই, কিন্তু ভোট চুরির মেশিন ইভিএম কেনার পয়সা আছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবারের পরীক্ষায় আওয়ামী লীগ নকল করেও পাশ করতে পারবে না।’ সমাবেশে আমীর খসরু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া চাইলে আওয়ামী লীগের মতো গুম-খুন করে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। তাই দেশের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য তিনি ক্ষমতা ধরে রাখেননি।’
আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন আর ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচনে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে।
পুলিশ-র্যাব সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে এখন টিকে রয়েছে। আগামী দিনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’ এ সময় তিনি দেশের গুম-খুন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ সবকিছুর কারণ হিসেবে ভোট চুরিকে দায়ী করেন।
সমাবেশে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বরিশালের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কাকে বলে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দূর্বিষহ করেছে আওয়ামী লীগ। এ দেশে শিক্ষা নেই, সততা নেই। সরকারের যারা আছে মিথ্যা ছাড়া কিছু বলে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যা বলে, তা করে না। আর যা করে, তা বলে না। সুস্থ্য রাজনীতি নাই, ব্যাংকে টাকা নাই। এই যে মিডিয়াগুলো আছে, আমাদের বক্তব্যগুলো এডিট করে প্রচার করবে। সংবাদপত্রে স্বাধীনতা নেই।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন পরারষ্ট্র মন্ত্রী আছেন। তিনি ভারতে গিয়ে এই সরকারকে বহল রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা এই দেশের মানুষের জন্য ভালো কোনো কাজ করছে না। দেখের মানুষের প্রতি তাদের কোনো খেয়াল নেই। মানুষ কষ্টে আছে, না খেয়ে আছে- তার কোনো খোঁজ রাখে না। অথচ ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশে গিয়ে ধন্যা দিচ্ছে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বলেন, ‘এখন আর জনগনের ভোট লাগে না। এক কোটি ৫০ লাখ টাকায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হওয়া যায়।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। শুধু নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তারেক রহমান বীরের বেশে নয়, রাজার বেশে আসবেন বাংলায়।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কী করলো? বাধা দিয়ে একদিনের সমাবেশ তিনদিনে শেষ করলো। ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে একের পর এক মামলা দিয়েও বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। এর প্রমাণ আজকের জনসমুদ্র।’
বরিশালে বিএনপির সমাবেশে প্রধান বক্তা ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা যে এত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে জনসমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিয়েছেন এটাই প্রমাণ করে বিএনপির প্রতি দেশের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা কতটা।’
এ সময় তিনি বরিশাল নগরীকে জনসভার শহর, মিছিলেন শহর বলেও মন্তব্য করেন। অসহনীয় দ্রব্যমূল্য, লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, হামলা-মামলা, ভোটাধিকারসহ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বরিশালে বিএনপির ওই বিভাগীয় গণসমাবেশে সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এখানে এসে দেখলাম ফোনে কথা বলতে পারছি না। ইন্টারনেট বন্ধ। তাই লাইভ টেলিকাস্ট নাই।
রাজপথ, রেলপথ, আকাশপথ সবকিছুই বন্ধ।

তারপরও আজ গোটা বরিশাল শহর জনসভার শহর, মিছিলের শহর। তাহলে সব বন্ধ করে কী লাভ হলো। সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে বরিশালে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। ‘এ সরকারকে বিদায় জানাতে হবে ভোটের মাধ্যমে। না হলে দেশের আর কিছু বাকি থাকবে না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, ইভিএমে নির্বাচন নয়। ১৫ বছর আগে আমার যে ভাই ভোটার হয়েছে সে বলতে পারবে না ভোট কেমন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, আজকের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আজ বেতন না বাড়লেও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। জনগণকে বাদ দিয়ে কোন উন্নয়ন হবে? স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ লড়াইয়ে বরিশালের মানুষ রক্ত দিয়েছে। তাই তাদের কখনোই দাবিয়ে রাখা যাবে না। এ সরকারে পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবো না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে প্রতিহিংসার করণে আটকে রেখেছে শেখ হাসিনা। আইনের কোনো ব্যাপার নেই।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা: বরিশাল বিএনপির গণসমাবেশে যাওয়ার পথে বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এ সময় বহরে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে গাড়িতে থাকা কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
শনিবার সকালে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির সাবেক মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে গাড়িবহর নিয়ে রওনা হন। পথে পথে ব্যাপক বাধার শিকার হন। একসময়, গাড়িবহরটি বরিশালের কাছাকাছি গৌরনদীর মহিলাড়া বাজারে পৌঁছালে সেখানে হামলা করা হয়। এতে ইশরাক হোসেন অক্ষত থাকলেও ভাঙচুর করা হয় তাঁর পেছনে থাকা তারই বহরের বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ সময় সেসব গাড়িতে থাকা কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ সরকারকে ভীত করেছে। জোয়ার আটকাতে না পেরে সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ দিয়ে বাধার সৃষ্টি করছে, কাপুরুষের মতো রাতের আধারে গাড়িবহরে চোরাগুপ্তা হামলা করে পালিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের নেতাকর্মীদের মনে ভীতি সঞ্চারের অপচেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা দমে যাবার পাত্র নই। সব বাধা মোকাবিলা করে ঠিকই সমাবেশস্থলে এগিয়ে যাচ্ছি। যত হামলাই করুক না কেন, কোনো বাধাই এবার বিএনপি নেতাকর্মীদের দমাতে পারবে না।’
হামলায় আহতেরা হলেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল হক সহিদ, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা মামুন ভূঁইয়া, রকি, মো. রাসেল, মো. বাবুল ও খোকন এবং ৪০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ইমরান, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সদস্য সচিব মাসুদ রানা, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদল নেতা রকি ও আল আমিন । গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’
বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ৫০ ফুটের মঞ্চ, ১২০ মাইক: বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে মঞ্চ তৈরি সম্পন্ন হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া মঞ্চের চারদিকে ও রাস্তায় মোট ১২০টি মাইক লাগানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার আবুল হোসেন লিমন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে। ব্যানারও লাগানো হয়ে গেছে। এছাড়া সমাবেশস্থলসহ আশে পাশে ১২০টি মাইক লাগানো হয়েছে। এই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সমাবেশ।
সমাবেশস্থলে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের জন্য করা মঞ্চ বিএনপি কর্মীদের হুলস্থূলের কারণে ভেঙে পরেছে। এতে ২ জন সংবাদকর্মী আহত হয়েছে। পাশাপাশি তাদের একটি টিভি ক্যামেরাও ভেঙে গেছে। সময় টিভির বরিশালের ক্যামেরাপার্সন সুজয় দাস বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের জন্য করা মঞ্চে উঠে লাফালাফি করছিল। আমরা সে সময় অনেক সংবাদকর্মী সেখানে কাজ করছিলাম। বিএনপি কর্মীদের প্রথমবার নামিয়ে দেওয়ার তারা পুনরায় মঞ্চে উঠে লাফালাফি শুরু করলে সেটি ভেঙে পরে। এতে আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি। এছাড়া আরও একজন আহত হয়েছে ও একটি টিভি ক্যামেরা ভেঙে গেছে।
যান চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে সাধারন মানুষ : বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত তবে এদিকে বরিশাল বিভাগ জুড়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকলেও দলে দলে বিভিন্ন উপায়ে বরিশালে এসেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বরিশাল নগরীর সঙ্গে বিভাগের সকল জেলার যোগাযোগ বন্ধ থাকে। এমন ঘটনায় শুক্রবার সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়ে বরিশাল নগরীর নাগরিকরা। অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত গাড়ি, সিএনজি মাহিন্দ্রা বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে তাদের রিকশায় চলাচল করতে দেখা যায়। নগরী ছাড়াও মহাসড়কে একমাত্র ভ্যানেই মানুষকে চলাচল করতে দেখা গেছে।
নলছিটি থেকে আসা পরীক্ষার্থী সায়েম জানায়, বাস চলাচল বন্ধ হবার কারণে নলছিটি থেকে ভ্যানে বরিশাল আসতে হয়েছে। ভাড়াও নিচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে রূপাতলি থেকে চৌমাথা এসেছেন তিনি।
নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ভ্যানে থেকে নেমে সাইদ আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা থেকে বরিশাল আসতে বিশাল এক যুদ্ধ শেষ করলাম। ভাঙা থেকে গৌরনদী পর্যন্ত ভ্যানে। এরপর জয়শ্রী-ইছলাদি হয়ে রহমতপুর পর্যন্ত আসতে তিনবার অটো বদল করতে হয়েছে। এভাবে ভেঙে ভেঙে কোনো রকমে এসেছি নথুল্লাবাদ পর্যন্ত। সেখান থেকে আবার ভ্যানে করে বরিশাল পৌঁছালাম। রাজনীতি করেন নেতারা আর দুর্ভোগে পড়ে আমাদের মতো সাধারণ পাবলিক।’
শুক্রবার সকালে নানান কাজে বাসা থেকে বের হয়ে দুর্ভোগে পড়েন বরিশাল নগরীর নাগরিকরা। বিএম কলেজ এলাকার চাকরিজীবি সোলায়মান মৃধা জানান, সব রকমের থ্রি হুইলার বন্ধ, রিকশা তো পাওয়াই যায় না। এমন বুঝলে বাসা থেকে বের হতাম না। নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় পুলিশের বাধা দেওয়ার চিত্র ও তল্লাশি। অন্যদিকে পথের মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোষ্টে হয়রানির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা।
নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে এসে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বিকল্প পথ খুঁজছেন। গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বরিশাল থেকে বাস ছাড়তেছে না। কালকের মধ্যে ঢাকায় না পৌঁছালে ম্যানেজমেন্ট আমার চাকরি নিয়ে নেবে।’ সড়ক পথে যান চলাচল বন্ধের পাশাপাশি শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বরিশাল থেকে সকল প্রকার লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে বরিশালের সঙ্গে মেহেন্দিগন্জ ও ভোলা জেলার যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
মেহেন্দীগন্জের জেসমিন আক্তার বলেন, ‘অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি সকালে এসে দেখি লঞ্চ চলাচল বন্ধ। সাধারণ জনগণকে ভোগান্তিতে না ফেলে রাজনৈতিক ইস্যু রাজনীতির মধ্যেই রাখা উচিত।’ এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন সড়কে স্বাভাবিকের চেয়ে যান চলাচল কম ছিল।
বিচার চাই না, রক্তের বদলে রক্ত চাই-ভোলায় নিহত রহিমের স্ত্রীঃ ভোলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেছেন, ‘আমি আমার স্বামীকে হত্যার বিচার শেখ হাসিনার সরকারের কাছে চাই না। আমি হত্যার বদলে হত্যা চাই। গুলির বদলে গুলি চাই। রক্তের বদলে রক্ত চাই।’
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে বরিশালের গণসমাবেশে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের বক্তব্যের অংশ হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
খাদিজা বলেন, ‘আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার সন্তানদের এতিম করে দেয়া হয়েছে। আমার স্বামীর কোনো অন্যায় ছিল না। আমার স্বামীর অন্যায় ছিল তিনি শেখ হাসিনার বিপরীত মতাদর্শ নীতি ভালোবাসতেন। এটা কোনো অন্যায় হতে পারে না।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন বরিশাল মহানগর ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের নিখোঁজ সাবেক সভাপতি ফিরোজ খান কালু ও তার ভাই মিরাজ খানের মা ফিরোজা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলেকে গুম করা হয়েছে। এই সরকার নিজেদের মানবতার সরকার বলে দাবি করে। আমার ছোট ছেলে মিরাজ খান মিরাজের বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। আমার দুই ছেলের কী দোষ ছিল, তাদের গুম করা হলো। আমার বুক খালি করা হলো। আমি আমার ছেলেদের ফেরত চাই।’ আরও বলেন, ‘এই মঞ্চে আমার বড় ছেলে কালুর স্ত্রী এবং ছেলের আসার কথা ছিল। কিন্তু খুনি সরকার সকল যানবাহন বন্ধ করে দেয়ায় তারা আসতে পারেনি। আমি আমার ছেলেদের ফেরত চাই। আমার ছোট নাতি তার বাবাকে ফেরত চায়।
‘নানুকে শেষবারের মতো দেখতে যাব, ঘাটে এসে দেখি লঞ্চ-স্পিডবোট বন্ধ’: ভোলায় তৃতীয় দিনের মতো লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। টানা তিন দিন বরিশালের সঙ্গে লঞ্চ, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় ভোলা ও বরিশালের বহু মানুষ আটকা পড়েছে। এ রুটে নৌযান ছাড়া বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনসহ জরুরী প্রয়োজনে অনেক মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অবস্থান করছেন। বিকল্প উপায়ে যাতায়াতের ব্যবস্থার জন্য তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এছাড়া ভোলার অন্য উপজেলার সঙ্গে চলাচলকারী বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
ভেদুরিয়া ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার নানু মারা গেছেন। নানুকে শেষবারের মতো দেখতে যাব। নানা বাড়ি সাহেবেরহাট পর্যন্ত যেতে হবে। ঘাটে এসে দেখি লঞ্চ, স্পিডবোট বন্ধ। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’
অপেক্ষায় থাকা আরেক যাত্রী বলেন, আমি বরিশাল যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। এখানে ঘাটে এসে লঞ্চ, স্পিডবোট কিছুই পাচ্ছি না। বরিশালে হাসপাতালে আমার আত্মীয় অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি আছে। আমার যাওয়াটা খুব জরুরি। তাই গতকালকেও এসেছিলাম যেতে পারিনি। আজকেও এখন পর্যন্ত যেতে পারছি না, ঘাটে অপেক্ষা করছি।
এদিকে এই ধর্মঘটের বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতি কিংবা বাস মালিক সমিতি কেউ স্পষ্টভাবে কিছুই বলতে পারেনি। প্রশাসনও কোনো বক্তব্য দিতে নারাজ।
ভোলা-বরিশাল রুটে স্পিডবোট-বাস চলাচল শুরুঃ তিনদিন বন্ধ থাকার পর ভোলা-বরিশাল রুটে স্পিডবোট এবং দুইদিন পর বাস চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুর থেকে বাস এবং বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়। এতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাঝে ফিরে স্বস্তি এসেছে। ভেদুরিয়া ঘাটে দেখা গেছে, গন্তব্যমুখী যাত্রীদের ভিড়। ঘাট থেকে স্পিডবোট ছেড়ে যাচ্ছে বরিশালের উদ্দেশে। অন্যদিকে ভোলা-চরফ্যাশনসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে ভোলার সঙ্গে বাইরের জেলাগুলোর যোগাযোগ চালু হয়েছে। স্পিডবোট মালিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে স্পিডবোট চলাচল শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে বাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু কামাল আজাদ বলেন, ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিকেল ৩টার কিছুক্ষণ পর থেকে বাস চলছে। তবে লঞ্চ চলাচল এখনও শুরু হয়নি। বিকেল ৫টার পর থেকে লঞ্চ চলাচলও শুরু হব বলে জানা গেছে।
লোকে লোকারণ্য বরিশাল নগরী: বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বেলা ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত বিপুল সংখ্যক জনতার চাপে ১১টায় এর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
গণসমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যান সকাল ৮টার মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সকাল ১০টার মধ্যে উদ্যান উপচে চারদিকে এক কিলোমিটার সড়কের সব লোকারণ্য হয়ে পড়েছে। বরিশাল এখন মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক অলিগলি থেকে একের পর এক মিছিল যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দিকে।
বরিশালে সব ধরনের যানবহন চলাচল বন্ধ রযেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পশ্চিমে ভিআইপি কলোনী গেট, পূর্বে কর অফিস, উত্তরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত লোকারণ্য হয়ে পড়েছে।শুক্রবার রাতেই বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকাল ৭টা থেকে একের পর এক মিছিল বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দিকে আসতে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলারে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা উদ্যানের দক্ষিণ পাশে কীর্তনখোলার ত্রিশ গোডাউন, কেডিসি ও মুক্তিযোদ্ধা পার্ক এলাকায় ট্রলার ভেড়ান।গভীর রাতে তারা নিজ নিজ এলাকা থেকে রওনা হন। তারা ট্রলার থেকে নেমে মিছিল করে গণসমাবেশের মাঠে দিকে যেতে থাকেন। বিএনপি নেতাকর্মীবাহী শত শত ট্রলার এসে ভিড়েছে কীর্তনখোলা তীরের বিভিন্ন পয়েন্টে।
খালেদা-তারেকের জন্য চেয়ার খালি রেখে বিএনপির সমাবেশ শুরু: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য মঞ্চের মাঝখানে চেয়ার খালি রেখে বরিশালে বিএনপির মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। সেইসঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ প্রয়াত এবং বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত নেতাকর্মীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাত করা হয়। এর পর পরই স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো। আমাদের এ আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। অসহনীয় দ্রব্যমূল্য, লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় মহাসমাবেশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন
নদী সাঁতরে পাড় হলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা: বরিশাল নগরী আর উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করেছে কীর্তনখোলা নদী। বরিশালের নৌবন্দরের পাশে চরকাউয়া পয়েন্টে খেয়াই যাতায়াতের সহজ মাধ্যম।
সেই খেয়া পারাপার শুক্রবার থেকে বন্ধ রয়েছে।
তাই কীর্তনখোলার ওপারের ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিএনপির নেতকর্মীরা আজ শনিবার সকালে সেই নদী সাঁতরে সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন, এমনটাই দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অন্তত ২০ জন কর্মী সকাল পৌনে ১০টার দিকে চরকাউয়া খেয়াখাটে আসেন। তারা শুধু শর্টপ্যান্ট পরে খালিগায়ে কীর্তনখোলায় ঝাঁপ দেন। তখন নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। প্রায় ৩০ মিনিট সাঁতরে তারা কীর্তনখোলা নদী পাড়ি দেন। বরিশাল শহরের এই প্রান্তে তাদেও জন্য পোশাক নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন দলের নেতারা। তীরে সাঁতরে ওঠার পর তাদেরকে নতুন পোশাক দেওয়া হয়। পোশাক পরে তারা পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে যোগ দিয়েছেন।
তাদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রদলের কর্মী সবুজ তালুকদার। তিনি বলেন, বাকেরগঞ্জের গোমা থেকে তিনি ভোররাতে রওনা দিয়ে এসেছেন। পায়ে হেঁটে সকাল ৮টার দিকে চরকাউয়া খেয়াঘাটে পৌঁছান। কিন্তু খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে পারাপারের জন্য প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘাটে বসেছিলেন। তার মতো আরো কয়েক যুবক সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। শেষমেশ তারা নদী সাঁতরে সমাবেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
হাতে বাঁশ-লাঠি নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজারোও নেতাকর্মীরা: বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে শুরু হয়েছে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ। সকাল ৭টা থেকে বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক হয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন প্রায় ৩ লক্ষাধিক নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থলে যাওয়া মিছিল, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস বহরে নেতাকর্মীদের হাতে কাঠ ও বাঁশের লাঠির উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ হেঁটে, কেউ ভ্যানে চড়ে, কেউ রিকশায় চড়ে আবার কেউ মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন। তবে এছাড়া বিভিন্ন মিছিলে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকায় ব্যবহার করা হয়েছে লম্বা লাঠি ও বাঁশের কঞ্চি।
প্রত্যক্ষদর্শী ঝালমুড়ি বিক্রেতা সেলিম বলেন, গত দুদিন থেকে আজ শনিবার সকালে অনেক বেশি লোক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে রয়েছে। বাড়ছে বিএনপির সমাবেশস্থলে লোকজন ততই বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের আশপাশের সড়কগুলো হয়ে বিভিন্ন শ্লোগানে দিয়ে মিছিল নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে প্রবেশ করছেন। মিছিলে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও পতাকার সঙ্গে হাতে বেশ লম্বা লাঠি, কচা রয়েছে। এছাড়া অনেক নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশ ও লাঠি রয়েছে হাজার হাজার।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, এরইমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছে। সরকারের কোনো বাধাই কাজে আসেনি। সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা কেউ নৌপথে, কেউ ট্রলারে, কেউ মাছ ধরা নৌকায় আর সড়ক পথে, কেউ হেঁটে, আবার কেউ ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে করে সমাবেশস্থলে আসছে।
বরিশালে মুঠোফোন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ: বরিশালে অনিবার্য কারণে মুঠোফোন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মুঠোফোনে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা না পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিম হোসেন সুহাদ জানান, তিনি সকাল থেকেই মুঠোফোনে ডাটার মাধ্যমে ইন্টারনেট পাচ্ছেন না। তবে বাসায় ওয়াইফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেট পাচ্ছেন।
সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ এলাকার বাসিন্দা হনুফা আক্তার বলেন, সকালে বাসায় তিনি ওয়াইফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেট পেয়েছেন। বাসা থেকে বের হওয়ার পরে মুঠোফোনে ডাটায় আর ইন্টারনেট পাননি। মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী একটি কম্পানির বরিশাল বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনিবার্য কারণবশত আমাদের সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। সেবা ফিরিয়ে আনতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছি। ’ সাময়িক এই অসুবিধার কারণে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করেন।
চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে ড্যাবঃ বেলস পার্কের গণসমাবেশস্থলের এক পাশে বিএনপির ডাক্তারদের সংগঠন ড্যাবের একটি ক্যাম্প থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে মানুষদেরকে। এছাড়া প্রাথমিক সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ড্যাব নেতারা।
ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড্যাবের কেন্দ্রিয় কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক ডা. মো. রাকিবুজ্জামান জানান, গত কয়েকদিন ধরে সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছে অনেক মানুষ। তাদের অনেকেই পানি শূন্যতায় ভূগছে। তাদের অনেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভূগছে। শ্লোগান দিতে দিতে অনেকের গলাব্যাথা হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে পায়ে হেটেও সমাবেশস্থলে আসায় অনেকের পা ব্যাথা হয়েছে।
এছাড়া তীব্র গরমেও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। তাদের সব ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া হামলা কিংবা যে কোন ধরনের আহতের সহ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ইশরাকের গাড়িবহরে হামলার জবাবে যুবলীগের ওপর বিএনপির পাল্টা হামলা: বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পড়ে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুর করেছেন স্থানীয় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
এর জবাবে বহরে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে স্থানীয় মাহিলাড়া মডার্ন ক্লাবে ভাঙচুর করে ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের ১৫ নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৫ জনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
কাফনের কাপড় পরে, হুইল চেয়ারে সমাবেশস্থলে নেতা-কর্মীরাঃ বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে যোগদান করেছেন। ইতোমধ্যে গণসমাবেশে শুরু হয়ে গেছে।
বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ও চরমোনাই ইউনিয়ন ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের নেতৃত্বে দাফনের কাপড় পরে মিছিলে যোগদান করেছেন নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও হুইল চেয়ারে সমাবেশস্থলে যান সদর উপজেলার কয়েকজন প্রতিবন্ধীরা।
কাফনের কাপড় পরে আসা একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে এসেছে। সরকারের কোনো বাধাই কাজে আসেনি।
নেতা-কর্মীরা গুম-খুনের প্রতিবাদে দাফনের কাপড় পরে এ সমাবেশে যুক্ত হয়েছেন। বেলা যতই বাড়ছে সমাবেশস্থলে নেতা-কর্মীদের ভিড় ততই বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে স্থান না হওয়ায় মিছিল সহকারে নেতা-কর্মীদের পার্শবর্তী সড়কগুলোতে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসব নেতা-কর্মীদের হাতে বিভিন্ন নেতাদের ছবি সংবলিত প্লাকার্ড লক্ষ্য করা গেছে।
ড্রামের ভেলায়ও নদী পারপারঃ বরিশালে সব ধরনের যাত্রীবাহি যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন পন্থায় বিএনপির সমাবেশস্থলে আসছেন নেতাকর্মীরা। কেউ নৌকায়, আবার কেউ ট্রলারে চেপে বরিশালে আসছেন। আবার কেউবা ড্রামের ভেলায়ও নদী পারপার হচ্ছেন। বিকেল পৌনে ৩টায় ড্রামের ওপর ভেসে নেতাকর্মীদের বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা পার্ক সংলগ্ন নদীতে ট্রলার থেকে তীরে, আবার তীর থেকে ট্রলারে উঠতে দেখা গেছে। আর এভাবে নদী পারাপার হয়ে সমাবেশস্থলে আসেন তারা।
ড্রামে ভেসে আসা মো. রনি বলেন, সরকার সবকিছু বন্ধ করছে যাতে সমাবেশস্থলে আসতে না পারি। তবে ট্রলারে রাতের আঁধারে এসেছি, কিন্তু এখন দিন, তাই ভিড়তে দিচ্ছে না তীরে। ফলে ড্রামের ওপর ভেসে তীরে এসেছি। সমাবেশ সফল করতেই হবে আমাদের।
ড্রামে করে তীরে আসা শাওন নামে আরেকজন বলেন, গণতন্ত্র মুক্ত করার আন্দোলনে কোনো ছাড় নয়। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন চলবে। এদিকে সমাবেশ শুরু হওয়ার পরও অনেক নেতাকর্মী নদী পথে সমাবেশস্থলে আসছেন বিভিন্ন উপায়ে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply