বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হারল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ পাকিস্তানের। এশিয়া কাপেও নেপাল ও ভারতের বিপক্ষে হারিস রউফ-শাহীন আফ্রিদিদের গতির ঝড় দেখা গেছে। সেই ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশও। সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারিস-নাসিম শাহদের তাণ্ডবে বাংলাদেশ অল আউট হয়েছে ১৯৩ রানে। হারিস ও নাসিম দুজনে মিলেই শিকার করেছেন টাইগারদের ৭ উইকেট।

১৯৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারে দুই চার মেরে শুরু করেছিলেন ফখর জামান। তবে উইকেট থেকে সহায়তা পাওয়ায় সুইং পাচ্ছিলেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসারকে খেলতে তাই খানিকটা বেগই পেতে হচ্ছিলো ফখর ও ইমাম উল হককে। চতুর্থ ওভারে উইকেটের দেখা পেতে পারত বাংলাদেশ। শরিফুলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ফখর। তবে একটু সামনে ঝুঁকে সেটা লুফে নিতে পারেননি নাইম শেখ।

তাতে করে প্রথম ৫ ওভারে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের এক পাশের ফ্লাডলাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খেলা বন্ধ হয়েছিল। তবে আবারও শুরু হয়েছে খেলা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে বাংলাদেশকে ব্রেুক থ্রু এনে দেন শরিফুল। বাঁহাতি এই পেসারের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন ফখর। রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি ২০ রান করা এই ব্যাটারের।

মাঝে দুবার রিভিউ নিয়েও ইমাম উলকে আউট করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। অবশেষে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন তাসকিন। ডানহাতি এই পেসারের ফুলার লেংথে পড়ে নিচু হওয়া ডেলিভারি বাবরের ব্যাটারের নিচের অংশে লেগে তা স্টাম্পে আঘাত করে। তাতে বোল্ড হয়ে ফিরে যেতে হয় ১৭ রান করা পাকিস্তানের অধিনায়ককে। বাবর ফিরলেও পাকিস্তানকে এগিয়ে নিতে থাকেন ইমাম উল।

বাঁহাতি এই ওপেনার জীবন পেয়েছেন বেশ কবারই। সেটাকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন তিনি। মেহেদি হাসান মিরাজের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করে ছক্কা মেরে ৬১ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ইমাম উল। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এদিকে ২৬তম ওভারে প্রথমবারের মতো বল হাতে তুলে নেন সাকিব নিজে। যদিও প্রথম ওভারে সাফল্য পাননি তিনি।

বাংলাদেশও লম্বা সময় উইকেটের দেখা পায়নি। অবশেষে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন মিরাজ। তবে সেটা অনেকটা দেরিতে। মিরাজের উপর চড়াও হতে গিয়ে আউট হয়েছেন ইমাম। মিরাজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৮৪ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলা এই ওপেনার। শেষ দিকে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন রিজওয়ানও। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৬৩ রানে। শেষ পর্যন্ত ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাফ সেঞ্চুরিতে অনায়াসে ৭ উইকেটের জয় পেয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন শরিফুল, তাসকিন ও মিরাজ।

এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মূলত লাহোরের গরমে আগে ফিল্ডিং করে ক্লান্ত হয়ে ব্যাটিংয়ে নামার চ্যালেঞ্জ নিতে চায়নি বাংলাদেশ। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে পারেননি ব্যাটাররা। সাকিব ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কেউই দাঁড়াতে পারেননি।

এদিন বাংলাদেশকে ভালো শুরু পেতে দেননি পাকিস্তানের বোলাররা। শাহীন শাহ আফ্রিদি নিজের প্রথম ওভারটি মেইডেন নেন। এরপর অন্যপ্রান্ত দিয়ে বোলিং আক্রমণে আসেন নাসিম শাহ। এই পেসারের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই স্কয়ার লেগে ফখর জামানকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো গোল্ডেন ডাক মারলেন মিরাজ।

এরপর শুরুর বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন লিটন দাস ও নাইম শেখ। অবশ্য এই দুজনের জুটি বেশিদূর এগোতে দেননি আফ্রিদি। তার করা শর্ট লেন্থের বাড়তি বাউন্স পাওয়া বল থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ রান।

এরপর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি নাইম শেখ। ভালো শুরু পেলেও তিনি ইনিংস বড় করতে পারেননি। হারিসের ওপর চড়াও হতে গিয়ে বাংলাদেশের এই ওপেনার টপ এজ হয়েছেন ব্যক্তিগত ২০ রানে। ফলে ৪৫ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

এই ম্যাচেও ব্যর্থ হয়েছেন আগের ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়া তাওহীদ হৃদয়। এই টাইগার ব্যাটার হারিসের লেংথ বলে ফ্লিক করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ব্যক্তিগত ২ রানে। এরপর বাংলাদেশের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।

দুজনই স্ট্রাইক রোটেড করে খেলার সঙ্গে বাউন্ডারি মেরে রানের চাকা সচল রেখেছেন। দুজনের জুটি এরই মধ্যে পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। মুশফিককে নিয়ে ৫৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাকিব। হাফ সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব। ফাহিম আশরাফের বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফখরকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। আর তাতে শেষ হয়েছে মুশফিকের সঙ্গে তার ১২০ বলে ১০০ রানের জুটি।

সাকিব ফিরে গেলে শামীম পাটোয়ারিকে নিয়ে ৭১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। এদিকে দারুণ শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি শামীম। ইফতিখারের লেংথ ডেলিভারিতে মিড অনের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ইমাম উল হককে উইকেট দিয়েছেন ১৬ রান করা এই ব্যাটার।

শামীমের বিদায়ের পর আউট হয়েছেন মুশফিকও। হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া এই ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন হারিস রউফ। ডানহাতি এই পেসারের বলে জায়গা বানিয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৬৪ রানের ইনিংস খেলা মুশফিক। পরের বলে আউট হয়েছেন তাসকিন আহমেদ।

আফিফ হোসেনের সামনে সুযোগ ছিল লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দুইশোর উপরে নিয়ে যাওয়া। অথচ তিনি উইকেট ছুড়ে এসেছেন আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে। নাসিম শাহর করা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে ফাহিম আশরাফের সহজ ক্যাচ হয়েছেন তিনি। এরপর শরিফুলকে বোল্ড করে বাংলাদেশের ইনিংস ১৯৩ রানে গুটিয়ে দিয়েছেন নাসিম।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS