বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন

ইউএনওর বোন পরিচয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সেই ‘নাসিমা’ আটক

রেজাউল ইসলাম
  • আপডেট : বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৩

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের আদিতমারীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বোন পরিচয়ে হতদরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ, চাকরিসহ নানান সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সেই প্রতারক নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে আদিতমারী থানা পুলিশ।

এর আগে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে প্রতারক স্বপ্নাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারকলিপি প্রদান করেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীরা। আটক নাসিমা আক্তার স্বপ্না আদিতমারী টিএনটি পাড়া হেলিপ্যাড এলাকার নুর ইসলামের মেয়ে।

অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ হতদরিদ্র বেকার নারীদের স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতিতে সেলাইসহ নানান প্রশিক্ষণ ও মাসিক ১০ হাজার করে সম্মানী দেওয়ার নাম করে জন প্রতি ২-৩ হাজার করে কয়েক শত নারীর কাছে টাকা নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না। একই সঙ্গে মহিলা বিষয়ক, সমাজসেবা, সমবায় ও যুব উন্নয়ন দপ্তরের বিভিন্ন সরকারি ভাতাসহ নানান সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৪-৫ হাজার করে টাকা আদায় করেন তিনি। নাসিমা আক্তার স্বপ্না নিজেকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বোন পরিচয় দিয়ে গ্রামীণ নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকার উপর হাতিয়ে নেন।

প্রথমদিকে নিজেকে ইউএনওর বোন পরিচয় দিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে ভাড়া নিয়ে আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ব্যানার ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ চালু করেন। যা দেখে গ্রামীণ নারীরা সত্য বলে মেনে নিয়ে তার প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়ায়। এভাবে পুরো উপজেলায় জাল বিস্তার করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না।

গত ৩-৪ মাস আগে স্থানীয়রা বিষয়টি ইউএনওকে মৌখিকভাবে অবগত করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে স্বপ্নার প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন। পরে স্বপ্না কৌশলে প্রশিক্ষণকেন্দ্র নিজ বাড়ি আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকায় স্থানান্তরিত করেন। এরই মাঝে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের প্রশিক্ষণের তিন মাস মেয়াদ শেষ হলেও সম্মানী পাননি। ফলে সম্মানী নিয়ে নারীদের সঙ্গে কয়েক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে স্বপ্নার।

এদিকে, প্রতিবাদকারী নারীদের শায়েস্তা করতে স্বপ্নার রয়েছে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। এতেই শেষ নয়, অনেক বেকার নারীকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ৪-৫ লাখ করে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। 

চাকরি, সরকারি অনুদান বা প্রশিক্ষণের ভাতা না পেয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে প্রথমে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে থানার গেটে মানববন্ধন করে প্রতারক স্বপ্নার গ্রেপ্তার দাবি করেন ভুক্তভোগী শত শত হতদরিদ্র নারী। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে নারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদিতমারী ইউএনওকে স্মারকলিপি প্রদান করে প্রতারক স্বপ্নাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেন।

ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীদের এমন অভিযোগে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে প্রশাসনের নজরে পড়ে এবং প্রতারক স্বপ্নাকে আটকে অভিযান চালায় আদিতমারী থানা পুলিশ। অবশেষে আজ বুধবার দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

মূলত হতদরিদ্র নারীদের টাকা হাতিয়ে নিতে ইউএনওর বোন পরিচয় দিয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক স্বপ্না পুলিশকে জানিয়েছে। স্বপ্নার প্রতিবেশীদের দাবি, স্বপ্না একজন প্রতারক। প্রতারণার আশ্রয় নিতে তিনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দেন। তার বিরুদ্ধে অনেক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণা করাই তার পেশা। তার শাস্তি দাবি করেন তারা।

আদিতমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, হতদরিদ্র নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগে নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিআর সারোয়ার বলেন, স্বপ্না প্রতারণা করতে বোন পরিচয় দিয়েছে। হতদরিদ্র নারীদের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS