শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ অপরাহ্ন

ই-কমার্সের দখলে জামদানির বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৫৬ Time View

রূপগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি: জামদানির আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া বিসিক শিল্প নগরীর জামদানি পল্লী। এখানে এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার তাঁতি। গত দুই বছর করোনার কারণে জামদানি শিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এখানকার জামদানি শিল্প। ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। তবে এবার জামদানি পল্লীতে সরাসরি ক্রেতা থেকে অনলাইনে শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে জানান তাঁতিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জামদানি পল্লীর প্রত্যেকটি ঘরেই চলছে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ। তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। নানা রকম ডিজাইনের মাধ্যমে মনের মাধুরী মিশিয়ে তাঁতিরা তৈরি করছেন জামদানি শাড়ি। পল্লীর প্রত্যেকটি ঘর থেকে ভেসে আসছে জামদানি তৈরির খটখট শব্দ।

এদিকে সুনশান চিত্র দেখা গিয়েছে জামদানি পল্লীর ভেতরের দোকানগুলোতে। জামদানির পল্লীর ভেতরে প্রায় ১২টি জামদানি বিক্রির শোরুম রয়েছে। প্রতি বছর শোরুমগুলোতে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও এ বছর খুব বেশি ক্রেতা দেখা যায়নি। তবে পল্লীতে ক্রেতারা না আসলেও অনলাইনে জামদানি খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। করোনার পরিস্থিতি জামদানির বাজার দখল করে নিয়েছে ই-কমার্স।

তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ও লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পাঁচ হাজার তাঁতি। লকডাউন ও করোনা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে তাঁতিরা ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জামদানি শাড়ি বিক্রির নতুন বাজার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।

বর্তমানে পল্লীর তাঁতি ও দোকান মালিকদের সবারই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই পেইজ রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে সেই পেইজের মাধ্যমেই তারা শাড়ি বিক্রি করছেন।

তাঁতিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাড়ির অর্ডার পান। শাড়িগুলো বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। একেকটি শাড়ি ২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।

সোহাগ জামদানির মালিক নজরুল মিয়া জানান, গত ২০ বছর ধরে জামদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। জামদানি পল্লীতে তার দোকানও আছে। করোনার কারণে প্রথম বছরে ব্যবসা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। তখন থেকে তার ছেলে সোহাগ চিন্তা করেন পাইকারদের পাশাপাশি অনলাইনে জামদানি শাড়ি বিক্রি করার। যেই ভাবনা সেই কাজ তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে গত বছর সোহাগ জামদানি নামে এক পেইজ খুলেন।

তিনি আরো জানান, পেইজটিতে নিয়মিত জামদানির শাড়ির ছবি তুলে আপলোড করতে থাকেন তিনি। কয়েক মাস যেতে না যেতেই দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও জামদানি শাড়ি বিক্রি হতে থাকে। ঈদকে সামনে রেখেও পেইজে শাড়ি বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। তার মতো বেশিরভাগই তাঁতিই এখন অনলাইনে জামদানি শাড়ি বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।

কথা হয় মমো জামদানির মালিক আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি জানান, দোকানের পাশাপাশি মমো জামদানি নামে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পেইজ রয়েছে। বর্তমানে দোকানে বিক্রি অনেক কমে গেলেও ঈদকে সামনে রেখে অনলাইনে শাড়ি খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। এখন জামদানি পল্লীতে ক্রেতারা সরাসরি তেমন আসে না। অনলাইনে শাড়ির ডিজাইন পছন্দ করলে তারা কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন।

তবে তাঁত কারিগরদের অভিযোগ, জামদানি শাড়ির বিক্রি বাড়লেও বাড়েনি তাদের মজুরি। তারা আগে যে পরিমাণ মজুরি পেতেন বিক্রি ও শাড়ি দাম বাড়লেও তাদের তাঁতকল মালিকরা তাদের মজুরি বাড়াননি। মজুরি না বাড়ায় অনেক কারিগর পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে তাঁতকল মালিকদের দাবি, সুতার দাম বাড়ায় শাড়ি বিক্রি বেশি হলেও তেমন একটা লাভ হচ্ছে না। তাই কারিগরদের মজুরিও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS