রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন

আশুরার দিন তওবা ও ইস্তিগফারের দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪
  • ৭৮ Time View

১০ মহররম আশুরার দিন। এ দিন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করে অনেকেই রোজা রাখেন। এর আগে বা পরের একদিন আরও একটি রোজা রাখেন। মোট দুটি রাখেন।

রোজা রাখার মতো এ দিনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা ও তওবা করা। কেননা এ দিন আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী উম্মতের তওবা কবুল করেছেন।

মুসনাদে আহমাদ ও জামে তিরমিজিতে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, এক ব্যক্তি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসুল, রমজানের পর আপনি আমাকে কোন মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দিবেন? উত্তরে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

إِنْ كُنْتَ صَائِمًا بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصُم المُحَرّمَ، فَإِنّهُ شَهْرُ اللهِ فِيهِ يَوْمٌ تَابَ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ، وَيَتُوبُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ آخَرِينَ

তুমি যদি রমজানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তাহলে মহররমের রোজা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। সেই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরও মানুষের তওবা কবুল করবেন। (তিরমিজি ৭৫১)

এই হাদিসে যেই দিনের দিকে ইশারা করা হয়েছে আলেমদের মতে সেটি আশুরার দিন। তবে বান্দার উচিত বছরের সব দিনেই তওবা ও ইস্তিগফারের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। বিশেষ করে এই মাসের প্রতিটি দিনেই তওবা ও ইস্তিগফারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া। আর আশুরার দিন অনেক বেশি বেশি ইস্তিগফার করা।

আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কী? যা পড়ে ইস্তিগফার করা যায়-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বিবরণে আছে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তিগফার করবে, মহান আল্লাহ সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ ১৫১৮)

أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ। অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি। অর্থ: আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তার কাছেই (তওবা করে) ফিরে আসি।

সাইয়েদুল ইস্তিগফার-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানাআ’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলি। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই; আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই গোলাম, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো; আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ এবং অপকার ও ক্ষতি হতে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সব নিয়ামত, আরও স্বীকার করছি আপনার সমীপে আমার সকল অপরাধ; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, আর অবশ্যই আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই (নাসায়ি ৫৫২১, বুখারি ও মুসলিম)

তওবা করার জন্য তিনটি ধাপ রয়েছে।

এক. কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। নিজের মধ্যে যদি এমন অনুভব হয় যে এ কাজ করে তো আমি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে তো আমি হিসাব দিতে পারব না। এরকম অনুশোচনা আসলে তওবার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

দুই. তওবার নিয়ত করার সাথে সাথে গুনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে। সুদে টাকা বিনিয়োগ করা থাকলে সুদ নিবেন না বলে জানিয়ে দিতে হবে। অবৈধ উপায়ে নেয়া কারও সম্পদ নিজের কাছে থাকলে তা ফেরত দিতে হবে।

তিন. ভবিষ্যতে আর গুনাহের কাজ করবেন না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। কোনোভাবেই এ কাজ করা যাবে না সিদ্ধান্ত নিয়ে তা থেকে বেঁচে থাকার পরিকল্পনা করতে হবে।

এই তিনটা ধাপ পরিপূর্ণ হলে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলার কাছে রোনাজারি করে তার কাছে ফিরে আসার কথা জানাতে হবে। মনের কথা দৃঢ়ভাবে জানাতে হবে। এমন বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ তাআলা সব শুনছেন।

তওবা ও দোয়া করার পর যদি মনে হয় আল্লাহ তাআলা আপনার কথা শুনেছেন; তাহলে এই বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমাও করেছেন। তিনি ক্ষমা করেননি ভেবে হতাশ হওয়া যাবে না।

কেননা যে যত বড় গুনাহ করুক না কেন আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করবেন। তবে এ জন্য তওবার ওই তিন ধাপ পূরণ করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS