মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

বিদেশে রফতানি বন্ধ, তবুও কমছে না ইলিশের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৮৯৩ Time View

ভরা মৌসুম। তাই রাজধানী ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ইলিশ কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে আকারভেদে দরদাম চড়া। তাই কেউ কেউ ইলিশের দরদাম করে না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। ভোজন প্রিয় মানুষের প্রথম পছন্দ সুস্বাদু রূপালি ইলিশ।

আর তা যদি নয়, চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার তবে তো কথা-ই নেই। এখন একেবারেই ভরা বর্ষা। চারদিকে অথৈই পানি। কিন্তু চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার চিরচেনা সেই রূপ নেই। অর্থাৎ রূপালি ইলিশের বিচরণ। জেলেদের জালে কিছু ধরা পড়লেও তা কাঙ্খিত নয়। এতে হতাশায় মলিন মুখের ভাঁজ দীর্ঘ হচ্ছে এই জনপদের জেলেদের। আর তার প্রভাব পড়ছে চাঁদপুর শহরের পাইকারি মাছ বাজার বড়স্টেশনেও।

অতীতে মৌসুমের এই সময় ব্যস্ত বড়স্টেশনের বাজারে প্রতিদিন গড়ে আড়াই শ থেকে ৩০০০ মণ ইলিশ বিপণন হতো। এখন তা নেমে এসেছে ৪০০-৫০০ মণে। এতে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম হওয়ায় আকারভেদে দরদামও বেশ চড়া। যে কারণে দেশের বাইরে রফতানি বন্ধ থাকার পরও স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যত্র চাহিদামতো চালান দেওয়া যাচ্ছে না। জানালেন, মাছ ব্যবসায়ীরা। শনিবার চাঁদপুর বড়স্টেশন পাইকারি মাছ বাজারে সব মিলিয়ে ইলিশের সরবরাহ ছিল ১ হাজার মণ।

ইলিশ মূলত সাগরের নোনা জলের মাছ। তবে ঝাঁক বেঁধে চলা, বিচিত্র স্বভাবের এই মাছ- গভীর সাগর, উপকূল ছেড়ে ঝাঁক বেধে ছুটে আসে নদীর মিঠা পানিতে। তাই নদীর তলদেশে থাকা ফ্লাংটন জাতীয় খাবার খেতে আর ডিম ছাড়ার জন্য উপকূলের নদীগুলো পেরিয়ে মেঘনা থেকে পদ্মা পর্যন্ত ইলিশ ছুটে আসে। আবার ডিম ছাড়ার পর কোনো বাধা না পেলে, ফের ছুটে যায় আপন ঠিকানা সাগরের দিকে। তবে বিশেষ সময় নদীর মিঠা পানিতে রেখে যায় ইলিশের পোনা জাটকাগুলো। 

ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমানের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি মা ইলিশ গড় ১৮-২২ লাখ ডিম ছেড়ে থাকে। এতে ইলিশের প্রাচুর্যতা বাড়ছে। গবেষণার ফলাফলে এমনটা চিত্র হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পদ্মা ও মেঘনায় চর ডুরোচর, দূষণ, পানির স্রোত কমে যাওয়া তার সঙ্গে জলবায়ূও পরিবর্তন তো রয়েছেই। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে একশ্রেণির জেলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহার। সঙ্গত: কারণে স্বাভাবিক উৎপাদনের গতি হারাচ্ছে ইলিশ।

চাঁদপুরে হাইমচরের চরভৈরবী এলাকার জেলে মানিক দেওয়ান (৫৫)। জানালেন, গত ৩-৪ বছর ধরে-ই মেঘনায় ইলিশের আকাল চলছে। দিনভর ২ দফায় জাল ফেলে ছোটবড় ৪-৫ হালির বেশি ইলিশ মিলছে না। এতে ইঞ্জিনচালিত নৌকার জ্বালানি, ভাগিদারের মজুরি আর সঙ্গে তো মহাজনের ধারদেনা। তাই অভাব তো লেগেই থাকে। এই যদি হয়, চাঁদপুরের প্রবেশপথ মেঘনার দক্ষিণের চিত্র। তাহলে উত্তরের ষাটনল কিংবা পশ্চিমে পদ্মা নদীর চিত্র কি হবে। তা জানতে পদ্মা ও মেঘনা বেষ্টিত রাজরাজেশ্বরের জেলে আল আমিন বেপারীর (৪০) সঙ্গে কথা হয়। তার সাফ জবাব, দক্ষিণের মাছ উত্তরে না পৌঁছালে আমরা ইলিশ পাবো কোথায়। দিনদিন ইলিশ কমে যাওয়ার জন্য নির্বিচারে কারেন্ট জাল ব্যবহারকেও দূষছেন তারা। এ ২ জেলের কথার সত্যতার সূত্র খুঁজতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয় জেলা শহরের বড়স্টেশন পাইকারি মাছ বাজারে। মৌসুমের এই সময় যা ইলিশ মাছ পাইকারি দরে বিক্রির মোকাম।

সুমন খান পাইকারি দামে ইলিশ বিক্রেতা। স্থানীয় পদ্মা ও মেঘনা ছাড়াও লক্ষ্মীপুরের রামগতি এবং নোয়াখালীর চেয়ারম্যানঘাট থেকে বেপারীরা তার কাছে ইলিশ বিক্রি করেন। মাছ ব্যবসায়ী সুমন খানের ভাষ্য, তার আড়তে ১০০ মণ ইলিশের মধ্যে ৪৮ মণ ইলিশ উপকূলের। আর বাকি ২ মণ পদ্মা ও মেঘনার। তবে বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা তার সিকিভাগও যোগান দিতে পারছেন না তিনি। তার মতো মাছ ব্যবসায়ী সম্রাট বেপারীও ঠিক একই কথা বলেন। তারমধ্যে বাজারে যে পরিমাণ যোগান দেওয়া হচ্ছে। তার বিপরিতে চাহিদা বেশি। তাই বেপারীরা দামও ছাড়ছেন না।

চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবেবরাত জানান, আকারে ১ কেজির উপরে প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০.০০০ থেকে ৭২.০০০ টাকা। সাড়ে ৯ শ গ্রাম থেকে ১ কেজির মধ্যে প্রতি মণ ৬০০০০ থেকে ৬২০০০ টাকা এবং ৭শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ গ্রামের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকায়। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি সরকারি আদেশে বিদেশে রফতানি বন্ধ ঘোষণা করা হলেও পাইকারি বাজারে এখন যে পরিমাণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে। তা স্থানীয় বাজার এবং রাজধানী ঢাকা ও আরো কিছু জেলায় চালান দেওয়া যায়। এটি পাইকারি চিত্র হলেও আবার ভোক্তা পর্যায়ের অনেকেই সরাসরি ইলিশ ক্রয় করতে বড়স্টেশনে আসেন। বিশেষ করে বন্ধের দিন শুক্র ও শনিবাওে দেখা যায় এমন চিত্র। 

ইলিশ গবেষক ও দেশের বিশিষ্ট মৎস্যবিজ্ঞানি ড. আনিছুর রহমান বলেন, বিচিত্র স্বভাব ও পরিভ্রমনশীল মাছ হচ্ছে ইলিশ। তার চলার পথে বাধা, পানিতে দূষণের কারণে খাবারের সঙ্কট দেখা না দিলে গভীর সমুদ্র ছেড়ে উপকূল এবং নদনদীতে ছুটে আসে না। তার ওপর ভারি বৃষ্টিপাত, পানির স্রোত এবং জলবায়ূর প্রভাব তো রয়েছে। তাই সমুদ্রের নোনা পানির এই মাছ এখন গভীর সমুদ্রে-ই অবস্থান করছে। তার গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলে এমনটা দাবি করছেন ড. আনিছুর রহমান। তবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসজুড়ে ইলিশের প্রাচুর্য বাড়তে পারে। এরমধ্যে আবার অক্টোবরের ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সাগরের নোনা পানি ছেড়ে নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসবে। তখন অভয়াশ্রমগুলোতে সুরক্ষা দেওয়া গেলে অর্থাৎ ডিম ছাড়ার পরিবেশ পেলে পরবর্তীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে।     

চলতি বছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ মেট্রিক টন। যা বিগত বছরে ছিল ৫ লাখ ৭১০০০ মেট্রিন টন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS