মারিউপলের পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর। বুধবার ফের রাশিয়া বলেছে, ওই অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনা যেন অস্ত্র সমর্পন করে। সেক্ষেত্রে রাশিয়া মারিউপলে লড়াই বন্ধ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
কিন্তু ইউক্রেনের বক্তব্য, অস্ত্র সমর্পন নয়, মারিউপলে রাশিয়ার সঙ্গে নিঃশর্ত আলোচনায় বসতে রাজি আছে ইউক্রেন। কিন্তু রাশিয়া আলোচনার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো উৎসাহ দেখায়নি।
মারিউপলের অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানা ইউক্রেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টিল কারখানা। গত প্রায় দুই মাস ধরে ইউক্রেনের মেরিন বাহিনী এই কারখানাটি রাশিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এসেছে।
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সেখানে অবস্থানরত মেরিন বাহিনী জানাচ্ছিল, তাদের গোলাবারুদ ক্রমশ কমে আসছে। দ্রুত তা পূরণ না করলে বাহিনীর পক্ষে আর কারখানাটি রক্ষা করা সম্ভব নয়।
এরইমধ্যে বুধবার দুপুরে চেচেন নেতা রামজন কাদিরভ দাবি করেন, কারখানাটি রাশিয়ার দখলে চলে এসেছে। ইউক্রেন অবশ্য এর সমর্থনে এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি জারি করেনি।
চেচেন গোষ্ঠী রাশিয়া সমর্থিত একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। এবারের লড়াইয়ে রাশিয়ার সেনার সঙ্গে চেচেন যোদ্ধারাও ইউক্রেনে ঢুকেছিল বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। বস্তুত, তারা কিয়েভ পর্যন্ত গিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের বক্তব্য। চেচেন নেতাও সে কথা স্বীকার করেছেন।
রেডক্রসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। অভিযোগ, রেডক্রস রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। দত্রিণ রাশিয়ার রসতভ অঞ্চলে রেডক্রস একটি শিবির তৈরির কথা জানিয়েছিল। রেডক্রসের বক্তব্য ছিল, প্রচুর ইউক্রেনীয় ওই শিবিরে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
কিন্তু ইউক্রেনের দাবি, ওটা কোনো শিবির নয়, রাশিয়া জোর করে ইউক্রেনীয়দের সেখানে ধরে নিয়ে গেছে। ইউক্রেন একাধিকবার বললেও রাশিয়া ওই শিবির থেকে কাউকে ছাড়তে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ। রেডক্রসের বক্তব্য, আসলে রাশিয়ার দাবিকেই স্বীকৃতি দেয় বলে ইউক্রেনের অভিযোগ।
দনবাস অঞ্চলের লুহানস্ক এবং দনেৎস্ক দুইটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া যুদ্ধের পর এই অঞ্চলটি আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায়। লুহানস্কের একটি বড় অংশ কার্যত রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে চলে যায়। তবে ইউক্রেন সেখানে নিজের প্রশাসন বসিয়ে রাখে। ২০২২ এ ইউক্রেন যুদ্ধের একেবারে গোড়ায় দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল দুইটিকে স্বাধীন ঘোষণা করে বিচ্ছিন্নতাদীরা।
রাশিয়া তা সমর্থন করে। সেই অঞ্চলে এখন সবচেয়ে বেশি লড়াই চলছে। লুহানস্কের প্রশাসক জানিয়েছেন, প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রাশিয়ার সেনা। স্থানীয় ইউক্রেনীয়দের বাড়ি ছেড়ে পালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাশিয়ার মুখপাত্র দাবি করেছিলেন, কিয়েভকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার একাধিক বিষয় প্রস্তাব করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্রে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে সেখানে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবি অস্বীকার করেছেন।
সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে এমন কোনো প্রস্তাবের কথা তিনি শোনেননি, দেখেননি। ফলে ধরে নিতে হবে, রাশিয়া এমন কিছু ইউক্রেনকে অন্তত পাঠায়নি। এ ধরনের কথা বলে রাশিয়া ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন জেলেনস্কি।
সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি, এএফপি
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply